মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন জাতিস্বত্তার অধিকারী। এ স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার কারো নেই।
মানব সমাজে স্বাধীন জাতিসত্ত্বা হিসেবে বেঁচে থাকার ধারা অদিকাল থেকেই চলে আসছে। শান্তির ধর্ম ইসলামও এ বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলাম আগমনের পূর্বে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি চালু থাকলেও ইসলাম ধর্ম সমাজে একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও সুশৃঙ্খলতা আনয়ন করে।
ইসলাম বিচ্ছিন্নভাবে ও অনৈতিক উপায়ে আধিপত্য বিস্তারের নীতিকে সমর্থন করে না; আবার কারো স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করাকে জায়েজ মনে করে না। বরং নিজ নিজ অধিকার রক্ষায় লড়াই করার কথা বলে ইসলাম। তাই তো ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করে যাওয়ার পর বদর থেকে শুরু করে অনেক যুদ্ধে তিনি নিজে শরিক হয়েছিলেন। আর এসব যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল- একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কারণ স্বাধীন রাষ্ট্র ছাড়া স্বাধীন জাতিস্বত্বার অস্তিত্ব অর্থহীন।
আমরা জানি, পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম ইসলামের নামে হলেও পরে তারাই রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দেয়। অর্থাৎ মানুষের অধিকার হরণ করতে থাকে। শুরু করে আমাদের ওপর অমানবিক বিভিন্ন নির্যাতন। তারা মানুষের অধিকার নিয়ে টালবাহানা শুরু করে, অধিকারের প্রশ্ন তুললে রাতের আধারে ঘুমন্ত মানুষের ওপর হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে। তখন বাঁচার তাগিদেই মুক্তিকামী মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। আমার পাই একটি স্বাধীন দেশ, নিজস্ব পতাকা ও পৃথক মানচিত্র।
বস্তুত দেশপ্রেম ও জাতিপ্রেমের কোনো বিকল্প নেই। দেশের প্রচলিত আইন-কানুন মেনে চলা, দেশীয় পণ্যকে প্রধান্য দেয়া, জাতীয় সম্পদের সুরক্ষা, অপচয় রোধ, দুনীর্তি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ইত্যাদি বিষয়সমূহ হলো- দেশপ্রেমের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এসব বিষয়ের প্রতি নাগরিকদের যেমন সজাগ থাকা অপরিহার্য, তেমনি শাসকদেরও এর প্রতি যত্নশীল হওয়া অপরিহার্য। সে হিসেবে বলা যায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ, লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার, আইনের অপপ্রয়োগ, জবরদখল, সুদ-ঘুষ, ঋণখেলাফি ইত্যাদি বিষয়সমূহ অপশাসন। এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। এবারের স্বাধীনতা দিবসে এটাই হোক আমাদের শপথ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘন্টা, মার্চ ২৫, ২০১৫