ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আত্মনিবেদনের অনুশীলনে বিশ্ব ইজতেমা

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫
আত্মনিবেদনের অনুশীলনে বিশ্ব ইজতেমা ছবি: জিএম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিশ্ব ইজতেমার মাঠ। জমায়েত হিসেবে ধরতে গেলে এই মুহূর্তে সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল স্থান।

নিজ ব্যবস্থাপনায় কয়েক লাখ মানুষ সেখানে অবস্থান করছেন। এসেছেন নিজ উদ্যোগে, কবে আসতে হবে সেই তারিখও জেনে নিয়েছেন নিজে থেকেই। কোনো প্রচার নেই, কারও তাগাদা নেই।

কেন এখানে আসা? সংক্ষিপ্ত উত্তর, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, পাপমোচন আর পরকালীন কল্যাণ হাসিল। বৈষয়িক তাবৎ চিন্তার উর্ধ্বে উঠে যারা এখানে আসেন, তারা চূড়ান্তভাবে আত্মনিবেদনের অনুশীলনে উত্তীর্ণ হয়েই আসেন। তাই তো দেখা গেছে, মাঘের শীতে হঠাৎ বৃষ্টির ভোগান্তিতে পড়েও উপস্থিত মুসল্লিরা এটাকে ‘আল্লাহর রহমত’ বলে মনে করছেন। বৃষ্টিতে ভিজে শীতে জবুথবু হয়েও বাকী সময়টুকু নিরাপদে থাকার জন্য সাধ্যমতো পলিথিন কিনে টানিয়ে নিচ্ছেন। কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই। এই যে আত্মনিবেদনের অনুশীলন, এটাই তাবলিগ শিক্ষা দেয়।

তাবলিগ শব্দের অর্থ পৌঁছে দেওয়া। ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই তাবলিগের মূল লক্ষ্য। এটাকে তাবলিগের পরিভাষায় বলা হয়- নবীওয়ালা কাজ। নবী-রাসূলগণ জগদ্বাসীর কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে গেছেন যুগে যুগে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কাজের সফল পরিণতি দিয়ে গেছেন। তাবলিগ জামাত কোনো নতুন মতাদর্শ নয়। তাবলিগ শুরু হয় সাধারণ মানুষের নৈমিত্তিক জীবনধারায় ধর্মের অনুশীলনকে সুচারুভাবে প্রতিফলিত করার লক্ষ্য নিয়ে।

আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া তাবলিগের সাথীরা ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ঘুরে বেড়ায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। তারা মানুষকে দ্বীনের নসিহত শোনায় না, বরং তারা প্রতিমুহূর্তের জীবনাচরণে দ্বীনের চর্চা করে। শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে। দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়া, এর একমাত্র লক্ষ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। অন্য কোনো লক্ষ্য এর মধ্যে সম্পৃক্ত হয় না- এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটাই তাবলিগ জামাতের মূল দর্শন। মূলতঃ তারা তপস্যা, সাধনা ও ধ্যান করে কিছু বনে নতুন চেহারায় সমাজে এসে কিছু করেন না। তারা চেষ্টা করেন সমাজের ভেতরেই থেকে কিছু অর্জন কতে। তাবলিগে তারা মানুষকে শেখাতে যান না, নিজেরা শিখতে যান।

তাবলিগি সাথীরা নিত্যনৈমিত্তিক জীবনাচরণের ক্ষেত্রে কতগুলো চমৎকার বিষয় অনুশীলন করে থাকেন। সেগুলো শুধু আত্মিক নয়- সামাজিকও। মূলতঃ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের কল্যাণে মনকে আত্মনিবেদিত করে তোলা, শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সঙ্গে মানুষের কাছে সত্যের দাওয়াত পৌঁছানো, পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে চলতে শেখা, নিজস্ব নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ইত্যাদি অনুসরণীয় শিক্ষাগুলো তাবলিগ দিয়ে থাকে। তাবলিগে যেতে হয় নিজের পয়সা নিয়ে, কোনো দান-খয়রাত গ্রহণ করার সুযোগ নেই। তাবলিগে বের হয়ে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য, খ্যাতি, পরিচয় বা যেকোনো ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজ শুধু যে নিষিদ্ধ বলে করা হয় না- তা নয়। এখানে মনমানসিকতাটাই তৈরি করা হয় সেভাবে। এই যে নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর কাছে আত্মনিবেদন ও  বিচরণ- এটা সমাজ জীবনের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক মহান শিক্ষা। এ শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে পারলে মানবসমাজের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হবে তা অনেকটা জোর গলাতেই বলা যায়।

আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের পর উপরোক্ত চেতনায় শাণিত তাবলিগের সাথীরা দলে দলে বের হয়ে যাবেন বিশ্বের নানা প্রান্তে- ইসলামের দাওয়াত নিয়ে। পথের ক্লান্তি, রাস্তার ভোগান্তি, শীতের যন্ত্রণা ও বৃষ্টি বিড়ম্বনা সহ্য করে- দ্বীনের বার্তা নিয়ে যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হবেন- তাদের সবার জন্য রইল আন্তরিক অভিনন্দন। কামনা করি, তাদের মনের শুভ্রতা ও শুদ্ধতার প্রভাব পড়ুর মানব জীবনের পরতে পরতে। তাদের কল্যাণে সবার জীবন উদ্ভাসিত হোক সত্য ও সুন্দরের আলোয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।