ইজতেমার ময়দান থেকে : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে শিল্পাঞ্চল টঙ্গি এখন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনেকের কাছেই আরাধ্যস্থল। দ্বীন প্রচারের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এসে সমবেত হচ্ছেন তাবলিগ জামাতের এ বৃহত্তম জমায়েতে।
গতরাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত থেকে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে নানা জাতের পলিথিন আর শুকনো খাবার। সুযোগ বুঝে চড়া হাকছে দোকানীরা। এছাড়া ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মাঠের আশপাশের ফুটপাতের দোকান, অস্থায়ী বাজার, ভ্রাম্যমান বিভিন্ন দোকান ও হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছে এক প্রকার জিম্মি আগত মুসল্লিরা। স্থায়ী বাজারে তো যাওয়াই দায়। সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে যে যার মতো ফ্রি স্টাইলে ব্যবসা করছে। যেন নজরদারির কেউ নেই। বিগত বছরের তুলনায় এবার অবস্থা বেশি খারাপ। এ নিয়ে স্থানীয় অনেককে ক্ষোভও প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
ইজতেমা একটি ধর্মীয় সমাবেশ। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের কিছু আয়-রোজগারের সুযোগ হয়। সঙ্গত কারণে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা থাকে এসব ব্যবসায়ীদের মাঝে যেন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের বিষয়টি প্রকাশ পায়। কিন্তু বাস্তবে এর ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। সবার কাছেই ইজতেমার জমায়েত যেন হয়ে উঠেছে টাকা কামাইয়ের দুর্লভ সুযোগ হিসেবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইজতেমা ময়দানে ওজু করার জন্য এক মগ পানির দাম নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের আগে এই দামে পানি বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেখা গেছে একপাতা পত্রিকা ৫ টাকায় বিক্রি করতে।
হোটেলে খাবার আধা সিদ্ধ করেই বিক্রি করা হচ্ছে, আধা লিটার মিনারেল ওয়াটার ২০ টাকার কমে কেনা যাচ্ছে না। ফ্রেক্সিতে ৫০ টাকার নিচে অতিরিক্ত ২ টাকা দিতে হচ্ছে। প্রয়োজনে বিকাশ করলে খরচ দিতে হচ্ছে দিগুণ।
মৌসুমি ভিক্ষুকদের জন্য তো রাস্তায় অতিরিক্ত ভীড় লেগেই থাকে, সেই সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে বিদেশীদের কাছ থেকে হাতে-পায়ে ধরে ভিক্ষা আদায়ের নতুন কৌশল।
প্রতিদিনই আটক হচ্ছে পকেটমার, কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। টঙ্গিতে ইজতেমা উপলক্ষ্যে রিক্সাওয়ালারা ও অবরোধের সুযোগ নিয়ে ছোট ছোট যান ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা ইসলাম প্রচারের মতো মহতী কাজে মশগুল থেকে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে কাজ করে থাকেন। দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবিই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। দুই দফায় ছয় দিনের ইজতেমায় সুমহান এ তাবলিগি কাজেরই দীক্ষা গ্রহণ করেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। শুধু ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনেই নয়; তারা দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে চান সমাজ, রাষ্ট্র তথা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। তারা শুধু টঙ্গির নয় গোটা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সম্মানের পাত্র। এমতাবস্থায় তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা কতটুকু ভদ্র আচরণ তা বলা বাহুল্য। আমরা আশা করি বিষয়টি প্রত্যেক নাগরিকই যার যার জায়গা থেকে বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