ফেনী: ফেনী পৌরসভা। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শ্রেণির পৌরসভা।
তবে, এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হাজী আলাউদ্দিন। পরপর টানা দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এজন্য মেয়রের দায়িত্বকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন। তাই, এ পৌরসভাকে তিনি নতুন করে সাজাতে চান।
বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে এমন ইচ্ছার কথা জানান ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন।
বাংলানিউজের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে এ পৌরসভা নিয়ে তার পরিকল্পনার আরও নানা দিক। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো:
বাংলানিউজ : ফেনীকে নান্দনিক শহরে পরিণত করতে আপনার কি পরিকল্পনা রয়েছে?
হাজী আলাউদ্দিন : দ্রুত অগ্রসরমান জেলা ফেনী। অর্থনীতি, শিল্প-সাহিত্য থেকে শুরু করে সব দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে এ জেলা। আর তাই জেলা শহর হিসেবে ফেনী পৌরসভাকে নান্দনিক রুপে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। পৌরসভার সামনের অংশকে সাজানো হয়েছে নতুন রুপে। শহরের ট্রাংক রোডে দোয়েল, খেজুর চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য রয়েছে। চলমান রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্প।
বাংলানিউজ: যানজট নিরসনে কি প্রদক্ষেপ থাকবে?
হাজী আলাউদ্দিন: ফেনী শহরে যানজট নিরসনে সড়কে ডিভাইডার নির্মাণ, অনুমোদনহীন টমটম চলাচল, রিকশার নিয়ন্ত্রণসহ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যাপারে পরিকল্পনা হাতে রয়েছে। পৌরসভাকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলতে কলেজ রোডের রেলক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যেই মহিপালে ৬ লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
বাংলানিউজ: উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার আপনার ভূমিকা কেমন হবে?
হাজী আলাউদ্দিন: মরহুম আবু বক্কর, নুরুল আফসার এবং নিজাম হাজারীসহ সব মেয়রই এ পৌরসভার উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন। জনগণ তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো উন্নয়নের সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের সুচিন্তিত সব মতামত সানন্দে গ্রহণ করা হবে।
বাংলানিউজ: এ শহর নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি ?
হাজী আলাউদ্দিন: আমি চাই ফেনী একটি অত্যাধুনিক শহর হিসেবে বাংলাদেশে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করুক।
বাংলানিউজ: নাগরিকের মৌলিক চাহিদা শিক্ষাক্ষেত্রে আপনার কি পরিকল্পনা?
হাজী আলাউদ্দিন: নাগরিকের মৌলিক চাহিদা শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষা বিস্তারে আমাদেরও নানা পরিকল্পনা রয়েছে। ফেনী পৌরসভা শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে আসছে। পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে বেশ কয়েকটি স্কুল, মাদরাসা ও এতিমখানা পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়াও পৌরসভাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেনী পৌরসভা নিয়মিত সহযোগিতা দিয়ে আসছে। দুস্থ পথ শিশুদের শিক্ষার জন্য পরিকল্পনা হাতে রয়েছে এ পৌরসভার।
বাংলানিউজ: সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরে জমে যায় হাঁটু পানি, শহরবাসীকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি, এ জলজট নিরসনে কি প্রদক্ষেপ নেবেন?
হাজী আলাউদ্দিন: এ অবস্থা নিরসনে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে পৌরসভার। এ জন্য পৌরসভার দখল হওয়া খালগুলো মুক্তকরণ, খনন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করা যাবে। নাগরিক ভোগান্তি নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে পৌর কর্তৃপক্ষ।
বাংলানিউজ: স্বাস্থ্য ও সেনিটেশনের জন্য কি পরিকল্পনা রয়েছে?
হাজী আলাউদ্দিন: এখানে বসবাসরত প্রত্যেকটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ফেনী পৌরসভা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কাজ করছে। দুস্থ ও অসহায় মানুষের চিকিৎসা প্রদানে সহযোগিতা, বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করে আসছে। এছাড়াও শতভাগ সেনিটেশনের লক্ষে ফেনী পৌরসভা নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।
বাংলানিউজ: পৌরভবনে এসে জনগণ কেমন সেবা পাবে?
