কিছু বিষয় আমাদের খুব পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে তা সমাজে চলে আসছে।
ঠিক এমএমএস ও মেইলের মতো রাস্তা-ঘাটে কিংবা মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় একটি কাগজ হাতে অনেকেরই হাতে আসে। ওই কাগজের বক্তব্য অনেকটা এমন, কিছুদিন আগে মদিনা শরীফের এক খাদেম স্বপ্ন দেখেছেন, দুনিয়াতে ঘোর বিপদ আসছে। লোকজন দলে দলে জাহান্নামি হচ্ছে ইত্যাদি। এরপর সেখানে কিছু কল্পনাপ্রসূত আমল করার কথা বলা হয়। এরপর লেখা থাকে এই কাগজ কমপক্ষে ১০ জনকে ফটোকপি করে বিতরণ করলে উন্নতি হবে, আর অবিশ্বাস করলে নানা ধরণের বিপদ হবে। এই কাগজটিও সরল বিশ্বাসে অনেকেই ফটোকপি করে বিতরণ করে থাকেন কল্যাণ লাভের আশায়, বিপদ থেকে বাঁচার প্রত্যাশায়। বিশেষজ্ঞ ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এসবের কোনো শরয়ি ভিত্তি নেই। মানুষের জীবনে কল্যাণ কিংবা অকল্যাণ, কিছু উদ্ভট, ভুয়া, মনগড়া ও বানোয়াট এসএমএস, মেইল আর লিফলেট ফটোকপি করে বিলি করার সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ত নয়। বরং এসবে বিশ্বাস করলে ঈমানহারা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং এসব থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। এমন কাজের ফলে যেসব ক্ষতিসমূহ হয় সেগুলো হচ্ছে-
ক. ভাগ্য গণনায় বিশ্বাস করা। এটা স্পষ্ট কুফরি কাজ। এসএমএস, মেইল আর লিফলেট মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে ভাগ্যের উন্নতি হবে না দিলে খারাপ হবে এরকম নিশ্চিত জ্ঞান সেই ব্যক্তিকে কে দিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে না থাকলেও আল্লাহতায়ালা মানুষের এমন মনোভাব প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, ‘আর তার কাছে রয়েছে অদৃশ্যের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না। ’ -সূরা আনআম : ৫৯
আমাদের মনে রাখতে হবে, ভবিষ্যতের কথা একমাত্র আল্লাহতায়ালা জানেন। নবী (সা.) ও ভবিষ্যতের কথা জানতেন না- ওহি ব্যতীত। এটা কোরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, আমি আমার নিজের কোনো উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি অদৃশ্যের কথা জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোনো ক্ষতি স্পর্শ করতো না। আমিতো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্য, যারা বিশ্বাস করে। ’ -সূরা আরাফ : ১৮৮
খ. ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম। এটা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিদায় হজের ভাষণের পর কোরআন নাজিল করে আল্লাহতায়ালা এ ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। ’ -সূরা মায়েদা : ০৩
দীন পূর্ণ এবং নিয়ামত সম্পূর্ণ অর্থাৎ যাবতীয় কল্যাণ লাভের পথ, আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করার রাস্তা, ইবাদতের নিয়ম-কানুন পরিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর আর কিছু নতুন করে সংযোজন বা বিয়োগের কিছু নেই। আলোচিত এসএমএস, মেইল ও লিফলেটসমূহে নতুন নতুন পদ্ধতির ইবাদতের কথা লেখা থাকে, নতুন কিছু প্রথার অবতারণা করা হয়। অনেক সময় ওইসব কাজের ফজিলত বা উপকারিতার কথা এমনভাবে উপস্থাপনা করা হয়, যেগুলো সাধারণ বিবেক বিরুদ্ধ। বস্তুত সরল মানুষের চিন্তার জগতে কিছু এলোমেলো বিষয় ঢুকিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে মূলতঃ এসব করা হয়। কেউ যদি এসবে বিশ্বাস করে, তাহলে এর অর্থ হবে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে ঠিক মতো দাওয়াত পৌঁছাননি! (নাউযুবিল্লাহ)। এটা নবী (সা.)-এর ওপর আস্থাহীনতার শামিল। প্রত্যেক মুসলমানের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক। কারণ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করবে সে তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল। ’ -বোখারি
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি তোমাদের যা কিছু করতে বলেছি সে সব ব্যতীত আর কোনো কিছুই তোমাদের জান্নাতের নিকটবর্তী করবে না এবং যে সব বিষয়ে সতর্ক করেছি সেগুলো ব্যতীত কোনো কিছুই তোমাদের জাহান্নামের নিকটবর্তী করবে না। ’ -মুসনাদে আহমদ
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে ইসলামী স্কলারদের অভিমত হলো, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এখানে নতুন করে আর কোনো পদ্ধতি বের করার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই, প্রয়োজনও নেই। আশা করি, বিষয়টি মুসলিম ভাই-বোনেরা যথাযথভাবে অনুধাবন করবেন। নিজে সতর্ক থাকার পাশাপাশি অন্যকেও সতর্ক থাকতে সহযোগিতা করবেন।
বাংলাদেশ সময় : ১৭৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