যাদের লালন-পালনে আমরা এই পৃথিবী দেখতে পারছি, আজ তাদের প্রতি সন্তানরা চরম অবহেলা প্রদর্শন করছে যেটা আমাদের সমাজে আগে ছিলো না তা এখন হয়েছে। পিতা-মাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা তাদেরকে বোঝা হিসেবে মনে করে।
অনেক সন্তান নিজের কাছে পিতা-মাতাকে না রেখে গ্রামের বাড়ি অবহেলা-অযত্নে রাখেন। অনেকে আবার বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দেয়। যখন পিতা-মাতার সেবা করা প্রয়োজন, তখন তাদের ছেলেমেয়েরা আর মূল্যায়ন করে না। তারা বিনা চিকিৎসায় কাতরায়। অথচ এই পিতামাতাই ছেলেমেয়েকে অনেক কষ্ট করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। নিজে না খেয়ে তাদের খাইয়েছেন, সন্তানের সাধ পূরণ করতে যেয়ে নিজের সাধ-আহলাদকে বিসর্জন দিয়েছেন। বলি, এই কী তার প্রতিদান?
পারিপার্শ্বিক নানা কারণে কিংবা অনেকে বিদেশে চাকরি করার সুযোগের কারণে পিতা-মাতাকে দেখাশোনা করতে পারে না বিধায় হয়তো বিদেশের মতো বৃদ্ধ নিবাসে রেখে দেয়। অনেক পরিবারে শুধুমাত্র ‘শান্তি’ বজায় রাখতে স্ত্রী-ছেলে-মেয়েদের চাপে গৃহকর্তা বাবা-মাকে নিজের কাছে রাখার সুযোগ পান না। পিতা-মাতার সম্পদ-সম্পত্তি অনেক ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে লিখে নিয়ে বাবা-মাকে মর্যাদা দিতে ভুলে যায়। এটা মারাত্মক পাপের কাজ। ইসলামে এ কাজের জন্য কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
আজকে যারা এভাবে পিতা-মাতাকে অবহেলা করছে, তারাও কিন্তু একদিন বৃদ্ধ হবে, তাদের সঙ্গেও যে এই ব্যবহার করা হবে না- তার কী নিশ্চয়তা আছে? সুতরাং যারা আজ স্ত্রী-সন্তানের জন্য এমন ভয়াবহ পাপে লিপ্ত, দোয়া করি- আল্লাহ যেন তাদের সুমতি দেন। পিতা-মাতাকে কেউ যেন অবহেলা না করে। পিতা-মাতার সম্মানের বিষয়টি ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, নাতি-নাতনী সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। তাদের মনপ্রাণ দিয়ে বুঝতে হবে, পিতা-মাতার চেয়ে বড় আর কেউ নেই। তারা অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের বড় করেছেন। তাই তাদের মনে কষ্ট দেওয়া উচিত হবে না কিছুতেই। মনে রাখবেন, ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।
তাই আসুন, আমার আন্তরিকভাবে পিতা-মাতার সেবা যত্ন করার চেষ্ট করি। সেই সঙ্গে সমাজের সব বৃদ্ধ ও বয়স্ক লোকদের কেউ যেন অবহেলা বা অশ্রদ্ধা না করে, সেটা নিশ্চিত করতে সামাজিক অান্দোলন গড়ে তুলি। নিজে সচেতন হয়ে অন্যকে সচেতন করে তুলি। বিষয়টি হৃদয়ের গভীর থেকে উপলব্ধি করার জন্য সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘন্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৫