সুৎগন্ধির প্রতি প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রচণ্ড অনুরাগ ছিল। মহানবী (সা.) নিজেও ছিলেন সুগন্ধির আকর।
তিনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধির ঝরনা বয়ে যেত। লোকেরা বুঝতে পারত, নবী করিম (সা.) এ রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেছেন।
পাশাপাশি সুগন্ধি ও আতর রাসুল (সা.)-এর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সুগন্ধিপ্রেম নবী-রাসুলদের আদর্শ। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘চারটি বস্তু সব নবীর সুন্নত—আতর, বিয়ে, মেসওয়াক ও লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৪৭৮)
মহানবী (সা.) সুগন্ধির প্রতি খুবই অনুরাগী ছিলেন।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের দুনিয়া থেকে আমার কাছে তিনটি জিনিস অধিক প্রিয়। নারী, সুগন্ধি, আর আমার চক্ষু শীতল হয় নামাজের মাধ্যমে। ’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ৩৯৩৯)
সুগন্ধ ফুলের নির্যাস, মৃগনাভি ইত্যাদির সুরভিত তেল দিয়ে আতর তৈরি করা হয়। মেশক, আম্বরও উত্তম সুগন্ধি।
মহানবী (সা.) মেশক খুব পছন্দ করতেন। হরিণের নাভি থেকে এটা তৈরি করা হয়। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘উত্তম সুগন্ধি হলো মেশক। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯১২)
মেশক, চন্দন ও জাফরানের সুগন্ধি রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, মহানবী (সা.) বৈচিত্র্যময় সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।
আল্লামা ইবনে আবদুল বার (রহ.) ‘তামহিদ’ নামক কিতাবে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জাফরানের সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন। ’
‘আল-কামেল’ নামক গ্রন্থে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সুগন্ধি ছিল মেশক ও চন্দন। ’ মেশক ব্যবহারের হাদিস আয়েশা (রা.) থেকে মুসলিম শরিফেও বর্ণিত হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধ্যমতো অন্য লোকদেরও সুগন্ধি ব্যবহারের আদেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে লোকসমাগমে গেলে, জুমার দিন, ঈদের দিন সুগন্ধি ব্যবহারের বিশেষ তাগিদ রয়েছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জুমার দিন যথাসম্ভব তোমরা সুগন্ধি ব্যবহার করো। ’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ১৩৫৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কেউ সুগন্ধিযুক্ত কোনো বস্তু হাদিয়া দিলে তিনি তা ফেরত দিতেন না। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো সুগন্ধি-আতর ফেরত দিতেন না। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭১৩)
ব্যক্তিগতভাবে হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে যেসব সুগন্ধি থাকত, তার থেকে উত্তম সুগন্ধি হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে লাগিয়ে দিতেন। (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ২৬৪১)
হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রাসুলুল্লাহ (সা.) কী ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, জবাবে তিনি বলেছেন, ‘মেশক ও আম্বরের সুগন্ধি রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবহার করতেন। ’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ৫০২৭)
স্মরণ রাখতে হবে, মহানবী (সা.) পুরুষ ও নারীদের সুগন্ধির মধ্যে পার্থক্য করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পুরুষ এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যার মধ্যে সুবাস থাকবে। কিন্তু কোনো রং থাকবে না। আর নারী এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যার মধ্যে রং থাকবে, কিন্তু সুবাস থাকবে না। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭১১)
তবে নারীদের জন্য ঘরের মধ্যে যেকোনো ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করা বৈধ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৪
জেএইচ