মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সংসদের স্পিকার জ্যাকব মোডেন্ডা সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য জানান।
মুগাবে স্বেচ্ছায় এটি করেছেন বলে তার বরাতে স্পিকার জানিয়েছেন।
মুগাবের বিরুদ্ধে সংসদে এদিনই অভিশংসন প্রস্তাব আনতে যাচ্ছিল তার নিজের দল ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি (জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট)। দলের সিনিয়র নেতা পল মাংওয়ানা বলেছিলেন, অভিশংসনের এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে অন্তত দুই দিন লাগবে।
প্রক্রিয়া শুরুর আগেভাগেই পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন দেশটির এক সময়কার তুমুল জনপ্রিয় এই নেতা। ১৯৮০ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। বর্তমানে তার বয়স ৯৩ বছর।
এদিন সকালেই মুগাবে দ্বারা বহিষ্কৃত ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগবা ক্ষমতা ছেড়ে দিতে মুগাবের প্রতি আহ্বান জানান। মুগাবে অন্যায়ভাবে সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, তার স্ত্রীকে (গ্রেস মুগাবে) সুবিধা দিতে চেয়েছেন। যা তিনি অন্যায় করেছেন।
এদিকে পার্টির অনেক নেতাকর্মীরাই চান নানগাগবা নতুন প্রেসিডেন্ট হোক। এমনটি চাওয়া সেনাবাহিনীর মধ্যেও।
গত ৬ নভেম্বর ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগবাকে অপসারণের পর জিম্বাবুয়ের রাজনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি। সেনাবাহিনীর ‘ঘনিষ্ঠজন’ বলে পরিচিত ৭৫ বছর বয়সী নানগাগবাকে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবের উত্তরসূরী ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে মুগাবের ৫২ বছর বয়সী স্ত্রী গ্রেসও রাজনীতির ময়দানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে-পড়ে লাগেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেস এই উচ্চাভিলাস থেকে মুগাবেকে বাধ্য করেন নানগাগবাকে অপসারণ করতে। তারপর ১৩ নভেম্বর সেনাপ্রধান জেনারেল কনস্ট্যান্টিনো চুইঙ্গা সংকট সমাধানে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ারি দেন। ১৪ নভেম্বর রাস্তায় নামে সেনাবাহিনীর চারটি ট্যাংক। ১৫ নভেম্বর সকাল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় দেখা যায় সেনাটহল। সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়, তারা মুগাবের আশপাশের অপরাধীদের সরাতে অভিযানে নেমেছে। তবে এটা কোনো অভ্যুত্থান (ক্যু) নয় বলেও দাবি করে তারা।
সেনাবাহিনীর রক্তপাতহীন এমন ‘অভ্যুত্থান’র পর এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। খবর ছড়ায়, সেনারা মুগাবেকে ‘গৃহবন্দি’ করে রেখেছে। আর গ্রেস দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন পড়শী দেশ নামিবিয়ায়। ১৭ নভেম্বর হারারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেখা যায় মুগাবেকে।
সেসময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, সেনাবাহিনী মুগাবেকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাইছে না। সেজন্য তাদের ইন্ধনে হারারেতে শুরু হয় মুগাবে-বিরোধী বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ থেকে অশীতিপর প্রেসিডেন্টকে সরে যাওয়ার দাবি তোলা হয়। একইসঙ্গে নানগাগবার হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করার দাবিও ওঠে বিক্ষোভে। তারই প্রতিফলন আসে জানু-পিএফের বৈঠক থেকে। মুগাবেকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে সেনাবাহিনী সামরিক শাসন জারি করলেও স্থগিত করেনি সংবিধান। এখন দেখার পালা কে হচ্ছেন পরবর্তি রাষ্ট্রনায়ক…।
আরও পড়ুন
**মুগাবেকে পদত্যাগে উদাত্ত আহ্বান নানগাগবার
**দল থেকে বহিষ্কার মুগাবে
**জাতির উদ্দেশে ভাষণ, ক্ষমতায় থাকতে চান মুগাবে!
** রোববারই অপসারণ হচ্ছেন মুগাবে!
** মুগাবেকে ক্ষমতা ছাড়তে বললো তার দলও
** মুগাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্ররোচিত করছে সেনাবাহিনী
** গৃহবন্দি থেকে জনসম্মুখে মুগাবে
** সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন মুগাবে
** মুগাবে নিজেই করছেন পদত্যাগ!
** মুগাবে ‘গৃহবন্দি’, দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন স্ত্রী গ্রেস!
** মুগাবে আটক, নানগাগবাকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা সেনাবাহিনীর!
** জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, ক্যু’র অভিযোগ নাকচ
** মুগাবে-সেনাপ্রধান পাল্টা বক্তব্য, রাস্তায় জলপাই ট্যাংক
** ‘অবাধ্য’ ভাইস প্রেসিডেন্টকে বহিষ্কার করলেন মুগাবে
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭/আপডেট ২২৩৬ ঘণ্টা
আইএ