ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শুধু ভদ্রতা রক্ষায় সালাম নয়, এটা ইবাদতও

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৫
শুধু ভদ্রতা রক্ষায় সালাম নয়, এটা ইবাদতও

মুসলমানদের পরস্পরে সালাম বিনিময় ইসলামের প্রতীক ও নির্দশন। পবিত্র কোরআনে কারিমে ‘সালাম’ শব্দটি বহু স্থানে এসেছে।

এ শব্দটি ইসলামে নানাভাবে জড়িয়ে রয়েছে। মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনে সালামের প্রয়োজনীয়তা অনস্বাকীর্য। ইসলামের শুরু থেকেই মুসলমানরা সালামের আদান-প্রদান করে আসছে।

পরিচিত-অপরিচিত কারও সাথে সাক্ষাৎ ঘটলে প্রথম বাক্য বিনিময় সালামের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সালামের মাধ্যমে কর্তব্য সম্পাদনের পাশাপাশি সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, পারস্পরিক খবরাখবর আদান-প্রদান, ন্যূনতম ভদ্রতা রক্ষাও হয়ে থাকে। ইসলাম প্রচারের প্রারম্ভ থেকেই নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের মধ্যে সালাম করে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করার নিয়ম-রেওয়াজ প্রতিষ্ঠা করেন।

সালাম আদান-প্রদানের সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি রয়েছে। এখানে নিয়মের বরখেলাপ করার অবকাশ নেই, নেই অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ারও সুযোগ । বর্তমানে সমাজে সালামের বিভিন্ন ধরন ও রকম পরিলক্ষিত হয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো- অসম্পূর্ণ শব্দের ব্যবহার; শব্দ বিকৃত করে সালাম আদান-প্রদান। এ ছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, সিনেমা-নাটকে দর্শক-শ্রোতাদের মনোরঞ্জনের জন্য তাচ্ছিল্যতা প্রদর্শণমূলক ভঙ্গি ও শব্দ চয়ন করে সালাম আদান-প্রদান করতে। এ সবের কোনোটিই ঠিক না।

সর্বদা মনে রাখতে হবে, ইসলামের বিধি-বিধান ও আদব-রীতি বজায় রেখে সালাম আদান-প্রদান করতে হবে। এর বিপরীত কিছু করার সুযোগ নেই। করলে তার জন্য জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। উল্লেখ্য যে, কোনো অনিয়ম ও পাপ কাজের জন্য হিসাব-নিকাশের সম্মুখীন হতে হবে সব মানুষকেই। এটাই ইসলামের বিধান।

পথে-প্রান্তরে, মসজিদ-মক্তবে, হাট-বাজারে, মজলিস-সমাবেশে সর্বস্থানে একে অন্যের সাথে সাক্ষাতে সালামের আদান-প্রদান অপরিহার্য। এমনকি কথা বলার শুরুটাও হতে হবে সালামের মাধ্যমে। ইসলাম তো কারো বাড়িতে গিয়ে প্রবেশের জন্য সালামের মাধ্যমে অনুমতি নেওয়ার কথা বলেছে।

সালাম আদান-প্রদানকারী ব্যক্তি আল্লাহর নিকট খুবই পছন্দনীয়। সালাম আদান-প্রদানে লজ্জাবোধ করা, সম্মানিত ব্যক্তি হয়ে অপেক্ষাকৃত কম সম্মানিত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া, বড় হয়ে ছোটদেরকে সালাম দেওয়ার ব্যাপারে অস্বস্তিবোধ বা ছোট হয়ে যাওয়া হচ্ছে- এমনটি ভাবা মুসলমানদের জন্য উচিৎ নয়। বরং সবাইকে সমাজে সালামের প্রচলন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। অনেকেই মনে মনে করেন আমি বড়- আমাকে সবাই সালাম দেবে। এ চিন্তা ইসলামি শিক্ষার বিপরীত। উল্টো এমন মনোভাব মানুষের মনে আত্ম-অহমিকার জন্ম দিয়ে থাকে, অন্তরে অহংকারের অনুপ্রবেশ ঘটে। যা মোটেও ঠিক নয়। অহংকারীকে আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন না।

সালাম মানব কল্যাণের জন্য অতীব জরুরী। বস্তুত সালামের উপযোগিতা নিয়ে চিন্তা করলে শেষ হবে না। সালামের ব্যাপক প্রচলন করে আমরা ইসলামি আমলসমূহের মধ্যে উত্তম আমলে নিজেকে শরিক করি। নেকির আশায় অভ্যাস পরিবর্তন করলেই আমরা প্রথমে সালামকারী হতে পারি এবং প্রচুর নেকির মালিক হতে পারি। সেই সাথে পরিবার ও সমাজে শান্তির বার্তাও বয়ে আনতে পারি। তাই আসুন, আমরা প্রথমে সালাম করার অভ্যাস করে আল্লাহতায়ালার নিকটতম ব্যক্তি হওয়ার চেষ্টা করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘন্টা, মার্চ ৩০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।