ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কোথায় পাচার হচ্ছে লাখো কোটি টাকা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২১
কোথায় পাচার হচ্ছে লাখো কোটি টাকা?

বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস হয়েছে। এ বিষয়ে প্যান্ডোরা পেপারস নামের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে হইচই পড়ে গেছে।

 

এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করেছেন বিশ্বের ১১টি দেশের ৬০০ সাংবাদিক। তারা কয়েক মাস ধরে কাজ করে ১ কোটি ২০ লাখ গোপন নথি ফাঁস করেছেন।  

ওই নথিতে দেখা যায়, বিশ্বের অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অবৈধভাবে অর্জিত ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা বিদেশে পাচার করে তা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। টাকা পাচারের এসব হোতার মধ্যে রয়েছেন ৯০টি দেশের ৩০০ জনেরও বেশি রাজনীতিক।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সের লাক্সমি কুমার বলেন, ক্ষমতাধর মানুষেরা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ এবং অঞ্চলে নিবন্ধিত নামসর্বস্ব বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে ‘টাকা-পয়সা পাচার করে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এ কাজে তাদের সহায়তা করছেন আইনজীবী, আ্যাকাউনটেন্ট এবং পরামর্শক ও দালাল।  

অনুসন্ধানী এই সাংবাদিকদের জোট আইসিআইজি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা বেশ কয়েকটি শক্তিধর দেশের সরকারও হাজার হাজার কোটি ডলারের সম্পদ পাচার এবং কর ফাঁকির এই মহোৎসবে পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে।

বিশ্ব অর্থনীতির ১০ শতাংশ পাচার হয়ে কয়েক ডজন ‘ট্যাক্স হেভেন’ অর্থাৎ প্রায় করবিহীন অঞ্চলে নিবন্ধিত হাজার হাজার কাগুজে কোম্পানির খাতায় জমা হচ্ছে। পরিণতিতে এসব দেশের সরকার বছরে কমবেশি ৮০ হাজার কোটি ডলার আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কোথায় সেই ট্যাক্স হেভেন? কীভাবে গজায় হাজার হাজার এসব ‘শেল’? কীভাবে গোপন থাকে বিনিয়োগের নামে পাচার করা অবৈধ টাকার পাহাড়?

ট্যাক্স হেভেন
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে কর ফাঁকির সব নিরাপদ আস্তানা। এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম কিছু দেশ, যেমন পানামা, নেদারল্যান্ডস, মল্টা, মরিশাস। সেইসঙ্গে রয়েছে কয়েকটি দেশের অভ্যন্তরে কিছু অঞ্চল, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার বা ওয়াইয়োমিঙ অঙ্গরাজ্য।

অনেক দেশ তাদের মূল ভূখণ্ডের বাইরে কিছু অঞ্চলকে এমন ট্যাক্স হেভেন করে রেখেছে, যেমন ব্রিটিশ শাসিত ক্যারিবীয় দ্বীপ ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ বা কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ।

পাঁচ বছর আগে ‘পানামা পেপারস’ নামে কর ফাঁকি নিয়ে ফাঁস হওয়া নথিপত্রে দেখা যায়, পানামাভিত্তিক একটি আইনপ্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে হাজার হাজার শেল কোম্পানি নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।

বিশ্বের ৬০টির মতো দেশ এবং অঞ্চল রয়েছে, যেখানে এসব ‘খোলস’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এসব জায়গায় কোম্পানি করের হার খুবই কম। অনেক জায়গায় কর একবারেই দিতে হয় না।

অবৈধ সম্পদ গোপন রাখতে বা কর ফাঁকির জন্য যেসব লাখ লাখ মানুষ যখন এসব খোলস কোম্পানি খোলেন, তখন তাদের কাছ থেকে ওই দেশ বা অঞ্চলের সরকার অনেক ফি পায়।  

ট্যাক্স হেভেন ব্যবহার করেন যারা
বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের সঙ্গে অনেকে যারা ব্যাংকের ঋণ ফেরত দিতে বা কারও পাওনা শোধ করতে চান না, তারাও টাকা-পয়সা ট্যাক্স হেভেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

সেই সঙ্গে রয়েছে ঘুষখোর, মাদক ব্যবসায়ী বা অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তিরা অবৈধ আয় গোপন রাখতে উন্মুখ।

তবে বড় বড় অনেক বহুজাতিক কোম্পানি যারা বিশ্বজুড়ে লেনদেন করে, তারাও কর ফাঁকির জন্য ট্যাক্স হেভেনে ভিন্ন নামে সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলে বলে বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে। কাগজে-কলমে ভাগ হয়ে যায় ব্যবসার লেনদেন ও মুনাফা। এতে করে মূল কোম্পানির করের পরিমাণ কমে যায়।

নাইকি বা অ্যাপেলের মতো কোম্পানির বিরুদ্ধেও ট্যাক্স হেভেন ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে, এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণও ফাঁস হয়েছে।

নামসর্বস্ব কোম্পানি
বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে নিবন্ধিত এসব নামসর্বস্ব কাগুজে কোম্পানি আদতে কোনো ব্যবসা না করলেও আইনের চোখে এগুলো বৈধ।

এসব কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক কোনো কর্মী নেই। এমনকি অধিকাংশ কোম্পানির কোনো অফিস নেই। যেমন, আইসিআইজি’র গত বছরের এক রিপোর্টে বলা হয়, কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে একটি ভবনেই ছিল ১৯ হাজার কাগুজে কোম্পানির ঠিকানা।

ওই কোম্পানির নথিপত্রে মূল মালিকদের কোনো নাম-ঠিকানা নেই। কিন্তু পর্দার আড়াল থেকে তারাই এগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থ লেনদেন করেন। তারাই কোম্পানির নামে নানা দেশে জমি-জমা ঘরবাড়ি কেনেন, শেয়ার বাজারে টাকা খাটান।

অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানি খোলার খরচ অবিশ্বাস্যরকম কম এবং জটিলতা নেই বললেই চলে। আইসিআইজি’র এক রিপোর্ট অনুযায়ী, কোম্পানি খোলা এতই সহজ যে, একটি ই-মেইল বা একটি ফোনকলেই কাজ হয়ে যা। খরচ ও কাগজপত্র বা স্বাক্ষর সংখ্যা নির্ভর করে কোথায় কোম্পানি খোলা হচ্ছে এবং কোনো আইনজীবী এই কাজটি করে দিচ্ছেন তার হয়ে।  

কেন বন্ধ হচ্ছে না প্রতারণা?
আইসিআইজির বেন হলম্যান লিখেছেন, বিশ্বের প্রভাবশালী কিছু দেশ এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকছে। এমনকি প্রবণতা টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতাও করছে। যেমন ব্রিটিশ শাসিত একাধিক ক্যারিবীয় দ্বীপ বিশ্বের প্রধান সব ট্যাক্স হেভেন। এসব জায়গায় নিবন্ধিত কোম্পানির নামে লন্ডনে জমি-বাড়ি কেনাকাটা হচ্ছে।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাব বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বছরে কমবেশি ৩০ হাজার কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়ে আসছে।  

সূত্র: বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২১
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।