পৃথিবী যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরল রেখায় অবস্থান করে। পৃথিবীপৃষ্ঠের কোনো দর্শকের কাছে চাঁদ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়।
আজ শনিবার (০৪ এপ্রিল) বাংলাদেশের আকাশে দেখা যাবে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে চাঁদ উঠার পর বাংলাদেশের সব জায়গা থেকেই এই আংশিক চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। এদিন রাত পৌনে ৮টায় আংশিক গ্রহণ শুরু হবে এবং রাত ৮টা ৫৯ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণের উপচ্ছায়া পর্যায় শেষ হবে।
বাংলাদেশ থেকে এরপর আবার পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই।
ইসলাম বলে চন্দ্র-সূর্যের আলো নিষ্প্রভ হওয়া আল্লাহতায়ালার অসীম কুদরতের খেলা, যা তিনি মানুষকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে করে থাকেন। যাতে তারা আল্লাহর দরবারে যাবতীয় পাপরাশি থেকে তওবা করে ফিরে আসে। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘চন্দ্র-সূর্য আল্লাহতায়ালার দু’টি বিরাট নিদর্শন। কারও জন্ম বা মৃত্যুতে তার আলো নিষ্প্রভ হয় না। বরং আল্লাহতায়ালা এর মাধ্যমে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন ও সতর্ক করেন। সুতরাং চন্দ্র-সূর্য আলোহীন হয়ে পড়লে তোমরা নামাজে দাঁড়িয়ে যাও এবং দয়াময় আল্লাহকে কায়মনোবাক্যে ডাক, যতক্ষণ না সে অবস্থার পরিবর্তন হয়। ’ -সহিহ বোখারি
কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে চন্দ্র-সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে এবং দু’টিকে একত্রিত করা হবে। তাই চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কোনো আনন্দদায়ক বিষয় নয়, বরং এর মাধ্যমে মানব সম্প্রদায়কে ভয়াবহ কেয়ামতের কথা স্মরণ করানো হয়। যাতে তারা গাফিলতি ত্যাগ করে আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে একবার চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। সহিহ বোখারির বর্ণনায় এসেছে, ‘নবী যুগে সূর্য গ্রহণ হলে লোকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। নবী করিম (সা.) লোকদের মসজিদে সমবেত হতে বলেন। অতঃপর সবাইকে নিয়ে সূর্যের আলো পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ নামাজ আদায় করেন। সে নামাজের কিয়াম, রুকু, সেজদা সবই ছিল অতি দীর্ঘ। এমনকি অনেক সাহাবা আগ্রহ-উদ্দীপনা থাকা সত্ত্বেও ক্ষান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। নামাজ শেষে তিনি বলেন, চন্দ্র ও সূর্য কারও জন্ম বা মৃত্যুতে আলোহীন হয় না। তাই যখন তোমরা চন্দ্র-সূর্যের এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করবে, তখন জলদি নামাজে দাঁড়িয়ে যাবে এবং বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তেগফার পড়বে। আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে অধিক পরিমাণে কাঁদতে এবং কম হাসতে। ’ -বোখারি ও মুসলিম
চন্দ্রগ্রহণের নামাজ সুন্নত। কেননা প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা যখন চন্দ্র-সূর্যের আলো নিষ্প্রভ হতে দেখবে তখন নামাজ আদায় কর। -বোখারি ও মুসলিম
এমনিভাবে প্রত্যেক ভীতিকর অবস্থাতে যেমন- প্রবল বাতাস প্রবাহকালে, অতিবৃষ্টি, গাঢ় অন্ধকার ইত্যাদি সময়ে নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। চন্দ্র গ্রহণের নামাজ কারও কারও মতে, সূর্য গ্রহণের নামাজের অনুরূপ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, যেহেতু এ নামাজ রাত্রিকালীন তাই ঘরে একাকী আদায় করা উত্তম। -বাদায়েউস সানায়ে
অন্যান্য নফল নামাজের মতো দুই বা চার রাকাত নামাজ দীর্ঘ কেরাত, রুকু ও সেজদার মাধ্যমে আদায় করবে এবং নামাজ শেষে কায়মনোবাক্যে দোয়া ও ইস্তেগফার পড়বে। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘নবী (সা.) সূর্য গ্রহণের নামাজ শেষে বলেছেন, আল্লাহতায়ালা এসব নিদর্শন পাঠিয়ে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করেন। সুতরাং তখন তোমরা দোয়া, ইস্তেগফার এবং জিকির-আজকারে রত থাক। ’ -বোখারি ও মুসলিম
আল্লাহতায়ালা আমাদেরতে সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্ত রাখুন। আমীন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘন্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৫