এমনকি বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের ভাষণে তার দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থিও-ও কথা বলেছেন অনেকটাই ভাসা ভাসা সুরে। সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের কথাও স্পষ্ট নয়।
এরই মধ্যে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাপানের সংবাদমাধ্যম নিক্কি এশিয়ান রিভিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সু চি কথা বলেছেন, প্রাণহানির শঙ্কায় পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে। তিনি জানান, যেকোনো সময় ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হতে পারে। যা নির্ভর করবে বাংলাদেশের ওপর। তবে দীর্ঘ আলাপে তিনি এবারও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহারই করেননি।
মূলত প্রশ্ন করা হয় শরণার্থী যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে তাদের ফেরত নিতে কতদিন লাগতে পারে, জবাবে সু চি বলেন, আমরা এটা দ্রুতই শুরু করতে পারি; যেকোনো সময়। তার মানে এই নয় যে এটি দ্রুত সম্পন্ন হয়ে যাবে। আর এটি কোনো নতুন সমস্যা নয়। ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সরকার এ ব্যাপারে একমত।
রাখাইনে সহিংসতা এবং অন্তত ৫০ শতাংশ গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ৭২ বছর বয়সী এ প্রবীণ রাজনীতিবিদ সরাসরি বিষয়টি এড়িয়ে যান। বলেন, আমি বলতে পারি রাজ্যের ৩০ শতাংশ মুসলিম গ্রাম এখনও অক্ষত, সেখানে মানুষ বাস করছেন। তাদের কোনো সমস্যা নেই, তারা পালিয়েও যাননি।
কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বিষয়ে নোবেলজয়ী এই নেত্রী বলেন, এটি দারুণ এবং প্রশংসনীয় একটি প্রতিবেদন। তিনি (কফি আনান) বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য কাজ করেছেন। সবই ঠিক আছে কিন্তু কিছু জায়গায় খানিক সংশোধন প্রয়োজন।
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা তার সরকারের পররাষ্ট্র নীতি। তিনি দাবি করেন সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি এবং তার সরকারের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
রাখাইনে সহিংসতায় সেখানে বিনিয়োগে কোনো ক্ষতি করবে কিনা জানতে চাইলে সু চি বলেন, কিছুটা তো ঝামেলা পাকাবেই, তবুও অযথা চিন্তিত হওয়ার কিছু দেখি না। আর এখনও ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আমরা শিল্পোদ্যোগ বাড়াতে চাই এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তি মজবুত করা এবং এসএমই সুবিধা বৃদ্ধি করছি। ১৮ মাসের একটি গণতান্ত্রিক সরকার, কেউ কেউ বলেন আমরা খুব দ্রুত কাজ করছি আবার কারো কারো ভাষায় ধীর কাজ। তবে আমরা থেমে নেই।
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) বলছে, সহিংসতার শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা দশ হাজার পার করেছে মধ্য সেপ্টেম্বরেই।
ঘটনার শুরু গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
আইএ/এএ