ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাক্ষাৎকার

মেয়রের ইন্টারভিউ

নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন পৌরসভা গড়তে চান লোকমান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন পৌরসভা গড়তে চান লোকমান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: আমাদের কিছু লক্ষ্য এবং স্বপ্ন থাকে, যদি প্রতিনিধিত্ব করা না যায়, তবে সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আর জনগণের বাইরে থেকে রাজনীতি করে সব কাজ করাও সম্ভব নয়।



মানুষ আমাকে ভালোবাসে, ভালো জানে তাই এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তারা আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। ভবিষ্যতের বিষয়ে আগাম কিছু বলা ঠিক না, কতো মানুষ বলে আপনি এটা হবেন সেটা হবেন। আমার এতো দরকার নাই, আমি যে অবস্থানে আছি সে অবস্থান নিয়েই চিন্তা করি। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতেই বলা ভালো।

পৌরসভাকে নিয়ে আমি না সবাই স্বপ্ন দেখেন। প্রথমবার যখন দায়িত্ব পেয়েছি তখন থেকেই কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছি, এবার আরো ভালো কাজ করার চেষ্টা করবো। তারপরও আমরা অনেকে বলি আধুনিক, অনেকে বলে ডিজিটাল আবার আলোকিত। কিন্তু আমি বলতে চাই আধুনিক হোক আর ডিজিটাল হোক সবধরনের নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন একটি পৌরসভা গড়তে চাই।

সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বলেন বাকেরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. লোকমান হোসেন ডাকুয়া।

তিনি বলেন, আমরা তো কতো কিছু বলি তিন তলা রাস্তা দেবো পাঁচ তলা বাড়ি দেবো কিন্তু আসলে এটা ঠিক না, নাগরিক সুবিধা বলতে যেটা দরকার সেটাই দিতে আমি চেষ্টা করবো।

মেয়র বলেন, চলতি মাস থেকে আমি যে অনারিয়ামটা পাবো অর্থাৎ ১৫ হাজার টাকা এইটা দিয়ে পৌর এলাকার স্কুলের শিশুদের জন্য কাজ করবো। এর একটি অংশ আমি এতিমখানা/ হেজবুতখানায় দিয়ে থাকি। বাকি অংশ স্কুলের শিশুদের মাঝে ব্যয় করবো।

সার্বিক কারণে আমার অনেক দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, সেক্ষেত্রে জাপানে যা দেখেছি তা আমার ভালো লেগেছে।

বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করা, সময়মতো স্কুলে যাওয়া, বিদ্যুৎ অপচয় না করা, বিদ্যালয় অঙ্গণ ও নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখাসহ বিভিন্ন নিয়মানুবর্তিতামূলক কাজে শিশুদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ চিন্তা ভাবনা অনেক আগে থেকেই আমার নেওয়া, কিন্তু নির্বাচনের কারণে পারিনি তবে চলতি মাস থেকেই এ কাজগুলো শুরু করবো।

এক্ষেত্রে ঝুড়িসহ যাবতীয় জিনিসপত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমি সরবরাহ করে দেবো। এর পাশাপাশি পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা হবে। যে ভালো করবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে, তাতে শিশুরা অনুপ্রাণিত হবে।

শিশুদের যদি নৈতিকভাবে গড়ে তোলা যায়, তাদের মাথায় যদি একবার ঢুকিয়ে দেওয়া যায় সে কিভাবে চলাফেরা করবে, দেশ ও দশের উপকারে আসবে তাহলে ভবিষ্যতের জন্য অনেক কাজই হয়তো আমাদের করতে হবে না।

লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলেন, স্কুল লাইফ থেকেই আমি রাজনীতি করি। সব সময়ই মাদকের বিরুদ্ধে ছিলাম। আমি পান, সিগারেট, চা খাই না। কর্মীরা আমাকে দেখে যেনো অনুসরণ করে, আমি সে চেষ্টা করি।

কিন্তু মাদক এখন এমন ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে নির্বাচনের সময় আমি কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে ছিলাম। তারা যাতে নির্বাচিত না হতে পারে। তখন চিন্তা করেছি তারা নির্বাচিত হলে দেখা যাবে যে এখানে মাদকের মহারাজ্য গড়ে উঠেছে। একজন মাদকসেবী বা ব্যবসায়ী তারা নিজেকে ধ্বংস করে, পরিবারকে ধ্বংস করে, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে।

মেয়র বলেন, আমি সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার ছিলাম এখনো থাকবো। দুই/তিনটা বিষয়ে আমি কোনদিন থানায় সুপারিশ করিনি। সত্য হোক-মিথ্যা হোক মাদক নিয়ে কেউ আটক হলে আমি তাদের ব্যাপারে কখনো সুপারিশ করি নাই, পাশাপাশি নারী ঘটিত বিষয়সহ চুরি-ডাকাতির বিষয়েও না।

মেয়র বলেন, আগের মাস্টার প্লানকে ফলো করেই আমি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমাদের যে খালগুলো বেদখল হচ্ছে সেখানে রিটার্নিং ওয়াল এবং পাশ থেকে যদি রাস্তা তৈরি করি তাহলে মানুষের চলাচলের রাস্তারও হোল আমাদের খালও রক্ষা হলো।

