সোম ও মঙ্গলবার (৯ ও ১০ অক্টোবর) কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সংসদের অধিবেশনে স্বাধীনতার প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোটের ফলাফল উত্থাপনকে সামনে রেখে শনিবার (৭ অক্টোবর) একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজয় এ কথা বলেন।
মাদ্রিদ সরকার ধারণা করছে, সোম অথবা মঙ্গলবার কাতালান সংসদে অঞ্চলটির গণভোটের ফলাফল উত্থাপনের পর স্বাধীনতার পক্ষে ভোটাভুটি হয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দিয়ে বসতে পারে বার্সেলোনার নেতৃত্ব।
এই সংকট সমাধানের জন্য কোনো প্রকারের মধ্যস্থতায় আগ্রহ নেই জানিয়ে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ধরনের স্বাধীনতা ঘোষণার ফল যেন না মেলে তা নিশ্চিত করবে মাদ্রিদ।
সংবিধানে দেওয়া ক্ষমতা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সংকটে হস্তক্ষেপের ইচ্ছে স্পেন সরকারের আছে কিনা-- এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের মধ্যে আছে এমন কোনো কিছুই আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না, এমনকি কোনো অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের সম্ভাবনাও।
কাতালোনিয়ায় এই সংকটের ফলে স্পেন সরকারে কোনো অনাস্থার গুঞ্জন উঠেছে কিনা, যার জেরে আগাম জাতীয় নির্বাচন ডাকতে হতে পারে-- এমন আরেকটি প্রশ্নের জবাবে রাজয় বলেন, ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সংকটে কোনো আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।
সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, গত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষেই ভোট বেশি পড়েছে। এই ভোট পেয়ে কাতালোনিয়ায় স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। সোমবার আঞ্চলিক সংসদ নিষেধাজ্ঞায় অধিবেশনে বসতে না পারলে মঙ্গলবার এই ঘোষণা দিয়ে বসতে পারেন কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইগডেমন্ট।
তবে স্পেন ভাঙনের এই তৎপরতা বন্ধে শনিবার (৭ অক্টোবর) মাদ্রিদ-বার্সেলোনাসহ বিভিন্ন শহরে র্যালি করেছে স্প্যানিশরা। তারা দু’পক্ষকেই এ নিয়ে সহনশীলতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গণভোটের পরই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ ও দফায় দফায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে রাজয় জানিয়ে দেন, গণভোট আয়োজন ও এর ফলাফল মানে না স্প্যানিশ জনগণ।
গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলেও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে গণভোটকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দেন।
তার ভাষণের আগে ও পরে কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইগডেমন্ট ইঙ্গিত দেন, তারা সামনের স্বাধীনতার প্রস্তাব ওঠাবেন আঞ্চলিক সংসদে। সেখানেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রফতানি হয়, তার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে।
নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে চায়। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাকামী দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।
তবে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালানরা সরব হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছে স্প্যানিশরা। এই বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪ সালে কাতালানরা পরীক্ষামূলক গণভোট করলে তার ফলাফলকে উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি সেসময় বৈধ উপায়ে গণভোট আয়োজনের আবদারও না মানার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত গণভোটের পর এখন মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার তৎপরতার দিকেই নজর ইউরোপসহ বিশ্ববাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** গণঐক্যের আহ্বানে স্পেনজুড়ে র্যালির পরিকল্পনা
** আহত কাতালানদের কাছে স্পেন সরকারের দুঃখ প্রকাশ
** স্বাধীনতা ঘোষণা রুখতে কাতালান সংসদ অধিবেশনে স্থগিতাদেশ
** স্পেনের রাজার সমালোচনায় কাতালান প্রেসিডেন্ট
** ক’দিনের মধ্যেই স্বাধীনতা ঘোষণা করবে কাতালোনিয়া?
** ‘স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার জিতে গেছে কাতালানরা’
** কাতালোনিয়ায় সংঘর্ষে আহত ৭৬১, ধর্মঘটের ডাক
** কাতালোনিয়ায় গণভোট নিয়ে সংঘর্ষে আহত তিন শতাধিক
** কাতালানদের স্বাধীনতার গণভোট রোববার, বার্সেলোনায় র্যালি