ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাক্ষাৎকার

বরগুনাকে মডেল পৌরসভা করবেন শাহাদাত

সুমন সিকদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৬
বরগুনাকে মডেল পৌরসভা করবেন শাহাদাত ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরগুনা: জনগণ আমাকে ভালোবাসে। তাদের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় আমি আবারও মেয়র নির্বাচিত হতে পেরেছি।

তাদের ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে আগামী পাঁচটি বছর পৌরবাসীর সুখে দুঃখে তাদের পাশে থেকে কাজ করে যেতে চাই। সেই সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সব মানুষের মতামতের ভিত্তিতে বরগুনা পৌরসভাকে একটি আধুনিক মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়তে চাই।

সম্প্রতি বরগুনা পৌরসভায় দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত মেয়র শাহাদাত হোসেন তার নিজস্ব বাসভবনে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

মো. শাহাদাত হোসেন ১৯৬২ সালের ২৫ মে খুলনার টুটপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশর কেটেছে পাথরঘাটা ও বরগুনায়। বরগুনা হিসাবরক্ষণ অফিসের সিজিএ অডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও চাকরির সুবাদে ঘুরেছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।

তবে, স্বাধীনচেতা মন তাকে আটকে রাখতে পারেনি চাকরির ছোট্ট গণ্ডিতে। চাকরি ছেড়ে মন দিয়েছিলেন ব্যবসায়। সেখানে তিনি রেখেছেন দক্ষতার স্বাক্ষর।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আল মামুন এন্টারপ্রাইজ লি. নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্ব মহিমায় সেখানেও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। ছাত্রজীবন থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রেখেছেন নিজেকে। সর্বশেষ বরগুনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। পেশায় একজন সফল ব্যবসায়ী, নেশায় সমাজসেবক শাহাদাত।

২০১১ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বরগুনা পৌরসভায় প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় দলের কাছে মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

শাহাদাত বলেন, ২০ বছর ধরে নির্বাচনী পরিকল্পনা করছি। সাধারণ মানুষের হৃদয়ের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমতে কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পেরেছি। যার প্রমাণ এই নির্বাচন। আমার সব ভোটার কর্মী হিসেবে কাজ করেছে। যে কারণে আবারও মেয়র হতে পেরেছি।

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনকে গণতন্ত্রের চর্চা উল্লেখ তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে বলতে চাই মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় জনমতের ওপর ভিত্তি করে সঠিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে আরও ভালো হবে।

নির্বাচনের আগে বরগুনাবাসীর কাছে একটি মডেল পৌরসভা করার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, বরগুনায় শিশুদের বিনোদনের কোনো স্থান নেই। তাই একটি শিশু পার্ক নির্মাণ, পানির সমস্যা সমাধানে ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ, বরগুনায় একটি অত্যাধুনিক নিউ মার্কেট, অত্যাধুনিক পৌরভবন, জিমনেশিয়াম, পৌর অডিটোরিয়াম, নারীদের জন্য আলাদা মার্কেট, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্রেস্ট ফিডিং জোন, পরিবেশবান্ধব লাইট ফিটিং, পৌর শহরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াইফাই জোন তৈরি করে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবো। আর এসব প্রতিশ্রুতি সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবো।

নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী উন্নয়নের কোনো তারতম্য সৃষ্টি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোথাও পরাজিত হইনি, সব ভোট কেন্দ্রে প্রথম হয়েছি।

আর যদি আমি কোনো ভোট কেন্দ্রে কম ভোট পেতাম, তাহলেও সেখানে উন্নয়নে কোনো কার্পণ্য করতাম না। সবার মতামতের ভিত্তিতে সমহারে উন্নয়ন পৌরসভার সব ওয়ার্ডে ছড়িয়ে দেবো।

এলাকার সংসদ সদস্যের চেয়ে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন সংসদ সদস্য সংসদে আইন পাস করে থাকেন। এছাড়াও এলাকার বৃহৎ স্বার্থে তিনি কাজ করেন। তাই তাকে দেশের ও এলাকার স্বার্থে অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। কিন্তু একজন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি সরাসরি জনগণের কাছে যাওয়ার সুযোগ পায়। জনগণ স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির কাছে প্রথমে যায়। তাই স্থানীয় সরকারের সব প্রতিনিধির জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা কিছুটা হলেও বেশি।

মেয়র শাহাদাত হোসেনের কাছে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জনগণের প্রতিনিধি, জনগণ চাইলে আবারও নির্বাচনে অংশ নেবো। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী আমি আমার আগামী নির্বাচনী পরিকল্পনা করবো।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচন করায় দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জনগণের ভালোবাসার কারণে মেয়র প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছি। রাজনৈতিকভাবে আমি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আস্থাশীল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। আমি আওয়ামী লীগে আছি, আওয়ামী লীগেই থাকতে চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করতে চাই।

১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বরগুনা পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় ১৯৯৯ সালে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এ পৌরসভায় ভোটার রয়েছেন ২২ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ২৬৮ জন,  নারী ১০ হাজার ৭৭০ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৬
পিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।