কবে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা ঠিক নিশ্চিত করে বলা না হলেও খবরটি মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। আরব বসন্তের জেরে রাজনৈতিক সমীকরণের পরিণতিতে ইয়েমেনে ২০১৫ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে বেশিরভাগ সময় ধরেই সৌদির রাজধানী রিয়াদে থাকছেন হাদী।
কয়েকজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আল জাজিরা বলছে, হাদীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সমর্থক হয়েও তার দেশে ফেরায় সৌদি আরব এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাবে। হাদী সুন্নিপন্থি রাজনীতিক হলেও আরব আমিরাত মনে করে, তার দল ইসলাহ পার্টির সঙ্গে মিশরের নিষিদ্ধঘোষিত মুসলিম ব্রাদারহুডের যোগাযোগ রয়েছে। সেজন্য সৌদি আরব জোটের হয়ে হাদী সরকারের ‘পক্ষে’ ইয়েমেনের ময়দানে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ালেও আরব আমিরাত তার পদক্ষেপ ‘নির্ভেজাল’ মনে করে না।
এমন এক তথ্যও রয়েছে আবুধাবির কাছে যে, আরব আমিরাতের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা মন্ত্রীদের নিজের সরকার থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করে আসছেন হাদী। তারই অংশ হিসেবে গত ২ নভেম্বর একটি বিশেষ সভাও করেন। কিন্তু তার কোনো ফল এখনও আসেনি। কারণ হাদী আশঙ্কা করছেন, আরব আমিরাত নাখোশ হয়ে পড়লে সৌদি তার পেছন থেকে সরে যেতে পারে, যার ফলে হুথিদের বিরুদ্ধে তার সরকারের লড়াইটা তখনই শেষ হয়ে যাবে।
গত শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে হুথিরা রিয়াদের বাদশাহ খালেদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। বিশেষত সৌদি সরকারের বেশ কয়েকজন যুবরাজ-মন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। বরখাস্ত হয়েছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর হোয়াইট আর্মি খ্যাত ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান এবং নৌ বাহিনীর প্রধানও। সৌদি দাবি করছে, হুথি বিদ্রোহীদের এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে শিয়াপন্থি রাষ্ট্র ইরান। জবাবে তেহরান বলেছে, অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়ে এখন রিয়াদ বিদ্বেষপূর্ণ নির্ভেজাল মিথ্যাচার করছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নিজের অনুগত প্রশাসনের অধীনে থাকা দক্ষিণাঞ্চলে যেতেও বাধা পাওয়ায় ইয়েমেনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাই এখন প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল।
ইয়েমেনের নিরাপত্তা বাহিনীর একজন কমান্ডার জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে শেষবার সৌদিতে আসার পর ইয়েমেনে ফিরতে কয়েকবার বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের কাছে লিখিত অনুরোধ করেন হাদী। কিন্তু তার কোনো ফল মেলেনি।
আগস্টে তিনি রিয়াদ বিমানবন্দরেও চলে আসেন তার অনুগত প্রশাসনের অস্থায়ী রাজধানী এডেনে যেতে। কিন্তু বিমানবন্দর থেকেই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
নতুন করে বাধা দেওয়ার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন কর্মকর্তা বলেন, হাদী, তার পুত্র ও কয়েকজন মন্ত্রী কর্মকর্তা ইয়েমেনে ফিরতে চাইলে রিয়াদ বিমানবন্দরে তাদের বাধা দেওয়া হয়। সৌদি তাদের একরকম ‘গৃহবন্দি’ করে রেখেছে।
ওই কর্মকর্তা দু’জন বলেন, বাধা পাওয়ার পর হাদী জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন তাকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে বলা হয়, এখন স্বদেশে ফেরাটা নিরাপদ নয়। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে টার্গেট করে ষড়যন্ত্র করছে।
এ বিষয়ে সৌদি আরব জোটের মুখপাত্র কর্নেল তুরকি আল-মালাকির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার কার্যালয় ও সরকারের সঙ্গে আলাপের পরামর্শ দেন। আর ইয়েমেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি কাউকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭
এইচএ/