ফেনী: বিগত দিনের উন্নয়ন এবং সেবায় মুগ্ধ হয়ে বিপুল ভোটে আমাকে আবার নির্বাচিত করেছেন পৌরবাসী, তাই আমি ‘মেয়র নয় পৌরবাসীর জন্য একজন সেবক হতে চাই’।
মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন সেবা পাওয়ার জন্য, যথাযথভাবে পৌর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য, তাই দলমতের উর্ধ্বে থেকে নাগরিক সেবাই হবে মূখ্য উদ্দেশ্য।
রোববার (০৩ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলানিউজের কাছে নিজের এসব ইচ্ছা প্রকাশ করেন ফেনীর দাগনভূঞাঁ পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খান। দীর্ঘ সাক্ষাতকালে উঠে আসে এ পৌরসভা নিয়ে আরো নানা বিষয়।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে ১১ হাজার ৫৮১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের সাইফুর রহমান স্বপন পেয়েছেন ২ হাজার ৩৪৬ ভোট।
বাংলানিউজ: প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন, এ নির্বাচনে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ?
ওমর ফারুক খান: প্রথমবারের মত স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচনে দেখেছি প্রতীক নয়, মানুষ সেবার মানের দিকে তাকিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বিগত দিনে পৌরবাসীর সেবা করায় ধানের শীষ প্রতীকের অনেক ভোট নৌকার পাল্লায় এসে পড়েছে, তাই বলবো প্রতীকের পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজও গুরুত্বপূর্ণ। সেবার মান বৃদ্ধির ফলে নৌকা প্রতীকও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। কমে যাবে অন্য প্রতীকের ভোট। যা জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে।
বাংলানিউজ: কেমন পৌরসভা দেখতে চান?
ওমর ফারুক খান: আমি চাইব, মফঃস্বল শহর হলেও এ পৌরসভাটি হবে একটি অত্যাধুনিক শহর। দেশের অন্য যে কোনো পৌরসভার রোল মডেল। আমরা ইতোমধ্যে পৌরসভাকে আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন চিন্তা করেছি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মানুষ একটি সমৃদ্ধ পৌর শহর পাবে।
বাংলানিউজ: এ লক্ষ্যে আপনার কি কি পরিকল্পনা রয়েছে?
ওমর ফারুক খান: এ পৌরসভাকে আধুনিক পৌরসভা করার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছি। পৌর উন্নয়নের জন্য কিছু কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। পরিকল্পনা রয়েছে পৌর শহরে একটি শিশু পার্ক, ফায়ার স্টেশন, দাদনার খাল খননসহ বেশ কিছু জন গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করা।
শহরে যানজট নিরসনে সড়কে ডিভাইডার নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন, সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যাপক কাজ পরিকল্পনায় রয়েছে।
বাংলানিউজ: যেসব এলাকায় কম ভোট পেয়েছেন, সেগুলো সর্ম্পকে কি পরিকল্পনা ?
ওমর ফারুক খান: বিএনপি নেতা আবদুল আওয়াল মিন্টুর বাড়ির পাশের কেন্দ্র আলাইয়ারপুর এলাকায় আমি কম ভোট পেয়েছি। বিগত নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে ভোট পেয়েছিলাম ১১৩ ভোট, এবার তা বেড়ে এসেছে ৮৯৬ ভোটে, এটি হয়েছে অব্যাহত সেবা আর উন্নয়নের কারণেই। এ ওয়ার্ডটি নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে, সড়ক বাতি, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ এ ওয়ার্ডে নাগরিক মান আরো উন্নত করা হবে।
বাংলানিউজ: ড্রেনেজ, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন নিয়ে আপনার পৌরসভা কেমন ভূমিকা রাখবে ?
ওমর ফারুক খান: এ পৌরসভায় বসবাসরত প্রত্যেকটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি এবং যাবো। স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নতুন করে পরিকল্পনায় রয়েছে। লক্ষ্য থাকবে শতভাগ স্যানিটেশন। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য রয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা, যাতে শীত-বর্ষা সব সময় পানিবন্দি মুক্ত থাকে শহর।
বাংলানিউজ : আপনার পৌরভবন থেকে সাধারণ মানুষ কেমন নাগরিক সুবিধা পাবে বলে আপনি মনে করেন?
