বিক্ষোভ সহিংসতায় রুপ নিয়েছে বলেও দেখানো হচ্ছে ভিডিও ফুটেজগুলোতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এ ধরনের একটি ভিডিওতে দেখানো হয়, দুরাদে পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
খণ্ড খণ্ডভাবে লোকজনের অংশগ্রহণ বাড়ছে বলেও দাবি করা হচ্ছে ভিডিও পোস্টগুলোতে।
অন্যদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেলসহ রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমের খবরে দাবি করা হচ্ছে, সরকারের সমর্থক হাজার হাজার মানুষ মাঠে নেমে মিছিল করছেন।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সরকারকে কিছুটা হতচকিত করে দিয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল রহমান রহমানি ফাজলি জনগণকে ‘এ ধরনের অবৈধ সমাবেশে’ যোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
হাজার হাজার মানুষ গত চারদিন ধরে ইরানের বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী এ বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো ও ব্যাপক বেকারত্বের প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) মাশহাদে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ দ্রুতই সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয় এবং বড় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভকারীরা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিসহ ইসলামী বিপ্লবের নেতাদের ক্ষমতা ছাড়ার দাবি জানিয়ে শ্লোগান দিচ্ছেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধসহ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারও চাইছেন তারা।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত রাজধানী তেহরান ছাড়াও মাশহাদ, কেরমানশাহ, রাশত, ইস্পাহান ও কোমাসহ অন্তত নয়টি শহরে তীব্র বিক্ষোভের পর কিছু জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর দিয়েছে বিবিসি।
ভিডিও ফুটেজগুলোতে রাজধানী তেহরানের একেবারে কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হতে দেখা যাচ্ছে। খামেনিকে পদত্যাগের আহ্বানে শ্লোগান দেওয়ার পর সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায় শিক্ষার্থীদের। বিদ্রোহীদের সমর্থনে পার্সিয়ান রিপোর্টে বলা হয়েছে, তেহরানের আজাদী স্কয়ারেও জড়ো হয়েছেন বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী।
উত্তর ইরানের আঝার শহরে বিক্ষোভকারীরা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ছবি সম্বলিত বড় ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দেন। সেন্ট্রাল ইরানের আরাক এলাকায় সরকার সমর্থিত বেসিজ মিলিশিয়াদের স্থানীয় সদর দফতরে আগুন দিতে দেখা গেছে।
মাশহাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। শহরটিতে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ হারানোর অসংখ্য রিপোর্ট এসেছে। বিক্ষোভ হয়েছে ধর্মীয় নেতাদের আবাসস্থল হিসেবে খ্যাত কোম শহরেও।
বিবিসি জানিয়েছে, ভিডিওচিত্রে বিক্ষোভকারীরা শ্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘মানুষ ভিক্ষা করছেন, ধর্মপুরুষেরা ঈশ্বরের মতো কাজ করে’।
কিরানানশাহের বিক্ষোভকারী মাকান বিবিসিকে বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদেরকে পিটিয়ে মেরেছে। কিন্তু আমরা বলতে পারি না যে, তারা পুলিশ বা বেসিজ মিলিশিয়া ছিল’।
শনিবার ‘অবৈধ সমাবেশ’ এড়াতে বিক্ষোভকারীরা সরকারের সতর্কবাণী উপেক্ষা করার পর এ বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা তাদের নিজেদের এবং অন্যান্য নাগরিকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবে। বিরোধীপক্ষ এবং বিদেশি শক্তি এ বিক্ষোভে উস্কানি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ ইরান সরকারের।
তেহরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনস গার্ড বা বিপ্লবী বাহিনীর বিবৃতিতে দাবি করা হয়, শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিপ্লবী বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কায়সরি নিউজ এজেন্সি আইএসএনএকে বলেন, বিক্ষোভকারীদের ‘শক্ত হাতে’ দমন করা হবে।
অবশ্য এ বিক্ষোভের পেছনে ইরানের ব্যাপক সামাজিক অসন্তোষও দায়ী তা পরোক্ষভাবে ও এর দায় কিছুটা স্বীকার করছেন সরকারের কেউ কেউ। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির উপদেষ্টা হিশামুদ্দিন আশেনা টুইটারে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ইরানের সামনে বেকারত্ব, জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য, দুর্নীতি, বৈষম্যসহ অনেক গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জনগণের কথা যেন শোনা হয়, সে অধিকার তাদের আছে’।
২০০৯ সালে দেশটিতে বিতর্কিত নির্বাচন ও ব্যাপক সংস্কারের পর একই ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করেছিল ইরান সরকার। তবে এবারের বিক্ষোভকে জন অসন্তোষের সবচেয়ে গুরুতর ও ব্যাপক অভিব্যক্তি বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এএসআর