সাতক্ষীরা: পৌরভবনে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে দেবেন না সাতক্ষীরা পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র তাজকিন আহম্মেদ চিশতি। গত বুধবার দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষ মার্কায় জয়ী হওয়ার পর শুক্রবার সকালে বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই প্রত্যয়ের কথা জানান।
একান্ত ইন্টারভিউয়ে তিনি বলেন, পৌরভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যাতে জনবান্ধব হন, সেজন্য সব উদ্যোগ নেয়া হবে। সাতক্ষীরার প্রাণ ‘প্রাণসায়রের খাল’কে পুনরুজ্জীবিত করে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা হবে।
সদ্য নির্বাচিত মেয়র বলেন, পরিবর্তনের অঙ্গীকারে নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই, হতে চাই জনগণের প্রিয় মানুষ।
সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের মরহুল কমিশনার আবুল কাসেম ও তাসলিমা বেগমের জ্যেষ্ঠপুত্র তাজকিন আহম্মেদ চিশতি ১৯৭৬ সালের ৪ মে জন্মগ্রহণ করেন। সাতক্ষীরা কিন্ডার গার্টেনে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে পলাশপোল হাইস্কুলেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্রদলের রাজনীতিতে। সেসময় সাতক্ষীরা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন নিজ যোগ্যতা বলেই।
এরপর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যয়নকালে ১৯৯২ সালে কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কলেজ ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে নির্বাচিত হন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি। অত্যন্ত প্রত্যয়ী এই ছাত্রনেতাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০১৪ সালে নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। সেই ১৯৯১ সালে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি থেকে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, কোনটিতেই মনোনীত নন, প্রত্যেকটি পদেই নির্বাচিত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরনির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার পথযাত্রী তাজকিন আহম্মেদ চিশতি।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার মানুষ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর তারা ধানের শীষে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দুই যুগ পরে সাতক্ষীরায় ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধি এবার শপথ নেবেন।
নির্বাচন পূর্ব পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রায় ৬/৭ মাস আগে কাজ শুরু করি। তবে, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে ফেরার পর তার নিদের্শ পেয়েই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়।
চিশতি বলেন, আমার কর্মীরা প্রাণচঞ্চল ছিল, তারা সবসময় উৎসাহ দিয়েছে। তারা মনে করতো আমি নির্বাচনে দাঁড়ালে ভালো করবো। পরে জোটগতভাবেই প্রচারণা চালানো হয়।
মেয়র বলেন, আমি কোন কেন্দ্রে ভোট পেলাম, কোথায় ভোট পেলাম না, তা মুখ্য নয়। ওয়ার্ডগুলোর চাহিদা বিবেচনা করেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা হবে।
একজন সংসদ সদস্যের চেয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির দায়বদ্ধতা অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের কাজের সুযোগ অনেক বেশি, মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ বেশি।
ব্যক্তিগত রাজনৈতিক জীবন নিয়ে তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট কমিটমেন্ট নিয়ে আমি রাজনীতিতে এসেছি। আমি দুর্নীতি করি না, আদর্শ ও নৈতিকতার প্রশ্নে আরো সাথে আপোস করবো না। আমার বাবা ছিলেন গণমানুষের নেতা এবং অত্যন্ত প্রিয়। আমিও আমার আচরণ, কর্মকাণ্ডে মানুষের মন জয় করতে চাই। মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়র খালকে বাঁচাতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবস্থা দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ করা হবে। পৌরভবন হবে জনগণের ভবন।
চিশতি বলেন, আমি একটি দল, বিশেষ জোটের ব্যানারে নির্বাচিত হলেও সকল দল-মত নির্বিশেষে পৌর এলাকার উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে কাজ করবো।
অত্যন্ত মেধাবী ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পন্ন এই তরুণ জনপ্রতিনিধি বাংলানিউজকে বলেন, আমি কৃতজ্ঞ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে, যিনি সৎ ও মেধাবীদের নেতৃত্বে আনতে চান। তার অনুপ্রেরণাতেই এ পর্যন্ত এসেছি।
সর্বপরি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় শতভাগ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম দেখে অভিভূত হয়েছি। সরকারকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৫
জেডএম/