হাজী আলাউদ্দিন: ‘মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন এলাকার উন্নয়ন করার জন্য, তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য। যথাযথভাবে পৌর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য। আমাকে তাই করতে হবে। দল নয়, মানুষই সব ক্ষমতার উৎস। তাই মানুষের জন্য কাজ করতে চাই’। আর সেজন্যই এ পৌরভবনে এসে সর্বোচ্চ সেবা পাবে সাধারণ নাগরিকরা। আমরা তাদের শাসক নই,সেবক হতে চাই।
বাংলানিউজ: প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন,এ নির্বাচনে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ?
হাজী আলাউদ্দিন: প্রথম বারের মতো স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে সব সময় প্রতীকের চেয়েও সেবার মান ও ব্যক্তি ইমেজকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে ভোটাররা। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কৌশলে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় নির্বাচনেও ভোটাররা নৌকায় ভোট দেবে। এ নির্বাচনে দেখেছি প্রতীক নয়, মানুষ সেবার মানের দিকে তাকিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। বিগত দিনে পৌরবাসীর সেবা করায় ধানের শীষ প্রতীকের অনেক ভোট নৌকায় পড়েছে।
বাংলানিউজ : কত দিন আগ থেকে মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন?
হাজী আলাউদ্দিন: আমি কখনও মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। তবে, সবসময় জনগণের সুখে দুঃখে কাছে থাকার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ চেয়েছে তাই হয়েছি। আল্লাহ আমাকে দিয়ে হয়তো নাগরিকদের সেবা করাবেন। তাই তিনি আমাকে মেয়র হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
বাংলানিউজ : সংসদ সদস্যদের চাইতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা কম, না বেশি?
হাজী আলাউদ্দিন: সংসদ সদস্যদের চাইতে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা কোনো অংশেই কম নয়। সংসদ সদস্যরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে উন্নয়নের যে বাজেট আনেন, তার সঙ্গে স্থানীয় প্রতিনিধির সমন্বয় করতে পারলে সমান তালে এগিয়ে যাবে এ জনপদ। মিলে মিশে কাজ করলে জনগণ পাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা।
বাংলানিউজ : পরের নির্বাচনে লড়বেন কিনা ?
হাজী আলাউদ্দিন: পদের প্রতি আমার কখনও লোভ ছিল না। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর কৃপায় দুই বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমি দলকে ভালোবাসি। দলের ঐক্যকে ভালোবাসি। দল এবং নেতা নিজাম হাজারী যদি আমাকে আবার মনোনয়ন দেন। তাহলে অবশ্যই আমি পরবর্তী নির্বাচনে দলের হয়ে লড়বো।
রাজনীতি ও সামাজিক সম্পৃক্ততায় হাজী আলাউদ্দিনঃ
১৯৮৫ সালের পর সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের জনদল দিয়ে রাজনীতিতে পথচলা শুরু। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি হলে যুক্ত হন তাতে। ১৯৮৭ সালে দায়িত্ব পালন করেন ফেনী জেলা ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদকের। ১৯৮৮ সালে হন জেলা যুব সমাজের সাধারণ সম্পাদক। একই বছর হন এ সংগঠনের সভাপতি। এরপর ২০০৭ সালে হন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব । সর্বশেষ গেল বছরের ১৩ নভেম্বর হাজী আলাউদ্দিন জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
হাজী আলাউদ্দিন ব্যবসা ক্ষেত্রেও সফল। তিনি গড়ে তুলেছেন ফেনীর সর্ববৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্টার লাইন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। যা আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা দেশে। দেশের পরিবহন খাতে ঘটিয়েছে বিপ্লব।
২০০৫-০৮ অর্থ বছরে টানা দুইবার ছিলেন ফেনী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। এর আগে ২০০৩-০৫ পর্যন্ত ছিলেন সহ-সভাপতি। এছাড়া ঢাকার ফেনী সমিতির ছিলেন সহ-সভাপতি, ছিলেন এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটির সহ-সভাপতি। উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন দৈনিক স্টার লাইন ও সাপ্তাহিক তারা পত্রিকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
পিসি/জেডএম