সহিংসতা শুরুর প্রায় দেড় মাস পর বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো রাখাইনে সফরে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
এর আগে রাখাইনের রাজধানী সিত্তোয়ে থেকে কঠোর নিরাপত্তায় একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে মংডুসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন সু চি।
সফরের বিস্তারিত তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানানো না হলেও সু চির সঙ্গে দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারা মিলে ২০ সঙ্গী ছিলেন।
প্রথমে হেলিকপ্টারে করে সু চি মংডু শহরসহ সেখানকার বিভিন্ন গ্রামের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে নির্যাতনের চিত্র দেখেন। কোথাও আবার নেমে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন রাখাইনে বেশ জনপ্রিয় এনএলডি’র এই নেত্রী।
এ সময় তাদের পররস্পরের সঙ্গে ‘বিবাদে না জড়ানো’র আহ্বান জানান সু চি।
সু চির পরির্দর্শনের সময় ওই এলাকায় উপস্থিত আরাকান প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপের ক্রিস লিউয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, মংডুর রাস্তার পাশে কিছু মানুষ মানুষ জড়ো হয়। সেখানে গাড়ি থামিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন সু চি।
‘তিনি (সু চি) মানুষকে তিনটি বিষয় বলেছেন- শান্তিপূর্ণভাবে জীবন-যাপন করতে, যে কোনো বিষয়ে সরকার তাদের পাশে আছে এবং একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে না জড়াতে। ’
গত ২৫ আগস্ট থেকে নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধন ও তাদের গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিতে শুরু করে মিয়ানমার। প্রাণে বাঁচতে ওইদিন থেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির ছয় লাখের বেশি মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে।
অং সান সু চি, যিনি দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী হিসেবে পরিচিত; শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। তবে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান চালানোর পরও নীরব ভূমিকায় ছিলেন তিনি। এমনকি রাখাইনে সেনাবাহিনীর অত্যাচারও বন্ধ করতে পারেননি।
আর এ নিয়ে তাকে বিশ্বনেতাদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন দেশটির নেতা অং সান সু চি। এর আগে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের কারণ সম্পর্কে অবগত নন, এমন কথাও বলেছিলেন তিনি।
তবে এ ধরনের কথা বলা হলেও এখনও থামেনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশ। জনস্রোত কমলেও এখনও প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা অব্যাহত রয়েছে।
এখনও গড়ে দৈনিক দেড় থেকে আড়াই হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ নাফ নদী পেরিয়ে শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। ছোট ছোট নৌকায় করে তাদের নদী পারাপারও করছে মিয়ানমারের নাগরিকরা।
আলাপ-আলোচনার এ পর্যায়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষে নতুন অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করতে দেশটি প্রস্তুত। কিন্তু শরণার্থীদের দেখিয়ে বাংলাদেশ বিদেশি অনুদান আদায় করছে ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করছে।
তবে নিজ ভিটা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে একাট্টা হয়ে সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, নেভেম্বর ০২, ২০১৭/আপডেট: ১৭১৯
এমএ/