বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) স্থানীয় সময় দুপুরে নোবেল পুরস্কার মনোনয়ন কর্তৃপক্ষ রয়্যাল সুইডিশ একাডেমির সংবাদ সম্মেলনে সাহিত্যে বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়।
কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয়, ‘তীব্র আবেগঘন উপন্যাসগুলোতে মোহময় চৈতন্যের আড়ালে বিরাজমান অতল জগতের সঙ্গে বাস্তব পৃথিবীর যোগসূত্রকে উন্মোচন করায়’ তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
মূলত ঔপন্যাসিক হলেও ছোট গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার ও কলাম লেখক হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে ইশিগুরোর। তিনি সবচেয়ে বেশি খ্যাতি লাভ করেন তার ‘দ্য রিমেইন্স অব দ্য ডে’ ও ‘নেভার লেট মি গো’ উপন্যাসের জন্য। এ দু’টি উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়, যা দর্শক-সমালোচক সবশ্রেণির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পায়। নোবেল কমিটিও ইশিগুরোর এ দু’টি উপন্যাসের ভূয়সী প্রশংসা করে।
ইশিগুরোর লেখার চরিত্ররা অতীতের সমস্যা-সংঘাতেই থেকে যায়, অমীমাংসিত থেকে যায় তাদের জীবনের ঘটনাগুলো। বিষণ্নতায় সমাপ্তি ঘটে কাহিনীর। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমির ভাষায়, ‘কাহিনী যা-ই হোক, লেখকের ভাষা থাকে নির্বিকার। ’
৬২ বছর বয়সী এই লেখক বই লিখেছেন মোটে আটটি। বইগুলো ৪০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
পুরস্কার ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইংরেজি সাহিত্য জগতের অন্যতম নন্দিত লেখক ইশিগুরো বলেন, ‘এই পুরস্কার অবিশ্বাস্য প্রাপ্তি। ’
নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে আগে কিছু শোনেননি জানিয়ে এই সাহিত্যিক বলেন, ‘প্রথমে শোনার পর গুজব কি-না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। এটা বিশাল সম্মান, কারণ এখন মনে হচ্ছে, মহান সাহিত্যিকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারছি। ’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া জাপানের নাগাসাকিতে যুদ্ধের প্রায় এক দশক পর ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন ইশিগুরো। তার বাবা সমুদ্রবিজ্ঞানী হিসেবে ইংল্যান্ডে চাকরি পেলে পাঁচ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে সেখানে চলে যান তিনি।
ইউনিভার্সিটি অব কেন্টে ইংরেজি ও দর্শনে পড়াশোনার পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়া থেকে সৃজনশীল লেখালেখির ওপর স্নাতকোত্তর করেন। এখানে তিনি শিক্ষক হিসেবে পান প্রখ্যাত ইংরেজ লেখক ম্যালকম ব্র্যাডবুরি ও ঔপন্যাসিক অ্যাঙ্গেলা কার্টারকে।
‘এ প্যাল ভিউ অব হিলস’ শিরোনামে লেখা তার থিসিসই প্রথম উপন্যাস হিসেবে পরিচিতি পায় এবং এটি বই আকারে প্রকাশ হয় ১৯৮২ সালে।
সাহিত্যের আরেক শ্রেষ্ঠতম সম্মাননা ‘বুকার প্রাইজ’ এর জন্য চারবার মনোনয়ন পান ইশিগুরো, তবে ‘দ্য রিমেইন্স অব দ্য ডে’ উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮৯ সালে জিতে যান এ পুরস্কার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী টাইম ২০০৫ সালে তার ‘নেভার লেট মি গো’কে শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের স্বীকৃতি দেয়। একইসঙ্গে এটিকে ১৯২৩ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত রচিত শ্রেষ্ঠ ১০০ ইংরেজি উপন্যাসের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে।
২০০৮ সালে ইশিগুরোকে ১৯৪৫ সাল পরবর্তী শ্রেষ্ঠ ৫০ ব্রিটিশ লেখকের তালিকায় ৩২তম হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
গত বছর সাহিত্যে পুরস্কার জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গায়ক, কবি ও গীতিকার বব ডিলান। ‘সংগীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক অভিব্যক্তি সৃষ্টির জন্য’ তাকে ওই পুরস্কার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৭
এইচএ/