দুররাহ বিনতে আবি সালামা (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর পোষ্য ও বিশিষ্ট নারী সাহাবি। হাদিস গবেষকরা বলেছেন, দুররাহ (রা.)-এর অপর নাম রুকাইয়া।
উম্মে সালামা (রা.)-এর সঙ্গে তিনি মহানবী (সা.)-এর ঘরে আসেন এবং তার স্নেহ ও সান্নিধ্যে লালিত-পালিত হন। তার পিতা আবদুল আসাদ আল কুরাইশি (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর ফুফাতো ভাই ও দুধভাই।
তিনি ছিলেন নবীজি (সা.) ফুফু বাররাহ বিনতে আবদুল মুত্তালিবের ছেলে। দুররাহ (রা.) নবীজি (সা.)-এর সান্নিধ্যের বরকতে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন, বিশেষত তিনি একজন মুহাদ্দিস, ফকিহ ও সিরাত গবেষক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন দুররাহ (রা.)-এর পিতা আবু সালামা (রা.)।
স্বামীকে হারিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে সীমাহীন অসহায়ত্বের মধ্যে পড়ে যান দুররাহর মা উম্মে সালামা (রা.)। কেননা মদিনায় তার আর কোনো আশ্রয় ছিল না। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তোলেন।
পোষ্য সন্তান হিসেবে তার শিশুকন্যা দুররাহ (রা.)-ও নবীজি (সা.)-এর ঘরে আশ্রয় লাভ করেন।
আল্লামা ইবনে আবদুল বার, ইবনে আসির ও ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) তাকে নবীজি (সা.)-এর সাহাবিদের তালিকাভুক্ত করেছেন। দুররাহ (রা.)-এর তিন ভাই ও দুই বোন ছিল। ভাইয়েরা হলেন সালামা, ওমর ও মুহাম্মদ আর বোনেরা হলেন জয়নব ও উম্মে কুলসুম বিনতে আবি সালামা। তিনি মা-বাবার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন।
দুররাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) ও উম্মে সালমা (রা.)-এর কাছে প্রতিপালিত হন এবং তাদের কাছ থেকে ইলম ও আমলের প্রশিক্ষণ লাভ করেন, যা তাকে জ্ঞান-গুণে সমৃদ্ধ করে। নবীপত্নীর কন্যা ও নবী (সা.)-এর ঘরে লালিত-পালিত হওয়ায় তাকে হাদিসে নববী ও সিরাতে রাসুল (সা.)-এর নির্ভরযোগ্য সূত্র মনে করা হতো।
আবু ওমর (রহ.) বলেন, উম্মে সালামা (রা.)-এর কন্যাদের ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পোষ্যদের মধ্যে দুররাহ (রা.) জীবনী ও ইতিহাস শাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
ইমাম বুখারি (রহ.)-সহ একাধিক মুহাদ্দিস একাধিক সনদে তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ তাকে যুগের শ্রেষ্ঠ ফকিহ (আইনবিদ) নারীদের একজন বলেছেন।
দুররাহ (রা.) যখন পরিণত বয়সে উপনীত হন, তখন কেউ একজন নবীজি (সা.)-এর কাছে তার বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন নবীজি বিস্মিত হয়ে বলেন, যদি আমি উম্মে সালামাকে বিয়ে না করতাম এবং দুররাহ আমার পোষ্য না হতো, তবুও তাকে বিয়ে করা আমার জন্য বৈধ হতো না। কেননা তার বাবা আমার দুধভাই।
সূত্র: আল ইসাবা : ৪/৭৬; উসদুল গাবাহ ও মাউসুয়াতু রুয়াতুল হাদিস
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩
এসএএইচ