তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের দেশে শান্তি চান। নিজ জন্মভূমিতে চাহিদার সুরক্ষা হোক এটাই সবার কাম্য।
ফেরত পাঠানোর বিষয়ে জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তার মত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কিংবা নতুন স্বতন্ত্র কোনো প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান করতে হবে। সব থেকে উত্তম সমাধান তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনদুলু এজেন্সির সঙ্গে কথোপকথনে রুপার্ট কোলভিল এসব কথা বলেন।
মিয়ানমারে সংঘাত চলছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় রোহিঙ্গারা শান্তিরক্ষা কার্যক্রম চান। বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ এখন খুবই জটিল একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। আপনি একটি জাতিকে পুরোপুরিভাবে তাড়িয়ে পাশের কোনো দেশে পাঠিয়ে দিতে পারেন না।
মানবাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াটাই সব থেকে জরুরি।
তবে মাস দুয়েক হতে চললো সেনা অভিযান চললেও জাতিসংঘ সেখানে শান্তিরক্ষী পাঠাতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলেও মত দেন তিনি। এও বলেন, সেখানে যা চলছে তা পরিকল্পনা মাফিক। ফলে এতো মানুষ উচ্ছেদ হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
সহিংসতার জন্য রাখাইনে জাতিসংঘের কোনো সংস্থা কাজের সুযোগ পাচ্ছে না, তার কথায় এটিও উঠে আসে। শুধু তাই নয়, গণহত্যা, গণর্ধষণসহ বিতাড়িত করার অভিযোগ নথিভুক্ত করেছে জাতিসংঘ।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে কথা বললেও বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি ও দেশটির সামরিক উপদেষ্টা দাবি করেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সামরিক তৎপরতা বন্ধ হয়েছে! সেখানে আর কোনো সহিংসতা নেই!
অবশ্য বৈঠকেই তার কথায় কফি আনান সন্দেহ প্রকাশ করেন। প্রশ্ন রাখেন তবে কেন ঢল থামছে না এখনও?
মূলত পশ্চিমা দেশগুলো যখনই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৈঠক বা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বসছে, তখনই কোনো না কোনো ইতিবাচক তৎপরতা দেখানোর চেষ্টা করছে মিয়ানমার। কিন্তু এর আড়ালে রোহিঙ্গা নিধন ও দেশছাড়া করা অব্যাহত রয়েছে। ফল হিসেবে এরই মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, সহিংসতার জেরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা দশ হাজার পার করেছে মধ্য সেপ্টেম্বরেই।
গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে নয়, ঘরে ফেরত নিন: কফি আনান
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
আইএ