ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কেঁদে বুক ভাসানো আখেরি মোনাজাতের অনুবাদ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫
কেঁদে বুক ভাসানো আখেরি মোনাজাতের অনুবাদ

চলতি বছরের বিশ্ব ইজেতমার প্রথম পর্ব আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। মোনাজাতে বিশ্ব শান্তি ও মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।



রোববার সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে মোনাজাত শুরু এবং ১১টা ৪৮ মিনিটে শেষ হয়। প্রথমবারের মতো মাওলানা সাদ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করলেন।

তার সঙ্গে লাখো মুসল্লি দুই হাত তুলে ‘আমিন’, ‘আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলেন পুরো টঙ্গি। ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো মাইকে সেই ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে তুরাগ নদের চারপাশের এলাকায়। মোনাজাতের সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। টঙ্গির আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে লাখো কন্ঠের কান্নার ধ্বনি। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ, এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিয়ে আল্লাহর দরবারে মনের আকুতি জানিয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন।

৩১ মিনিটব্যাপী মোনাজাতের শুরুতে প্রায় ১২ মিনিট আরবিতে দোয়া-দরুদ পাঠ করা হয়। যেসব কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেসব দোয়ার মাধ্যমে  নবী-রাসুল, সাহাবা ও পূর্ববর্তী বুজুর্গরা আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করতেন। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে সেসব দোয়া উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালার দরবারে মানুষের হেদায়েত কামনা করা হয়। দুনিয়ার মানুষের সুখ, শান্তি, উন্নতি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ প্রার্থনা করা হয়। এরপর বাকি সময় মোনাজাত করা হয় উর্দু ভাষায়। সেই মোনাজাতের বাংলা অনুবাদ নিচে তুলে ধরা হলো:

হে আল্লাহ! আমরা নিজেদের প্রতি অনেক অবিচার-অত্যাচার করেছি। হাজারো হুকুম অমান্য করেছি। তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও। তুমি মাফ না করলে আমাদের কোনো উপায় নেই, আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো। তুমি আমাদের উপর রহমতের চাদর বিছিয়ে দাও। তুমি আমাদের প্রত্যেকের গোনাহ মাফ করো।

ঈমানকে মজবুত করে দাও। তোমার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করে নাও।   আমাদের হেদায়েত দাও। আমাদের পিতামাতাদের হেদায়েত করো। সমস্ত বিশ্ববাসীকে হেদায়েত করো। যারা জীবিত আছে তাদের ক্ষমা  করো। যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকেও ক্ষমা করো। ইসলামের জন্য আমাদের কবুল করে নাও। ইসলামের ওপর আমাদের অবস্থানকে দৃঢ় করো, আমাদের ঈমান মজবুত করে দাও।

হে আল্লাহ! তুমি আমাদের রব, তুমি আমাদের প্রভু। আমরা তোমার রহমতপ্রত্যাশী। সব ধরনের আজাব-গজব ও শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা করো। আমাদের সকল গোনাহ মাফ করে দাও। তুমিই একমাত্র ক্ষমাশীল, তুমিই আমাদের মালিক। তুমি আমাদের সব পেরেশানি ও অশান্তি দূর করে দাও। ঋণগ্রস্তকে ঋণ পরিশোধের তওফিক দাও। অসুস্থদের সুস্থতা দান করো। সব ধরনের বালা-মুসিবত দূর করে দাও। আমাদের প্রত্যেকের বৈধ সব বাসনা ও প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করো। কর্মহীনদের হালাল পথে রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করো। আমাদের আখলাক-চরিত্র ভালো করে দাও। ব্যবহার সুন্দর করে দাও। তোমার নবীর আদর্শমতো চলার তওফিক দাও। হিংসুকের হিংসা দূর করে দাও। শত্রুর শত্রুতা দূর করে দাও। আমাদের সবাইকে তোমার রহমত দিয়ে হেফাজত করো।

হে আল্লাহ! আমাদের ওপর তোমার রহমতের বারিবর্ষণ করো। তোমার আজাব-গজব থেকে হেফাজত করো। আমাদের ওপর তোমার করুণার দৃষ্টি দাও।
আমাদের মাফ করে দাও। সকল মুসলিমকে হেদায়েত করো। হে, জীবন-জগতের মালিক! আমাদের সার্বিক অবস্থার সংশোধন এনে দাও। মুহূর্তের জন্য তোমার রহমতের ছায়া থেকে আমাদের ফেলে দিও না। তোমার দয়া ও করুণা থেকে আমাদের বিমুখ করো না। আমরা তোমার রহমতের ভিখারি, আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, আমরা অক্ষম। হে ক্ষমাকারী দয়ালু! তুমি তো দয়ার সাগর। তুমি সবার পাপ মোচনকারী। আমাদেরকে মাফ করে দাও। আমাদের অন্তরে তোমার দ্বীনের মহব্বত সৃষ্টি করে দাও। তোমার দ্বীনের ওপর চলা সহজ করে দাও।

হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিঃস্ব বান্দা। তুমিই একমাত্র মালিক। আমাদের সব প্রয়োজন পূরণ করে দাও। সব সমস্যা দূর করে দাও। আমরা তোমার শাস্তি থেকে মাফ চাই। তোমার জান্নাতের আশা রাখি। ও মাওলা! জাহান্নামের আগুনের লেলিহান শিখা থেকে আমাদের বাঁচাও। আমাদের পাপমোচন করে দাও।

আমাদের হেদায়েত করো। গোমরাহির অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার তওফিক দাও। আমাদের হৃদয়-মন সবই তোমার হাতে। তুমি যেদিকে ইচ্ছা ফিরাতে পারো। দয়া করে আমাদের অন্তরকে দ্বীনের দিকে ফিরিয়ে দাও, ভালো কাজের অনুগামী করে দাও। দ্বীনের জন্য আমাদের কবুল করে নাও। জীবনের প্রতিটি কদমে একমাত্র অভিভাবক হিসেবে ছায়া দিও। তোমার ছায়া থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না।

হে আল্লাহ! আমাদের সরল-সঠিক পথের দিশা দাও। সমগ্র বিশ্বের হেদায়েতের ফায়সালা করো। আমাদের জীবনের সকল অন্যায়-অপরাধ, গোনাহ মাফ করে দাও। সকল পাপ-পঙ্কিলতা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দাও। আমাদেরকে গোনাহের নাপাকি থেকে পবিত্র করে নাও। পৃথিবীর সব মানুষের হেদায়েতের ফয়সালা করো। আমাদের মুক্তি দাও। ঈমানের ওপর অটল রাখো আমাদের। ঈমানের উন্নতি দান করো। বিশ্বে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বর্ষণ করো। মানুষে মানুষের ভালোবাসা বাড়িয়ে দাও। সব ধরনের অনাচার-পাপাচার থেকে মুক্তি দাও। মারামারি, হানাহানি ও রক্তপাত থেকে বিশ্বের মানুষকে রক্ষা করো। বিশ্বেশান্তি প্রতিষ্ঠা করে দাও। যারা অশান্তির কাজ করে তাদের হেদায়েত দাও। তাদের প্রতি তুমি বিশেষ রহমত বর্ষণ করো। সম্মানিতদের সম্মান রক্ষা করো।

হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ওপর রাজি হয়ে যাও, আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। বেশি বেশি ভালোকাজের তওফিক দাও। এই ইজতেমাকে কবুল করো।

এখানে যারা যেভাবে শ্রম দিয়েছন, বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রত্যেককে উত্তম প্রতিদান দাও। নবীর পথে আমাদের চলার তওফিক দাও। আমাদের দ্বীনদারী নসিব করো, গোমরাহি থেকে বাঁচাও। সমগ্র মানবজাতির ওপর রহমত নাজিল করো। ইজতেমায় যারা অংশ নিলো, যারা খেদমত করলো, যারা দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে জামাতে বের হলো সবাইকে কবুল করো। পথের সব বাধা তুমি দূর করে দাও। ইজতেমাকে হেদায়েতের উসিলা বানাও।

ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সবার জীবনকে আলোকিত করো। বিশ্বকে কোরআনের আলোয় আলোকিত করো। নবীর সুন্নত জিন্দা করে দাও। ইসলামের খেদমতকারী সকল প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদ ও মারকাজসমূহকে হেফাজত করো। তাদের প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করে দাও। ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজত করো। যারা ইসলাম ও মুসলমানকে শত্রুভাবে তাদের মনে ইসলামের জন্য ভালোবাসা পয়দা করে দাও। ধর্মের নামে কোনো অধর্মের ছায়া যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে, তা থেকে রক্ষা করো। যাবতীয় সন্ত্রাস থেকে বিশ্বকে রক্ষা করো। সবল যেনো দুর্বলের ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করে দাও। আমাদের জন্য দ্বীনের দাওয়াতকে সহজ করে দাও। সবার মাঝে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করো। আমাদের মনে শুদ্ধতা দান করো, নিয়তে একনিষ্ঠতা ও কাজে অটলতা দান করো।

হে আল্লাহ! অনেক বড় জমায়েত, অনেক লোক এক সঙ্গে হাত তুলেছে। আমরা জানি না কে তোমার প্রিয় বান্দা। তুমি সেটা জানো। তুমি তার উসিলায় আমাদের দোয়াকে কবুল করো। আমাদের যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করে দাও। সর্বাবস্থায় রহমত নসিব করো। আমাদের সাহায্য করো। সব বাধা দূর করে দাও। কাজে বরকত দাও। আমাদের দিল সাফ করে দাও। তোমার ভালোবাসা নসিব করো। পরস্পরের মাঝে সুসম্পর্ক দান করো। যারা বিয়ে করতে চায় তাদের বিয়ে করার সুযোগ করে দাও। বিশ্বের সবার প্রতি কল্যাণের ফয়সালা করো। তোমার নৈকট্য ও হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শাফায়াত নসিব করো। জালেমের জুলুম থেকে হেফাজত করো। জালেমকে হেদায়েত করো। আমাদের উপর  রহমত ও বরকত নাজিল করো।

হে আল্লাহ! দয়া করে আমাদের দোয়াকে কবুল করে দাও। তুমিই একমাত্র শ্রবণকারী। আমরা তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।