রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞের পেছনের মূল হোতা হিসেবে জেনারেল হ্লাইংকে দায়ী করা হয়ে থাকে। আর এই নিধনযজ্ঞের শুরু থেকেই মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়ে তাদের পাশে রয়েছে চীন।
নেপিদোতে অনুষ্ঠিত এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ে (আসেম) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি উঠে আসে। দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের আগের দিন হ্লাইংয়ের সঙ্গে নেপিদো সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র বৈঠক হয়। আর সম্মেলনের শেষ দিনই হ্লাইং নেপিদো ছেড়ে যান।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সফরে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী প্রধান চীনের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি পরিদর্শন করবেন চীনের সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোও।
সিনহুয়া মিয়ানমারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনারেল হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠককালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বলেছেন, বেইজিং সবসময়ই তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে নেপিদোকে প্রাধান্য দেয়। তিনি আরও বলেছেন, দু’পক্ষের সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর।
এ বৈঠকে ওয়াং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চীনের পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রথমত; অস্ত্রবিরতি এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, যেন রাখাইন থেকে লোকজন না পালায় এবং শান্তিতে থাকে। দ্বিতীয়ত; মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্যের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের উপায় খোঁজা এবং তৃতীয়ত, রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা করা।
মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী প্রধান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানান। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থানের জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান। পরে এই তিনটি প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনেও উত্থাপন করেন ওয়াং।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদে রাখাইনে নিধনযজ্ঞ শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত সোয়া ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে সংকটের শিগগির সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এইচএ/