ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে নারীদের ‘নতুন বিপদ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
মিয়ানমারে নারীদের ‘নতুন বিপদ’

মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম সাগাইং অঞ্চলের একটি গ্রামে সৈন্যরা জুন মাসে প্রথম হামলা চালায়। ওই হামলার পর জঙ্গলে আশ্রয় নেন সেখানকার বাসিন্দা খাইন থু।

এরপর এভাবে কতবার যে তাকে পালাতে হয়েছে, তার সঠিক হিসাব তিনি জানেন না। তার ধারণা, অন্তত ১৫ বার তাকে এভাবে নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে।

খাইন থু নামের ওই নারী বলেন, ‘যখন সৈন্যদের আসার কথা শুনি, তখন আমরা দৌড়ে জঙ্গলে পালিয়ে যাই। সৈন্যরা চলে গেলে আবার গ্রামে ফিরে আসি। ’

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। এরপর বিভিন্ন স্থানে তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়। সেই প্রতিরোধ সামলাতে অনেক গ্রামে ঢুকে হামলা চালায় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।  

প্রতিরোধের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হয় সাগাইং অঞ্চল। এপ্রিল থেকে সেখানে অভিযান শুরু করে সৈন্যরা।  

১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে এই অঞ্চলে মোট ১০৯ জন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে দিপাইন ও কানি শহরের রয়েছেন ৭৩ জন। জুলাইয়ে মানবাধিকার সংগঠন ও স্থানীয় গণমাধ্যম গণহত্যার এই হিসাব তুলে ধরা হয়।  

নিহত যোদ্ধা ও বেসামরিক লোকদের সবাই পুরুষ। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিনিয়তই গ্রামে অভিযান পরিচালনা করছে। এতে করে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন সেখানকার নারীরা। তারা এখন নিজেদের বাড়ি ছেড়ে মাঝেমধ্যেই জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছেন।  

চলতি মাসে ক্যানিসহ সাগাইং অঞ্চলের ১০টি শহরের ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করে দেয় সেনাবাহিনী। এরপর সেখানে তারা অভিযান ও হামলা চালায়।  

দিপাইন শহরের সাতপায়ারকাইনের খাইন থুর গ্রামে সহিংসতা শুরু হয় ১৪ জুন। সেখানে সেনাবাহিনী নিযুক্ত প্রশাসকের দুই মেয়েকে কাছের একটি গ্রামে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর ওই দিনই সৈন্যরা গুলি করে একজনকে হত্যা করে।

এরপর ২ জুলাই সৈন্যরা আবার সেখানে ফিরে আসে। এনইউজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বিচারে গোলাবর্ষণ এবং ছোট অস্ত্রের গুলিতে সেখানে কমপক্ষে ৩২ জন স্থানীয় বাসিন্দা মারা যান।  

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমান নাউ জানিয়েছে, এখন ১১টি গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নারী। তারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।  

প্রসঙ্গত, অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলের কয়েকদিন পর মিয়ানমারে শুরু হয় গণবিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভ থামাতে সামরিক বাহিনী হামলা ও ব্যাপক গ্রেপ্তার করে।
 
রাইটস গ্রুপ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (বার্মা) এর তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এ পর্যন্ত আন্তত ১ হাজার ১০০ লোককে হত্যা করেছে। গ্রেফতার করেছে অন্তত ৮ হাজার ২০০ জনকে।

এরই মধ্যে মিয়ানমারের সেনাশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ‘ছায়া সরকার’ গঠন করেছে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সংসদ সদস্যরা (এমপি)। ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ নামের এই ছায়া সরকারে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) পাশাপাশি দেশটির ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রাজনীতিকেরা রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।