ওপরে যে মসজিদের ছবিটি দেখছেন, এর নাম ‘জামিয়া মসজিদ’। মসজিদটি হংকংয়ের প্রাচীনতম মসজিদের একটি, এটা নির্মিত হয় ১৮৪০ সালে।
হংকংয়ে মাত্র ৫টি মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি হংকং শহরে অবস্থিত। বাকি মাত্র একটি মসজিদ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সিম শু সুই এলাকা। মসজিদগুলো হলো— কুনলুন মসজিদ, আম্মার মসজিদ, চাই ওয়ান মসজিদ, স্ট্যানলি মসজিদ ও ইব্রাহিম মসজিদ।
বসতি স্থাপন করার পর থেকে হংকংয়ে মুসলমানের সংখ্যা ৫ গুণ বৃদ্ধি পেলেও মসজিদের সংখ্যা বাড়েনি। ফলে নামাজের সময় এ মসজিদগুলোতে প্রচন্ড ভিড় হয়। ফলে হংকংয়ের নিউ টেরিটোরিতে নতুন মসজিদ স্থাপন করা জরুরি। এটি হচ্ছে হংকংয়ের তিনটি অঞ্চলের মধ্যে একটি। ওই অঞ্চলের তুয়েন মুন ও ইউয়েন লংয়ে বসবাসকারী মুসলমানদের নামাজ আদায়ের জন্য কোনো স্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন।
হংকংয়ে আনুমানিক ২ থেকে আড়াই লাখ মুসলমান বসবাস করে। হংকংয়ে মুসলমানরা পৌনে দুইশ’ বছর ধরে বসবাস করছেন। হংকংয়ে প্রথম মুসলিম বসতি স্থাপনকারীদের অধিকাংশই ছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত সৈন্য। যারা ব্রিটিশ বাহিনীতে কাজ করত। তারা মূলত দক্ষিণ এশিয়া ও মেনল্যান্ড চীন থেকে হংকংয়ে এসেছে। তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে মসজিদ ও কবরস্থান নির্মানের সুবিধা দেয় ব্রিটিশ সরকার।
গণচীনের দুইটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের একটি হংকং, অপরটি মাকাও। হংকং ২৬০ টিরও বেশি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এই অঞ্চলটি পার্ল রিভার ডেল্টার পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর উত্তরে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশ এবং পূর্ব পশ্চিম আর দক্ষিণে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত।
বাণিজ্যিক কারণে হংকং অনেকের কাছে স্বপ্নের দেশ হলেও সেখানে ভালো নেই মুসলমানরা। যদিও তারা হংকংয়ের অর্থনীতি বিশেষ করে ইসলামি সূচক বৃদ্ধিতে বেশ ভূমিকা রাখছে।
কারণ হংকংয়ের মুসলমানদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে অযাচিত ইসলাম বিদ্বেষপূর্ণ নানা আচরণ। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে সম্প্রতি হংকংয়ের মুসলিম নেতারা ‘শান্তি চিঠি’ নামের একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। এ চিঠিতে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষীদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি হওয়ার দরুন এ উদ্যোগ নিতে হলো।
‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ (০৭ এপ্রিল, মঙ্গলবার) এমনই একটি খবর প্রকাশ করেছে।
ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে মিথ্যা মতামত এবং ভ্রান্তিধারণা দুর করার লক্ষ্যে এ খোলা চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
২১টি ইসলামি সংগঠনের সহযোগিতায় ইংলিশ ও চীনা ভাষায় এ চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছে। এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘মুসলমানরা সর্বদা অমুসলিমদের পাশে ছিল এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারাবাহিকতা ছাড়া অন্য কিছুর প্রত্যাশা তারা করে না। ’
এ চিঠির লেখকরা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে লিখেন, ‘আমরা জনগণের নিকট আহ্বান জানাই, তারা যেন একটি বৃহৎ ধর্মের ব্যাপারে কোনো বৈষম্যপূর্ণ আচরণ না করে। ’ চিঠিতে মুসলমানদেরকে সংখ্যালঘু মনে না করে হংকংয়ের নাগরিক ভাবতে পরামর্শ দেন ধর্মীয় নেতারা।
হংকংয়ের মুসলিম নেতারা এ শান্তি চিঠিতে ইসলামী বিশ্বাসসমূহ তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচার করার চেষ্টা করেছে।
ইসলামী ডিসকভার শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান এবং ইংরেজি ভাষার অধ্যাপক আদেল মালিক বলেন, প্রতি সমাজেই বৈষম্য রয়েছে এবং হংকংও এর ব্যতিক্রম নয়। হংকংয়ের অধিবাসী আদেল মালিক বলেন, এ শান্তি চিঠিটি সম্প্রদায়ের সকল অংশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘন্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৫
এমএ