ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রাশিয়ার বন্ধ মসজিদগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৫
রাশিয়ার বন্ধ মসজিদগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে

দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা রাশিয়ার মসজিদগুলো ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হচ্ছে। আর এসব সম্ভব হচ্ছে সেখানকার ইসলামপন্থী নেতাদের তৎপরতার কারণে।

বিশেষ করে রাশিয়ার মুফতি কাউন্সিলের সভাপতি রাভিল জায়নুদ্দিনের নেতৃত্বে উদারপন্থী কিছু ইসলামী নেতার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মুফতি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর নেতৃবৃন্দ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে শুরু করে। তারা সরকারকে এটা বুঝাতে সক্ষম হয় যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর মুসলমানরা রাশিয়ার জন্য হুমকির কারণ নয়। এর ফলে সরকার ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা শুরু করে। এভাবেই রাশিয়ার ইসলাম প্রচারের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

সর্বশেষ রাশিয়ায় খুলে দেওয়া হয়েছে ৯০ বছর ধরে বন্ধ থাকা একটি মসজিদ। রাশিয়ার তোমস্ক নামক অঞ্চলে দীর্ঘ ৯০ বছর ধরে বন্ধ থাকা ‘লাল মসজিদ’টি খুলে দেওয়া হয়। ১৯২০ সালে তখনকার সরকার ধর্মবিদ্বেষের কারণে মসজিদটি বন্ধ করে দিয়েছিল।

সৌদিভিত্তিক বার্তা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক নিউজ এজেন্সি’ জানায়, ০৩ এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে মসজিদে পুনরায় নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম শুরু হলো। দীর্ঘ ৯০ বছর পর সেখানকার ইসলামিক স্কলারদের তৎপরতায় মসজিদটি খুলে দেয় বর্তমান সরকার।

মসজিদটি খুলে দেওয়ার সময় সরকারের উদ্যোগে আড়ম্বরপূর্ণ একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে তোমস্ক এলাকার গভর্নর, ওই অঞ্চলের মেয়র, চেচেন প্রজাতন্ত্রের পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট, চেচনিয়ার মুফতি এবং সহস্রাধিক মুসলমান উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা হয় এবং কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে লাল মসজিদে পুনরায় ইবাদত-বন্দেগির কাজ শুরু হয়।

মসজিদটি পুনরায় উদ্বোধনের আগে অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলেম ও কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তারা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এরপর উপস্থিত সবাই একসঙ্গে জামাতে জুমার নামাজ আদায় করেন।

রাশিয়ার লাল মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, মসজিদটি সর্বপ্রথম ১৯০১ সালে উদ্বোধন করা হয়। তবে ১৯২০ সালে তৎকালীন সরকার মসজিদটি বন্ধ করে দেয়। মসজিদটি বন্ধ করে দেওয়ার পর এ জায়গা প্রথমে সিনেমা হল ও পরে রেস্টুরেন্ট হিসেবে ব্যবহার হতো।

এর আগে রাশিয়ার মুসলমানরা ফিরে পায় ১৫ শতকের একটি পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদ। মস্কোর পূর্বদিকে কাসিমভ শহরে অবস্থিত খান মসজিদটি অবশ্য মুসলমানরা পেয়েছে আদালতে আইনি লড়াই করে।

এই মসজিদটি ১৫ শতকে নির্মিত। রাশিয়ার মধ্যাঞ্চলে এটাই সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। আদালতের নির্দেশে গত বছরের নভেম্বর মাসে মসজিদের জায়গা ও স্থাপনা মুসলমানদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এই মসজিদের জন্য আইনি লড়াই চালায় রাশিয়ার মুসলমানদের আধ্যাত্মিক বিভাগ ‘মুসলিম স্পিরিচুয়াল ডাইরেক্টরেট’ (এমএসডি) নামক একটি সংস্থা।

এমএসডি জানায় ১৯৩০ সালে রাশিয়ার কম্যুনিস্ট শাসকরা এই মসজিদে মুসলমানদের নামাজ আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং এটিকে সরকারি জাদুঘরে পরিণত করে। কাসিমভের আঞ্চলিক জাদুঘর হিসেবে এতদিন এটা গণ্য হয়ে আসছিলো।

১৫ শতকে নির্মিত আরেকটি বিখ্যাত মসজিদের নাম জুমা মসজিদ। তাতাররা ১৫ শতকে এই মসজিদটি নির্মাণ করে। এটাকে রাশিয়ার দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ বলে গণ্য করা হয়। ২০০৫ সালে ওই মসজিদে মুসলমানদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। রাশিয়ার উত্তর ককেশাসের দাগেস্তান প্রজাতন্ত্রের ডারবেন্ট শহরে এই মসজিদের অবস্থান।

রাশিয়ার জার শাসক পিটারের নির্দেশে একের পর এক মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার প্রথা শুরু হয়, যা চলে কম্যুনিস্ট শাসনামল পর্যন্ত।

ইসলাম হচ্ছে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। রাশিয়ার খ্রিস্টান ধর্মের পরেই ইসলামের অবস্থান। রুশ ফেডারেশনে আনুমানিক ২ কোটি ৩০ লাখ মুসলমান বসবাস করে। রাশিয়ার উত্তর ককেশাস প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল। রাশিয়ার মোট ১৪ কোটি ৫০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে মুসলমানরা ১৫ শতাংশ বলে মনে করা হয়। রাশিয়া টুডে জানায়, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ২০৫০ সালের মধ্যে রুশ জনগণের অর্ধেকই হবে মুসলমান। তখন দেশটি পরিণত হবে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার একটি দেশে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘন্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।