ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘সমঝোতায়’ পদত্যাগ, কোটি ডলার ও দায়মুক্তি পাচ্ছেন মুগাবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
‘সমঝোতায়’ পদত্যাগ, কোটি ডলার ও দায়মুক্তি পাচ্ছেন মুগাবে নেতাকর্মীদের পেছনে রেখেই নিজেকে রক্ষায় ‘সমঝোতা’ করলেন মুগাবে!

বার্ধক্যের বাস্তবতা সামনে দাঁড়াতেই থেমে গেলো রবার্ট মুগাবের স্বৈরশাসন। নিজের স্ত্রী আর একসময়ের সবচেয়ে আস্থাভাজন নেতার মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে হারিয়ে ফেললেন তিনি ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের দড়ি। স্ত্রীকে সামনে রাখতে আস্থাভাজনকে ‘মাইনাস’ করার সিদ্ধান্তে তাকে ছেড়ে গেলো অনুসারীদের একটি অংশ। যে সেনাবাহিনী দীর্ঘ ৩৭ বছর তার ছায়া হয়েছিলো, তারাও পক্ষ নিলো সেই বিরোধী অংশের। এরপর আর কিছু করার রইলো না অশীতিপর এই রাজনীতিকের। একসময়ের সেই আস্থাভাজন এমারসন নানগাগবার কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে ‘সমঝোতায়’ বাধ্য হলেন তিনি। ঘোষণা দিলেন দীর্ঘ ৩৭ বছর রাষ্ট্র চালানোর পদ থেকে অব্যাহতির। এখন এই ‘সমঝোতার খাঁচায়’ থেকেই বাকি জীবন কাটাতে হবে মুগাবেকে।

‘সমঝোতা’র অংশ হিসেবে অবশ্য ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার বা ১ কোটি ডলার পাচ্ছেন জিম্বাবুয়ের পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট। ৩৭ বছরে যতো ‘অপরাধ-অপকর্ম’ করেছেন, সপরিবারে দায়মুক্তি পাচ্ছেন সেসব থেকেও।

কিন্তু এক্ষেত্রে তার সঙ্গ দিয়ে আসা নেতাদের মনে রাখলেন না ৯৩ বছর বয়সী মুগাবে। স্বভাবতই মুগাবের পক্ষে ‘অতি উৎসাহী’ অবস্থান যে রাজনীতিকদের ছিল, তাদের পড়তে হয়েছে বিচারের মুখে। এরইমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে মুগাবে সরকারের অর্থমন্ত্রী ইগনাতিয়াস চোমবোকে ওঠানো হয়েছে আদালতে।

নানগাগবার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সেনা সমর্থক শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে মুগাবের এই সমঝোতার ‘লেনদেনে’র খবরটি দিয়েছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’। জিম্বাবুয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য না মিললেও তারা এই লেনদেনে জড়িত একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে, মুগাবেকে দেওয়া অর্থের অংক কোটি ডলারের কম নয়। এই অর্থের স্থানীয় মান প্রায় ৩৬২ কোটি জিম্বাবুইয়ান ডলার।

ওই কর্মকর্তা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, বিচারের হাত থেকে দায়মুক্তির নিশ্চয়তা দিয়ে মুগাবেকে বলা হয়েছে, তার ও পরিবারের সদস্যদের বিস্তৃত ব্যবসা নিয়েও মাথা ঘামাবে না সরকার। আপাতত তার হাতে নগদে ৫০ লাখ ডলার তুলে দেওয়া হতে পারে। বাকি অর্থ দেওয়া হবে সামনের মাসগুলোতে। এছাড়া মৃত্যু পর্যন্তও নিজের প্রেসিডেন্ট পদের বেতন দেড় লাখ ডলার পাবেন তিনি। আর রাষ্ট্রের অর্থ-সম্পত্তির অপব্যহারের জন্য তিরস্কারের শিকার হয়ে আসা ৫২ বছর বয়সী ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবে তার সুযোগ-সুবিধার অর্ধেক পাবেন বাকি জীবন।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন মতে, মুগাবের ৩৭ বছরের স্বৈরশাসনে জিম্বাবুয়েতে অর্থনৈতিক সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হয়েছে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতির শিকার তার দেশই। এছাড়া আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হার বিবেচনায়ও তার দেশ শীর্ষে। পৌনে ২ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে বেকারত্ব শেষ সমীক্ষা অনুযায়ী ৮০ শতাংশ।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, রাজধানী হারারের বাইরে সড়কগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। অনেক গ্রামীণ জনপদেই পৌঁছেনি বিদ্যুতের আলো। নেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকারও। দেশটিতে গড় আয়ুর হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬০ বছরে।

সমঝোতা সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সপত্নীক মুগাবে থাকতে পারবেন তাদের হারারের বাড়িতে। রাষ্ট্র বহন করবে তাদের স্বাস্থ্য ও গৃহস্থালী সেবা এবং নিরাপত্তা ও বিদেশ সফর বিষয়ক সব খরচ। এছাড়া, মুগাবে বা গ্রেসের সন্তান বা তাদের পরিবারের নিয়ন্ত্রিত ডেইরি ফার্মসহ কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করবে না সরকার।

তবে এই ‘সমঝোতার’ আওতায় নেই বলে অর্থমন্ত্রী ইগনাতিয়াস চোমবোসহ মুগাবের সরকারের অন্য নেতাকর্মীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।