ইসলাম ধর্ম অন্যের বিপদে এগিয়ে আসাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এটাকে সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে কারিম ও হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী ঘটনা স্তম্ভিত করেছে দেশবাসীকে। সেইসাথে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে আরেকটি বিষয়। তাহলো যখন এসব ঘটনা ঘটছে, তখন আক্রান্তদের সহায়তা কিংবা সহযোগিতা করতে কেউ এগিয়ে না অাসার বিষয়টি। অনেক সময় দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা কাউকে হামলা করে আহত কিংবা হত্যা করে চলে যাওয়ার পর লোকজন এগিয়ে আসেন, কিন্তু হামলার মুহূর্তে প্রতিরোধ গড়ে তুললে হয়তো লোকটি প্রাণে বেচেঁ যেত।
এখন প্রশ্ন হলো, বিভিন্ন সময়ে এ ধরণের হামলা কিংবা দুর্ঘটনায় উপস্থিত মানুষের নির্লিপ্ততা ও নিষ্ক্রিয়তার কারণ কি? এটা কী শুধুই নিজেকে ঝামেলা থেকে রক্ষা করার জন্য, নাকি মানুষের মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়?
নির্লিপ্ততা প্রসঙ্গে অনেকে বলেন, নিজেরা পরবর্তীতে ভোগান্তিতে পড়তে চান না বলেই তারা এসব বিষয় এড়িয়ে চলেন। কথা হলো, এ ধরণের ঘটনায় কাউকে বাঁচাতে বা উপকার করতে গেলে ঝামেলা পোহাতে হবে কেন? তাই বলে বিপদের সময় কী কারো সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা যাবে না?
সমাজ বিশ্লেষকদের অভিমত হলো, এমন নিমোর্হ নিষ্ক্রিয়তা ও নির্লিপ্ততা মানবিকতা পরিপন্থী। বিশেষ করে শহর এলাকায় কেউ কোনো দুবৃর্ত্ত দ্বারা আক্রান্ত হলে ঘটনাস্থলে কেউ এগিয়ে আসেন না। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, একজন মানুষের স্বাভাবিক বিবেক ও মনুষ্যত্ববোধই পারে আরেকজন মানুষকে রক্ষা করতে। আমরা মনেপ্রাণে কামনা করি ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অন্যের বিপদে এগিয়ে আসার ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ মানুষ মানুষের জন্য। এই জীবনে এটা প্রমাণ করতে না পারলে সেটা অবশ্যই নিজের জন্য গ্লানিকর বিষয়।
এতো গেলো কেতাবি কথা, কিন্তু বাস্তবতা হলো, উদ্ধারকারীকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে যে একেবারেই পড়তে হয় না তা নয়, ভোগান্তি থাকে নানা ধরনের। উদ্ধারের পর মিডিয়া ও পুলিশ প্রশাসন ইত্যকার ঝামেলা অবধারিত। নৈতিক কারণে কারো বিপদে পাশে দাঁড়ানোর পর হয়তো এসব ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই অনেকে এগিয়ে আসে না।
মানছি, কোনো হামলার ঘটনা বা দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের এগিয়ে যাওয়াটা ঐচ্ছিক বিষয়, কিন্তু মানকিতার বিষয়টিকে তো আর এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এছাড়া আমরা মনে করি, মারাত্মক ধরণের অপরাধ ঘটতে দেখলে সেখানে সাধারণ মানুষেরও অধিকার আছে তাতে বাঁধা দেওয়ার। এই বোধটুকু সজাগ থাকলে অনেক অপরাধ কমে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সে ক্ষেত্রে নৈতিক কারণে যারা বিপদগ্রস্তের সাহায্য করতে এগিয়ে যান, তারা যেন কোনো ধরনের উটকো ঝামেলা না পোহান সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষ যদি আক্রান্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন, তাহলে আক্রান্ত লোকটি প্রাণে বেঁচে যেতে পারে, অনেক সময় দেখা যায় শুধুমাত্র দ্রুত চিকিৎসার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত বা আক্রমণের শিকার কোনো ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সাধারণ মানুষর সবসময়, আক্রান্তদের সাহায্য করতে চান। সেই সঙ্গে তারা এই নিশ্চয়তাও চান যে, সাহায্য করার পর যদি তারা যেন হয়রানির শিকার না হন। এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলেই চলমান অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘন্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৫