বলা হয়ে থাকে, ইরানের বিশেষ গোপন অভিযানিক দল কুদস ফোর্স। ‘অপ্রচলিত যুদ্ধের’ জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে এটি।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যে সামরিক প্রভাব তৈরি করতে চাইছ, তার মূল কারিগর এই কুদস ফোর্স। অর্থাৎ ইরাকে এক ধরনের প্রভাব তৈরি করা, সিরিয়াতে প্রভাব তৈরি করা, লেবাননে প্রভাব তৈরি করা, বিভিন্ন জায়গায়, এমনকি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইরানের যে যোগাযোগ আছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেখানেও সোলেমানির একটা বড় ধরনের ভূমিকা ছিল বলে পশ্চিমারা ধারণা করে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে, ইরান কোন দেশের সঙ্গে কী আচরণ করবে, কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, সেখানে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের কোনো দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও শেষ কথাটি কিন্তু জেনারেল সোলেমানিই বলতেন। অর্থাৎ তিনি যে মতামত দিতেন, সেটিই গ্রহণ করা হতো এবং সে অনুযায়ীই ইরানের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করা হতো।
সোলেমানিকে ইরানের জাতীয় বীর মনে করা হয়। তিনি ইরান কর্তৃপক্ষের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। তার নেতৃত্বেই দেশের সামরিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হতো। এছাড়া তিনি গত মার্চেও ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক পদক ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ এ ভূষিতে হয়েছিলেন। পাশাপাশি ইরানের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে কিছুক্ষণ পরপরই তার ছবি আসতো এবং তাকে নিয়ে নানা সংবাদ থাকতো।
এ কারণেই সোলেমানি বহুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের টার্গেট কিলিং পরিকল্পনায় ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের মনে ছিল, ইরানের বিপ্লবী গার্ড এবং এই চৌকস কুদস ফোর্স যদি থামানো না যায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, সামরিকভাবে এবং অন্যভাবে, সেটিকে থামানো যাবে না।
এছাড়া কয়েকদনি আগে রাজধানী বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। সেখানে উত্তেজিত জনতা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেছে। সেটিকে অবরুদ্ধও করে রেখেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, ইরানের মদদেই ইরাকের মার্কিন দূতাবাসে হামাল হয়েছে। কারণ ইরানের শিয়াপন্থী মিলিশিয়ারা এই হামলা চালিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ।
এরপরই সোলেমানির ওপর ড্রোন হামলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সোলেমানি সিরিয়া অথবা লেবানন থেকে ইরাকে এসেছিলেন। এবং তখনই তাকে হত্যা করা হয়। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু দিন ধরেই তার ওপর গোপন নজর রাখছিল। এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এ হমালা চালিয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগন বলছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং এই হামলা চালানো হয়েছে।
হামলায় বীর সোলেমানি নিহত হওয়ার পর বেশ উচ্ছ্বসিত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রপক্ষ। কিন্তু ইরান এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, যারা এই কাজ করেছে, অর্থাৎ যারা সোলেমানিকে হত্যা করেছে, সেসব অপরাধীর জন্য কঠিন সাজা অপেক্ষা করছে।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাবেদ জারিফ বলেছেন, আমেরিকা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের যে প্ররোচনা দিচ্ছে বা করছে, এটি তারই অংশ।
এদিকে, অনেক আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা চলছে। যেকোনো সময় যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে- এমন একটা ভাব। যেন যুদ্ধের দামামা বাজছে। ঠিক এই সময়ে সোলেমানি হত্যাকাণ্ড- পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
কারণ ইরান এখন পাল্টা প্রতিশোধ নিতে চাইবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা, সোলেমানিকে হত্যা, আয়াতুল্লাহ নিজের ওপর একটি বড় আঘাত বলে মনে করছেন। তার সঙ্গে ছিল সোলেমানির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের এই উত্তেজনা কোন দিকে মোড় নেবে, এখন সেদিকেই সবার নজর।
আরও পড়ুন>>
মার্কিন হামলায় ইরানের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার কাসেম সোলেমানি নিহত
খড়ের গাদায় আগুন দিলেন ট্রাম্প, সোলেমানি হত্যার পর বাইডেন
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৯
টিএ