ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

জান্নাতের নেয়ামত অপরিসীম

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪
জান্নাতের নেয়ামত অপরিসীম

জান্নাত। এটি আরবি শব্দ।

অর্থ বাগান বা উদ্যান। প্রচলিত অর্থে জান্নাতকে বেহেশত বলা হয়। ইসলামের পরিভাষায়, পার্থিব জীবনে যে সব মুসলিম আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলবে এবং পরকালীন হিসাবে যার পাপের চেয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে তাদের জন্য আল্লাহ যে সব স্বর্গ প্রস্তুত রেখেছেন; সেগুলোই জান্নাত।  

কোরআনে কারিমে জান্নাতের যেসব নাম বলা হয়েছে সেগুলো হলো- ফিরদাউস (জান্নাতের সর্বচ্চো বাগান), দারুস সালাম (শান্তির নীড়), জান্নাতুল মাওয়া (বসবাসের জান্নাত), দারুল খুলদ (চিরস্থায়ী বাগান), জান্নাতুল আদন (অনন্ত সুখের বাগান), জান্নাতুল আখিরা (আখেরাতের আলয়), জান্নাতুন নাঈম (নেয়ামতপূর্ণ বাগান) ও দারুল মোকামা (অবস্থানের বাড়ি)।
 
কোরআনে কারিম ও হাদিসে জান্নাত প্রসঙ্গে বিস্তারিক বিবরণ রয়েছে। তবে কোরআনে কারিমে সব বিষয়ে জান্নাতের কথা বলা হয়নি। শুধুমাত্র ইসলামের প্রায়োগিক দিকগুলো যে মেনে চলবে তার ব্যাপারে জান্নাতের কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জান্নাতে কী কী থাকবে? সঙ্গী-সাথী কারা হবে? জান্নাতের পোশাক কী হবে? সেখানে কী কী নেয়ামত থাকবে? 

কোরআনে কারিমে বর্ণিত জান্নাতের বিশেষত্বগুলো হচ্ছে- ‘এর নেয়ামত, সুশীতল ছায়া, আপ্যায়ন, পানীয়, সঙ্গী-সাথী, পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিবেশকগণ, সুউচ্চ বহুতলবিশিষ্ট প্রাসাদ, বাগান ও ঝরণা, সব ইচ্ছাপূরণ, জান্নাতিদের প্রতি অভিবাদন ও মোবারকবাদ এবং সবকিছুর ওপরে আল্লাহর সন্তুষ্টি।  

কোরআনে কারিমে জান্নাতকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সেসব সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-

উত্তম আবাস (সূরা আলে ইমরান: ১৪), আল্লাহর রহমতের আশ্রয় (সূরা আলে ইমরান: ১০৭), সম্মান ও মর্যাদার জায়গা (সূরা আন নিসা: ৩১), নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত (সূরা আল মায়িদা: ৬৫), শান্তির আবাস (সূরা আল আনআম: ১২৭), শান্তির ভুবন (সূরা ইউনুস: ২৫), ক্ষমা এবং বিরাট প্রতিদান (সূরা হুদ: ১১), শুভ পরিণাম (সূরা আর রা’দ: ২৯), বাগান ও নির্ঝরিণী (সূরা আল হিজর: ৪৫), বড় ভালো আবাস (সূরা আন নাহল: ৩০), বিরাট প্রতিদান (সূরা বনি ইসরাইল: ৯), ভালো প্রতিদান (সূরা আল কাহফ: ২), ভালো প্রতিদান (সূরা আল কাহফ: ৮৮), সম্মানজনক জীবিকা (সূরা আল হজ: ৫০), নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত (সূরা আল হজ: ৫৬), উৎকৃষ্টতর জিনিস (সূরা আল ফোরকান: ১০), চমৎকার আশ্রয় এবং আবাস (সূরা আল ফোরকান: ৭৬), মাগফিরাত ও সম্মানজনক রিজিক (সূরা সাবা: ৪), মাগফিরাত ও বড় পুরস্কার (সূরা আল ফাতির: ৭), মাগফিরাত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদানে (সূরা ইয়াসিন: ১১), নৈকট্যের মর্যাদা ও উত্তম প্রতিদান (সূরা আস সোয়াদ: ২৫), নৈকট্যের মর্যাদা ও শুভ পরিণাম (সূরা আস সোয়াদ: ৪০), যেমন উত্তম তেমনি চিরস্থায়ী (সূরা আশ শূরা: ৩৬), উত্তম প্রতিদান (সূরা আন নাজম: ৩১), সর্বোত্তম প্রতিদান (সূরা আল হাদিদ: ১১), সর্বোত্তম প্রতিদান (সূরা আল হাদিদ: ১৮), পুরস্কার ও ‘নূর’ (সূরা আল হাদিদ: ১৯), বিরাট প্রতিদান (সূরা আত তাগাবুন: ১৫), বিরাট পুরস্কার (সূরা আল মুলক: ১২), নিয়ামত ভরা জান্নাত (সূলা আল কলম: ৩৪), প্রতিদান ও যথেষ্ট পুরস্কার (সূরা আন নাবা: ৩৬), অফুরন্ত পুরস্কার (সূরা আল ইনশিকাক: ২৫), এমন পুরস্কার যা কোনোদিন শেষ হবে না (সূরা আত ত্বীন: ৬)।

