ঢাকা: আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’-এর ঢাকা দক্ষিণ জোনের অডিশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির আয়োজনে এই প্রতিযোগিতায় ঢাকা দক্ষিণ জোনের অডিশনে ২০ জন হাফেজ নির্বাচিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ জোনের প্রতিযোগিতায় ৪১ জন হাফেজ নির্বাচিত হয়েছে।
প্রতিযোগিতায় ঢাকা দক্ষিণ জোনের বিভিন্ন জেলা ও থানা থেকে ৮৯০ জন হাফেজ অংশ নেয়। তাদের মধ্যে প্রথম দফায় ৬৮ জন হাফেজকে বাছাই করে ইয়েলো কার্ড দেওয়া হয়। এদের মধ্যে বিশেষ প্রতিবন্ধী কোটায় ২ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফেজ রয়েছে। ওই ৬৮ জন হাফেজ থেকে আবার দ্বিতীয় দফায় ২০ জনকে ইয়েস কার্ড দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় বিশেষ কোটায় ২ জনের মধ্যে একজন ইয়েস কার্ড পেয়েছে।
আগের দিনের বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) অডিশনে ঢাকা উত্তর জোনের বিভিন্ন জেলা ও থানা থেকে আসা ৮২৬ হাফেজ অংশ নেয়। এদের মধ্যে প্রথম দফায় ৬০ জন হাফেজকে বাছাই করে ইয়েলো কার্ড দেওয়া হয়। এরপর বাছাইকৃত ৬০ জন হাফেজ থেকে দ্বিতীয় দফায় ২১ জন হাফেজকে ইয়েস কার্ড দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব গেটে কুরআনের নূরের প্রতিযোগীরা সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রতিযোগীদের রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে শুরু হয় এই আয়োজন।
রাজধানীর কাজলা থেকে অডিশন দিতে এসেছে হাফেজ জামিল আহমেদ। জামিল বাংলানিউজকে বলে, ‘এখানে অডিশন দিতে আসতে পেরে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। এটা তো এখন দেশের সবথেকে বড় প্রতিযোগিতা। এখানে কয়েকজনের সঙ্গে পরিচিত হলাম। এখানে এসেছি মূলত নিজেকে যাচাই করতে। টিকে যাব কি না জানি না। তবে এ পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে বুঝতে পারব আমি কতটুকু পারি। ’
মালিবাগ থেকে এসেছিল মো. ওলি হাসান। ওলি বাংলানিজকে বলে, ‘অনেক আশা নিয়ে এখানে এসেছি। আমার ইচ্ছা আমি জাতীয় পর্যায়ের একজন হাফেজ হব। এসে খুব ভালো লাগছে। অনেকের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছি। প্রস্তুতি ভালো আছে। আশা করি ভালো কিছু হবে। ’
আয়োজকরা জানিয়েছেন, সারা দেশের ১১টি জোন থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ বছরের কোরআনের হাফেজরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা উত্তর জোনের প্রতিযোগিতার অডিশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ দিন সবশেষ ঢাকা দক্ষিণ জোনের প্রতিযোগিতার অডিশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি জোন থেকে মূল্যায়িত সেরা হাফেজরা ইয়েস কার্ড প্রাপ্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় রাউন্ডে অংশগ্রহণ করছে। ইয়েস কার্ড প্রাপ্ত হাফেজদের নিয়ে শিগগিরই শুরু হবে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। দেশ বরণ্যে ইসলামিক স্কলার ও বিজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী এই অডিশন ও পুরো আয়োজনের বিচারকাজ পরিচালনা করছেন।
গতবারের চেয়ে এবারের আয়োজনে দ্বিগুণ সংখ্যক হাফেজের সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানান বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, আমরা গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হাফেজের সাড়া পেয়েছি। যেমন ধরেন আমরা যখন ফরিদপুরে অডিশন করতে যাই তখন এক মাঠে হাফেজদের জায়গা দিতে পারছিলাম না। পুরো মাঠ হাফেজদের দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। এছাড়া গতকাল ও আজ বায়তুল মোকাররম মসজিদের চিত্র দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন কী পরিমাণ সাড়া পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এ বছর আমরা জাতীয় পর্যায়ের আয়োজন শেষে বিশ্বের আরও ২০ থেকে ২৫টি দেশের হাফেজদের নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ২৫টি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টি দেশ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে তাদের হাফেজরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে।
এ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ের প্রথম বিজয়ী পাবে ১০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় বিজয়ী পাবে সাত লাখ টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে পাঁচ লাখ টাকা ও সম্মাননা। চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার দুই লাখ টাকা করে সঙ্গে সম্মাননা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম স্থান অর্জনকারী অন্য তিনজন পাবে এক লাখ টাকা করে আর্থিক পুরস্কার ও সম্মাননা।
এবারও জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীরা পাচ্ছে মা-বাবা, শিক্ষকসহ ওমরাহ পালনের সুযোগ। আর প্রতিযোগিতায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রথম বিজয়ী পাবে ১৫ লাখ টাকা পুরস্কার ও সম্মাননা। দ্বিতীয় বিজয়ী পাবে ১০ লাখ টাকা ও সম্মাননা এবং তৃতীয় বিজয়ী পাবে সাত লাখ টাকা ও সম্মাননা।
এ প্রতিযোগিতায় মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান ও ক্যাপিটাল এফএম। পবিত্র রমজান মাসে ‘কুরআনের-নূর পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’ আয়োজনটি সম্প্রচারিত হবে নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশনে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
ইএসএস/এইচএমএস/এমজেএফ