ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাক্ষাৎকার

সার্বজনীন পৌরসভা গড়তে চান গৌরীপুরের রফিকুল

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
সার্বজনীন পৌরসভা গড়তে চান গৌরীপুরের রফিকুল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গৌরীপুর, ময়মনসিংহ থেকে ফিরে: গৌরীপুর পৌর ভবনকে ‘সার্বজনীন’ হিসেবে গড়তে চান নব-নির্বাচিত মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। দলমত নির্বিশেষে স্থানীয় পৌরবাসী তাকে ভোট দেয়ায় তাদের নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতেই নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তিনি।



প্রতিটি ওয়ার্ডে চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করে একটি জনকল্যাণমূলক, আধুনিক ও আলোকিত পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করতে চান। পরিকল্পিত উপায়ে প্রাচীন এ পৌর শহরের চেহারা বদলে দেয়ারও দৃঢ় প্রত্যয় উচ্চারিত হয় তার কণ্ঠে।

নৌকা প্রতীক নিয়ে বড় ভোটের ব্যবধানে নিজ দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার মেয়র পদে নিজের গলায় বিজয়মাল্য পরা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে শনিবার (০২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শহরের নয়াপাড়া এলাকার নিজ বাসায় আলাপ হয় বাংলানিউজের।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে রফিকুল পেয়েছেন ৭ হাজার ১১৯ ভোট। আর তার নিকটতম দু’ প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম হবি (নারিকেল গাছ) ৪ হাজার ১৪৮ ভোট ও বিএনপি’র সুজিত কুমার দাস (ধানের শীষ) পেয়েছেন সাকুল্যে ২ হাজার ৭২৬ ভোট।

ময়মনসিংহের রাজনীতি সচেতন উপজেলা গৌরীপুর। জমিদারী পরগনার ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এলাকা এটি। ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন এ পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টিকিটে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত মেয়র রফিকুল ইসলাম অসীম দৃঢ়তায় কথা বলেন সোজা-সাপ্টা। কথার সঙ্গে কাজের মিল রেখে চলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

২০১১ সালের নির্বাচনে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হবার পর সমস্যা সঙ্কুল পৌরসভাকে সুপরিকল্পিত শহরে উন্নীত করতে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেন। সেই সময় থেকেই নিজের পদ ধরে রাখতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে থাকেন।

সব সময় পৌরবাসীর সুখ-দু:খের সাথী ছিলাম পৌর পিতা হিসেবে নয়, একজন সেবক হিসেবে, বলছিলেন সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। তার মতে, ভোটাররা আমাকে আস্থায় নিয়েছেন। কোন ভয়ভীতি প্রদর্শন না করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমার কর্মীরা তাদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন।

পৌর এলাকায় বিএনপি’র ভোট বেশি হলেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতেই দলমত নির্বিশেষে ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়েছেন, যোগ করেন তিনি।

সৈয়দ রফিকুলের ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়ি জাতীয় ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৮৭-৮৮ সালে গৌরীপুর কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন তিনি। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে নেন। ২০১৫ সালে তিনি গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি’র দায়িত্ব পান।
Gouripur_mayor_rafiq
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেন। এজন্য নিজেকে পরম সৌভাগ্যবানও ভাবেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছেন। দলীয় প্রতীক হওয়ায় ভোটযুদ্ধে জেতা অনেকটাই সহজ হয়েছে বলেও মত তার।

তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তি ইমেজকেই বড় ফ্যাক্টর মানেন রফিকুল। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, চিরাচরিত এ শ্লোগানের সঙ্গেও দ্বিমত পোষণও করেন।

শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য একটি শিশু পার্ক, উন্মুক্ত খেলার মাঠ, পৌর পাঠাগার, আধুনিক পৌর সুপার মার্কেট ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণসহ হাট-বাজার উন্নয়ন ছিল নৌকা প্রতীকের এ প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহারের অগ্রভাগে।

পৌরসভার শেষ সীমানা পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন এবং সকল ওয়ার্ডের চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করা হবে বলেও জানান নব-নির্বাচিত মেয়র রফিকুল ইসলাম।  

এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি পয়:নিষ্কাশন ও পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ঝলমল সিনেমা হল মোড় থেকে নতুন বাজার হয়ে উত্তরে ভালুকা খাল, দক্ষিণ বালুয়া খাল, পূর্বে কোনাপাড়া বিল পর্যন্ত অত্যাধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন করার পরিকল্পনার কথাও জানান।

যে এলাকায় কম ভোট পেয়েছেন সেখানে আপনার উন্নয়ন কৌশল কী হবে, এমন উত্তরে সৈয়দ রফিক বলেন, এ ধরনের মানসিকতা নেই আমার। পৌরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডেই সুষম উন্নয়ন করবো।

সংসদ সদস্যের চেয়ে স্থানীয় সরকার জপ্রতিনিধির দায়বদ্ধতা অনেক বেশি বলেই মনে করেন তিনি। তার ভাষ্যে, স্থানীয় পৌরবাসীর নিত্যদিনই তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য মেয়রকে প্রয়োজন হয়। তাকে নি:সঙ্কোচে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারেন, কিন্তু একজন এমপিকে এটা বলা কঠিন।

পরের নির্বাচন নিয়ে এখনই চিন্তার সময় আসেনি বলেও জানান সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আপাতত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও ভোটারদের আস্থা এবং বিশ্বাসের মর্যাদা দেয়াটাই হবে আমার প্রধান কাজ।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।