নতুন বছর নতুন সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হলেও পরিতাপের বিষয়, আমাদের নতুন বছর শুরু হয়েছে তীব্র অস্থিরতা ও হিংসা-প্রতিহিংসার মধ্য দিয়ে। অবস্থার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সাধারণ জনগণ রয়েছে মারাত্মক দুর্ভোগে।
এভাবে শান্তিময় পরিবেশকে ভীতিকর করে তোলা, জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করা, যেকোনো উপায়ে নিরপরাধ কাউকে হত্যা করা বা হত্যাচেষ্টা করা, অথবা অপরাধী কোনো ব্যক্তিকেও বেআইনিভাবে হত্যা করা বা হত্যাচেষ্টা করা হারাম। অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করাকে কোরআনে কারিমে ‘সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার’ নামান্তর আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে এবং যে কারো জীবনরক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। ’ -সূরা আল মায়েদা : ৩২
আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। ’ সূরা আন নিসা : ৯৩
ইসলাম বিনাশ ও ধ্বংস বিরোধী ধর্ম। তাই ইসলাম অঙ্গহানি ও আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু। ’ -সূরা আন নিসা : ২৯
হত্যার প্ররোচক কারণ হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে ইসলাম। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না এবং একে অপরের পেছনে পড়ো না। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইকে তিনদিনের বেশি ত্যাগ করা হালাল নয়। ’ -সহিহ বোখারি
এমনকি হত্যার প্রারম্ভিক বিষয় তথা অস্ত্র দিয়েও কাউকে ভয় দেখাতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের দিকে অস্ত্র তাক না করে। কারণ সে জানে না, হয়ত শয়তান তার হাত থেকে তা বের করে দিতে পারে, ফলে সে জাহান্নামের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবে। ’ -সহিহ বোখারি
এত কিছুর পরও কেউ কাউকে হত্যা করলে তার জন্য কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তা হলো কেসাস বা পাল্টা হত্যা (অবশ্যই নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে)। কেসাস প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, এর মাঝে রয়েছে অনেকের প্রাণের নিরাপত্তা। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পারো। ’ -সূরা আল বাকারা : ১৭৯
উল্লেখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে খুব সহজেই বুঝা যায় যে, কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারা বা মারার চেষ্টা জঘন্যতম কাজ। যারা এ কাজ করবে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হবে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের কারণে, তদ্রূপ তারা কিয়ামতের দিন রাসূলের শাফায়াত পাবে না, রাসূলের কথা না মানার কারণে।
আগুনে পুড়িয়ে মারার ফলে একসাথে কয়েকটি অপরাধ সংগঠিত হয়, এর কোনো কোনোটি তো শিরকের পর্যায়ভুক্ত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো মানুষ, জীব-জন্তু বা কোনো ফসল-গাছ-পালাকে আগুনে পোড়াতে নিষেধ করেছেন। নবী (সা.) আরো বলেন, ‘আগুন দ্বারা কেবল আল্লাহই শাস্তি দেবেন, আগুনের রব (আল্লাহ) ছাড়া আর কারো আগুন দ্বারা শাস্তি দেওয়া উচিৎ নয়। ’ -বোখারি ও আবু দাউদ
রাসূলুল্লাহ (সা.) কাফের-মুশরেকদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে কাউকে আগুনে পোড়ানোর অনুমতি দেননি। কারণ জাহান্নামে আল্লাহতায়ালা অপরাধীদের জন্য আগুনের শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। জাহান্নামকে আরবিতে ‘নার’ বা আগুন বলা হয়েছে। তাই এ শাস্তি কোনো মানুষ দিতে চাইলে এতে আল্লাহর বিশেষ শাস্তি প্রয়োগের ক্ষমতায় যেন তার সমাসীন হওয়ার দাবি চলে আসে। তাই কাউকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া নিষেধ। এমতাবস্থায় আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের অহরহ আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। জীবন্ত মানুষকে পেট্রোল বোমা, গান পাউডার ইত্যাদি দিয়ে জ্বালানো হচ্ছে। ইসলামের বিধানের তোয়াক্কা না করে, মানবতাকে পায়ে দলে, পশুত্বের কোন স্তরে পৌঁছলে এমন কাজ সম্ভব তা অনুমানযোগ্য নয়। আমরা কোথায় বাস করছি? আমরা কি সভ্য জগতের বাসিন্দা, না ভিন্ন কিছু?
বাংলাদেশ সময় : ১৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