জান্নাতের নেয়ামত অপরিসীম। এর বর্ণনাও রয়েছে কোরআনে কারিমে। সেসব বর্ণনায় বলা হয়েছে-

‘তাদের জন্য রয়েছে চির বসন্তের জান্নাত, যার পাদদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে নদী, সেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকনে সজ্জিত করা হবে, সূক্ষ্ম ও পুরু রেশম ও কিংখাবের সবুজ বস্ত্র পরিধান করবে এবং উপবেশন করবে উঁচু আসনে বালিশে হেলান দিয়ে, চমৎকার পুরস্কার এবং সর্বোত্তম আবাস!’ -সূরা আল কাহাফ: ৩১

‘অবশ্য মুত্তাকিদের জন্য সাফল্যের একটি স্থান রয়েছে। বাগ-বাগিচা, আঙুর, নবযৌবনা সমবয়সী তরুণীবৃন্দ এবং উচ্ছ্বসিত পানপাত্র। সেখানে তারা শুনবে না কোনো বাজে ও মিথ্যা কথা। প্রতিদান ও যথেষ্ট পুরস্কার তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ’ -সূরা আন নাবা: ৩১-৩৬

‘কিছু চেহারা সেদিন আলোকোজ্জ্বল হবে। নিজেদের কর্ম সাফল্যে আনন্দিত হবে। উচ্চ মর্যাদার জান্নাতে অবস্থান করবে সেখানে কোনো বাজে কথা শুনবে না। যেখানে থাকবে বহমান ঝরণাধারা। সেখানে উঁচু আসন থাকবে, পানপাত্রসমূহ থাকবে। সারি সারি বালিশ সাজানো থাকবে এবং উৎকৃষ্ট বিছানা পাতা থাকবে। ’ -সূরা আল গাশিয়া: ৮-১৬

‘আর হে নবী! যারা এ কিতাবের ওপর ঈমান আনবে এবং (এর বিধান অনুযায়ী) নিজেদের কার্যধারা সংশোধন করে নেবে তাদেরকে এ মর্মে সুখবর দাও যে, তাদের জন্য এমন সব বাগান আছে যার নিম্নদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে ঝর্ণাধারা। সেই বাগানের ফল দেখতে দুনিয়ার ফলের মতোই হবে। যখন কোনো ফল তাদের দেওয়া হবে খাবার জন্য, তারা বলে উঠবে- এ ধরনের ফলই ইতঃপূর্বে দুনিয়ায় আমাদের দেওয়া হতো। তাদের জন্য সেখানে থাকবে পাক-পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে থাকবে চিরকাল। ’ -সূরা আল বাকারা: ২৫

‘যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে। পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সঙ্গিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন। ’ -সূরা আলে ইমরান: ১৫

‘(এ কাজ তিনি এ জন্য করেছেন) যাতে ঈমানদার নারী ও পুরুষদেরকে চিরদিন অবস্থানের জন্য এমন জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেন যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে এবং তাদের মন্দ কর্মসমূহ দূর করবেন। এটা আল্লাহর কাছে বড় সফলতা। ’ -সূরা আল ফাতহ: ৫

দৌড়াঁও এবং একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা করো, তোমার রবের মাগফিরাতের দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের মতো। তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে সে লোকদের জন্য যারা আল্লাহ ও তার রাসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে? এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল। ’ -সূরা আল হাদিদ: ২১

‘(হে নবী!) আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি। কাজেই তুমি নিজের রবেরই জন্য নামাজ পড়ো ও কোরবানি করো। তোমার দুশমনই শিকড় কাটা। ’ -সূরা আল কাউসার: ১-৩ 

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।