গত রোববার (১ অক্টোবর) রক্তঝরা নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে গণভোট হয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুইগডেমন্ট এ অবস্থান প্রকাশ করেন। তিনি জানান, চলতি সপ্তাহের শেষে অথবা আগামী সপ্তাহের শুরুতে যথাযথ কার্যক্রম সম্পাদন করবে তার সরকার।
পুইগডেমেন্টের এই সাক্ষাৎকারের আগে স্পেনের রাজা ফিলিপ ষষ্ঠ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি স্প্যানিশদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্পেনের অবস্থা ‘খুবই গুরুতর’। গণভোটের আয়োজকরা নিজেদের ‘আইনের বাইরে’ নিয়ে গেছেন।
মাদ্রিদ সরকারের তীব্র বিরোধিতার মুখে রোববার ওই গণভোটের আয়োজন করা হলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। এতে দিনভর সংঘর্ষ ও রক্তারক্তি হয়। সারাদিনে প্রায় ৯০০ স্বাধীনতাকামী আহত হয়। আহত হয় ৩০ পুলিশও।
বরাবরের মতোই গণভোট শেষে স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্পেনের জনগণ এই অসাংবিধানিক গণভোট ও তার ফলাফলকে মানবে না। তবে তারপরই পুইগডেমন্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, কাতালানরা স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার অধিকার জিতে গেছে।
মঙ্গলবারের সাক্ষাৎকারে কাতালান প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা এখন কয়েকদিনের ব্যাপার মাত্র। এই সপ্তাহের শেষে বা সামনের সপ্তাহের শুরুতেই সে কার্যক্রম শুরু হবে।
যদি বিষয়টি না মেনে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করে কিংবা কাতালোনিয়ার সরকারেরও নিয়ন্ত্রণে নেয়, তবে কী হবে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে পুইগডেমন্ট বলেন, এমন কোনো ভুল যদি করা হয়, তবে সব কিছুই বদলে যাবে। তিনি জানান, গণভোটের পর থেকেই মাদ্রিদ সরকারের সঙ্গে তার প্রশাসনের কোনো যোগাযোগ নেই।
গণভোটের পরের দিন ইউরোপিয়ান কমিশন বিবৃতি দিয়ে কাতালোনিয়ার ইস্যুকে স্পেনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে যে মন্তব্য করেছে, তাতেও দ্বিমত পোষণ করেন পুইগডেমন্ট।
গণভোটে পুলিশের বাধা দেওয়ায় মঙ্গলবার দিনভর ধর্মঘট পালন করেছে কাতালানরা। আঞ্চলিক রাজধানী বার্সেলোনার রাস্তায়ই নেমেছিল প্রায় ৭ লাখ মানুষ। এই ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে বন্ধ ছিল নগরের দুই ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা ও এস্পানিয়লের স্টেডিয়াম এবং কার্যালয়ও।
স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রফতানি হয়, তার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে।
নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে চায়। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাকামী দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।
তবে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালানরা সরব হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছে স্প্যানিশরা। এই বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪ সালে কাতালানরা পরীক্ষামূলক গণভোট করলে তার ফলাফলকে উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি সেসময় বৈধ উপায়ে গণভোট আয়োজনের আবদারও না মানার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত গণভোটের পর এখন মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার তৎপরতার দিকেই নজর ইউরোপসহ বিশ্ববাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** ‘স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার জিতে গেছে কাতালানরা’
** কাতালোনিয়ায় সংঘর্ষে আহত ৭৬১, ধর্মঘটের ডাক
** কাতালোনিয়ায় গণভোট নিয়ে সংঘর্ষে আহত তিন শতাধিক
** কাতালানদের স্বাধীনতার গণভোট রোববার, বার্সেলোনায় র্যালি