আজ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আখেরি মোনাজাত ইজতেমার অন্যতম অনুষঙ্গ।
তিনদিনব্যাপী ইজতেমার প্রতি ওয়াক্ত নামাজের শেষে মোনাজাত এবং আখেরি মোনাজাতে এসব পুণ্যবানেরা আল্লাহর দরবারে হাত উঠান। সেসব অচেনা-অজানা নেককার মানুষের সঙ্গে এক জামাতে নামাজ আদায় এবং তাদের সঙ্গে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনার হাত উত্তোলনের আশা মুসলমান মাত্রই আশা করে থাকেন। বিশেষ করে শেষদিনের আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার জন্যে যেভাবে মানুষ টঙ্গির দিকে ছুটে যায় তা সত্যিই এক প্রচণ্ড আবেগ ও ধর্মীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
ইজতেমার দিনগুলোতে টঙ্গি পরিণত হয় মুসলমানদের উৎসবনগরীতে। আর আখেরি মোনাজাতের দিন কান্নার নগরীতে। ইজতেমার শেষ দোয়ার দিন যে যেখানে পারেন দু’হাত তুলে অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর দরবারে ‘আমিন’ ‘আমিন’ বলে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মানুষের মনের গহীনের গভীর আশা, পুণ্যবান মানুষের ওসিলায় পরম দয়াময়-দয়ালু আল্লাহ হয়তো ঐশীপ্রেমের ঝরে পড়া অশ্রুধারায় সবাইকে ক্ষমা করে দেবেন। ন্যূনতম ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন লোকজন পর্যন্ত এতে অংশ নেওয়ার জন্যে তাগিদ অনুভব করেন। যেহেতু অনেক বড় সমাবেশ এবং সমাবেশের অধিকাংশ মানুষই মুসাফির আর হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী মুসাফিরের দোয়া খুব দ্রুত কবুল করা হয়। তাছাড়া মোনাজাতে দেশ, জাতি ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করা হয়। যেহেতু সবার কথাই মোনাজাতে বলা হয়, সেহেতু সব পেশার মানুষ আখেরি মোনাজাতে শরিক হওয়ায় ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিজের মনের আশা, অভিলাষ, অভাব, অভিযোগ ইত্যাদি পূরণের জন্য প্রকাশ্যে বা গোপনে মানুষ আল্লাহতায়ালার কাছে যে প্রার্থনা করে থাকে তাই দোয়া বা মোনাজাত নামে পরিচিত। দোয়া প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা আমার নিকট দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। ’ হাদিসে আছে, ‘দোয়া হচ্ছে ইবাদতের সার বস্তু। ’ দুনিয়ায় আগত প্রত্যেক নবী-রাসূল (আ.) ও আউলিয়ায়ে কেরাম (রহ.) আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি করতেন। দোয়া, কান্নাকাটি ও অনুনয়-বিনয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনই ছিল তাদের প্রকৃত চাওয়া-পাওয়া। দোয়ার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দোয়া মানুষকে অহঙ্কার থেকে দূরে রাখে। আর মুমিনের কোনো দোয়া কখনো বৃথা যায় না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দোয়া করে, যে দোয়াতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দোয়া সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। ’ -বোখারি
মোনাজাত যখন সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত তখন অবশ্যই এটা আদায় করতে তার যত বিধি-বিধান, শর্তাবলী, নিয়ম-কানুন, শিষ্টাচার আছে- তার সবই পালন করতে হবে। লক্ষ্য থাকবে যে, আমার এ প্রার্থনা যেন আল্লাহর কাছে কবুল হয়। ইসলামের উপরোক্ত বিধানের আলোকে লাখো মুসলমান আজ ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শরিক হবেন। জীবনের গুনাহগুলোর জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রাথর্নার পাশাপাশি জীবনে সুখ-শান্তি ও উভয় জগতের মঙ্গল কামনা করবেন। আমরাও আল্লাহর দরবারে দোয়া করি লাখো মানুষের এই অশ্রুসিক্ত এই মোনাজাত কবুল হোক। সফল হোক ইজতেমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