তিনি বলেন, বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পাশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য  ছোট ছোট ঘর করে দিয়েছি এবং তাদের ২০ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা আস্তে আস্তে টাকা পরিশোধ করতে পারে। আর এ টাকার পরিমাণ শুধু ঘরটি নির্মাণে যা ব্যয় হয়েছে তাই। খামখেয়ালি ভাবে একটি কাজ করেছি তবু গরীব মানুষ তো উপকৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন আমরা ৬ নং ওয়ার্ডের চৌমাথায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে মার্কেটের কাজ শুরু করেছি। ওখানেও বলা হয়েছে যারা আগে থেকে আছেন তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে ফরমালিটি মানতে হবে। অনেকেই দোকান দখল নিয়ে টাকা দেয়না। আমি চেষ্টা করলে দোকানের ব্যবস্থা করে দিতে পারি কিন্ত‍ু নিয়ম তো মানতে হবে। সেটা অনেকেই বুঝতে চায়না।

মেয়র বলেন, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পার্ক নির্মাণের জন্য জায়গা খুঁজছি। ছয় একর জায়গা দখল করে বাড়ি, বাজার মানুষ থাকছেন। আমি বলেছিলাম দুই/তিন একর জায়গা ছেড়ে দিতে। কিন্তু কোন খবর নেই। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করেছে। ভালোভাবে দোকান-পাট জমজমাট করতে হলেও ওখানে ভালো কিছু করতে হবে। সেখানে একটি শিশুপার্ক করলে মানুষের যোগাযোগ বাড়বে, লোকজনের আনাগোনাও বাড়বে।

মেয়র বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে বাকেরগঞ্জ পৌরসভা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে, ইতোমধ্যে পানির বিল, ট্যাক্সসহ প্রায় সব কাজ অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়। ভবিষ্যতে এগুলোর পুরো প্রক্রিয়াই  অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদন করা হবে। আগে আমাদের লোক গিয়ে টাকা নিয়ে আসতো। আর এখন বিল দিয়ে আসে গ্রাহকরা গিয়ে ব্যাংকে জমা দিয়ে আসেন।

ভবিষ্যতে এগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। তবে সময় লাগবে। বাকেরগঞ্জ পৌরসভার কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে কিছু কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ যাবতীয় জিনিস সরবরাহ করার চেষ্টা করছি।

মেয়র বলেন, আগে মনে করতাম নেতারা এসে পৌরসভাকে উন্নীত করেছেন। কিন্তু আমি মেয়র হওয়ার পর বুঝলাম সবই ভাওতাবাজি। আমি প্রথমবার দায়িত্ব নেওয়ার পর পৌরসভাকে খ গ্রেডে  উন্নীত করেছি। পৌরসভাকে খ শ্রেণীতে উন্নীত করতে হলে প্রতিবছর ৬০ লাখ টাকা আয় দেখাতে হবে। আর প্রথম শ্রণীতে উন্নীত করতে হলে পর পর তিন বছর কোটি টাকার উপরে আয় দেখাতে হবে।

সরকার একটা নিয়ম করছে পাঁচ বছর পর পর ট্যাক্স বাড়াতে হবে। আমি এসে তিন বছর এর মাথায় একবার পেয়েছিলাম। প্রথমে যারা মেয়র হিসেবে কাজ শুরু করেছেন তারা এমন জায়গায় ট্যাক্সটা রেখেছেন বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কম। আসলে ট্যাক্সের উপরই চলে পৌরসভা।

তিনি বলেন, ১২ বছর পর বাকেরগঞ্জের গ্রাহকদের জন্য পানির পাম্প চালু করা হয় তাও আমার আমলে। তবে এখন যে পানি সরবরাহ করা হয় তাও চাহিদা পুরণ করেনা। তাই নতুন একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে যেখানে ২২ কিলোমিটার এলাক‍ার জন্য তিনটা টিউবওয়েল থাকবে। এই কাজের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। এটা হলে অনেক কাজ এগিয়ে যাবে।

মেয়র বলেন, পৌর শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে জলাবদ্ধতা হবে না। আর রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। তবে বজ্র ব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা নিয়ে একটি সিঅ্যান্ডবির নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হয়। একটি কোম্পানি চুক্তি করেছে তারা বজ্য নিয়ে সার তৈরি করবে। তবে সেটা সময়ের ব্যাপার।

যে সব প্রকল্প হাতে নিয়েছি সে কাজ যাতে সঠিক সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারি তাই পৌরসভাতেই বেশি সময় দেই। সংস্কৃতি ও খেলাধুলা অঙ্গণে আমি সর্বদা ছিলাম আছি।

বাকেরগঞ্জের রুনশী এলাকার মৃত ফজলুল করীম ডাকুয়ার সাত ছেলে ও ছয় মেয়ে সন্তানের মধ্যে (ছেলেদের মধ্যে) তিন নম্বর হলেন লোকমান হোসেন ডাকুয়ার। ১৯৬৮ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

স্কুল জীবন (১৯৮২ সাল) থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন লোকমান হোসেন ডাকুয়া।

১৯৮৬ সালে বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক,  ১৯৮৭ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৮৯ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৯০ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন।

১৯৯২ সালে বাকেরগঞ্জ কলেজের নির্বাচিত ভিপি, ১৯৯৭ সালে প্রশাসকের সঙ্গে কিছুদিন সিলেক্টেড কাউন্সিলর, ১৯৯৮ সালে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক, ২০০২ সালের যুবলীগের সভাপতি এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মো. লোকমান হোসেন ডাকুয়া নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে জয়লাভ করেছেন। এ পৌরসভায় চারজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন।

৬.২৫ বর্গ কিলোমিটারের বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ১২ হাজার ৫৫০ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় হাজার ৪০৩ ও নারী ভোটার ছয় হাজার ১৪৭ জন।

মেয়র হিসেবে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন মো. লোকমান হোসেন ডাকুয়া। দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ১৮ ফেব্রুয়ারি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।