ওমর ফারুক খান: সাধারণ মানুষ তাদের কল্যাণের জন্যই ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জন প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। এসব মানুষের ভোটে আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। তাদের কল্যাণের জন্যই আমি কাজ করে যাবো। নাগরিক সেবা প্রদান করতে আমার কার্যালয়ের সব কর্মকর্তা কর্মচারী সবসময় আন্তরিক রয়েছেন। তারা পৌরবাসীকে সেবা দিতে দিনরাত কাজ করে যাবেন।
বাংলানিউজ : কত দিন আগ থেকে মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন?
ওমর ফারুক খান: ২০০০ সালে দাগণভূঞাঁ পৌরসভা স্থাপিত হয়েছে সেই থেকে এ পৌরসভার মেয়র হওয়ার স্বপ্ন লালন করেছি। যা ২০১১ সালে বাস্তবায়ন হয়, জনগণ সেবায় অনুপ্রাণিত হয়ে আবার আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
বাংলানিউজ : পরের নির্বাচনে লড়বেন কিনা ?
ওমর ফারুক খান: আমি দলকে ভালোবাসি, দলের ঐক্যকে ভালোবাসি, দল যদি আমাকে পরবর্তী নির্বাচনেও মনোনয়ন দেয়, তাহলে অবশ্যই আমি দলের হয়ে লড়বো।
বাংলানিউজ: সংসদ সদস্যদের চাইতে স্থানীয় জন-প্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা কম না বেশি?
ওমর ফারুক খান: সংসদ সদস্যদের চাইতে, স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা অবশ্যই বেশি। কারণ সংসদ সদস্যরা নাগরিকদের পাশে সব সময় থাকতে পারেন না। কিন্তু স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা সব-সময় জনগণের পাশে থাকেন। তবে উন্নয়নের জন্য উভয়ের সমন্বয়ই খুব জরুরি।
বাংলানিউজ: সময় দিয়ে কথা বলা এবং আন্তরিকতার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ওমর ফারুক খান: দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম ‘বাংলানিউজ’কেও অনেক ধন্যবাদ, আশা করছি বাংলানিউজ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
নোয়খালী জেলার সীমান্তবর্তী ফেনীর দাগনভূঞাঁ উপজেলার ২৪.৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় রয়েছে মোট ৯টি ওয়ার্ড। ২০০০ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ২০১১ সালে এটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত হয়। এ পৌরসভায় প্রথম মেয়র বিএনপি নেতা আবদুল আওয়াল মিণ্টুর ভাই আকবর হোসেন।
যেহেতু পুরো পরিবার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সে কারণে ওমর ফারুক স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তার রাজনৈতিক জীবন শুরু। তখন তিনি চট্টগ্রাম হালি শহর এলাকার গরীব উন নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ১৯৯১ সালে নিজ জেলায় ফিরে এসে দাগনভূঞাঁয় ভর্তি হন ফাজিলের ঘাট উচ্ছ বিদ্যালয়ে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি স্কুলে সভাপতি, পরে ওই অঞ্চলের সভাপতি হন।
১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের আমলে প্রথম কারাবরণ করেন তিনি। এরপর ’৯৩, ’৯৪ ও ’৯৫ সালে বেশ কয়েকবার বিএনপির দায়ের করা রাজনৈতিক মামলায় কারাবরণ করেন। ১৯৯৫ সালে দাগনভূঞাঁ ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজের জিএস নির্বাচিত হন। এরপর একই কলেজের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
১৯৯৭ সালে হন থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক, ২০০০ সালে হন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এরপর ২০০১-০৬ বিএনপি সরকারের নির্যাতন মামলা হামলার ভয়ে এলাকা ছাড়া থাকেন তিনি।
এরপর ২০০৬ সালে হন পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য। ২০১১ সালে নির্বাচিত হন দাগনভুঞাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, একই বছর দলের মনোনয়ন পেয়ে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর আবার তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেন।
বাবা-ওসমান গনি, একজন মুক্তিযোদ্ধা। মা-মনজুরা বেগম দীর্ঘদিন ছিলেন উপজেলা মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
আরএ/