এদেরই একজন ১১ বছরের মঞ্জুর আলম একেঁছে তার গ্রাম মিয়ানমারের বলিবাজারে সে যে ভয়াবহ সহিংসতা দেখে এসেছে তার ছবি। এতে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন নারী মাটিতে পড়ে আছেন, যাদের শরীর থেকে মাথা ও হাত বিচ্ছিন্ন।
১২ বছরের খুরশীদা একেঁছে তাদের বাড়ি পোড়ানোর দৃশ্য। যেখানে তার সদ্য জন্ম নেওয়া বোনটিকে সে হারিয়েছিলো।
দ্য ডিস্টার্বি ড্রয়িংয়ে দেখা যাচ্ছে গ্রামের সবাই জীবন বাচাঁতে যে যেদিকে পারছে দৌড়াচ্ছে।
১৩ বছরের নুরুল হক একেঁছেন এক সেনা তার প্রতিবেশীর ৫ বছরের শিশুর গলা পা দিয়ে চেপে ধরে আছে।
এই ছবি আঁকিয়েরা তাদেরই অংশ, যে ২ লাখ ৩০ হাজার শিশু গত আগস্টের ২৫ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। সেদেশের সেনাবাহিনী জঙ্গি দমনের নামে জাতিগত গণহত্যা বা যে এথনিক ক্লিনজিংয়ে নেমেছে, তাতে এই শিশুরা তাদের ঘর, পরিবার, পরিজন এবং বাবা-মাকে হারায়।
জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনিসেফ বলছে, এখন পর্যন্ত এমন ১৪শ শিশু তারা চিহ্নিত করতে পেরেছে যারা বাবা-মা বা অভিবাবক ছাড়াই বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। হয়তো এদের বাবা-মা আগেই সেনা অভিযান বা বৌদ্ধ জঙ্গিদের হামলায় এদের সামনেই মারা গেছে অথবা আসার সময় পথে হারিয়ে গেছে। এরইমধ্যে এদের মধ্যে নানা ধরনের মানসিক অসুস্থতা বা ট্রমা দেখা দিয়েছে।
ইউনিসেফ বলছে, এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে এই শিশুদের সাহায্য প্রয়োজন। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আসা ৪ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীর মধ্যে কম হলেও ৬০ শতাংশ শিশু। সংস্থাটি বলছে, তারা এই বিপুল সংখ্যক শিশুর মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এরইমধ্যে কাউন্সিলিং, ছবি আঁকানো, খেলার মাধ্যমে ব্যস্ত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে।
ইউনিসেফের কর্মকর্তা ফাতেমা খায়রুন নাহার বলেন, এসব শিশুর জন্য এরইমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে। যাদের নাগরিকত্ব নেই এবং যারা যুগের পর যুগ ধরে অমানবিক জীবনযাপন করে থাকে। আগস্টের ২৪ তারিখে আরাকান স্যালভেশন আর্মি বা আরসা ২৫টি সেনা চৌকি এবং পুলিশ ক্যাম্পে আক্রমণ করলে, সেদেশের সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানে এখন পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে বলে মনে করে জাতিসংঘ।
রোহিঙ্গা শিশুদের আঁকা এ ছবিগুলো ক্যাপশনসহ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য সান।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
আরএম/এএ