সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি ফেডারেশন। প্রতিটি আমিরাত একটি উপকূলীয় জনবসতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এবং ওই লোকালয়ের নামেই এর নাম।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি আমিরাতের নাম হলো- আবু ধাবি, আজমান, দুবাই, আল ফুজাইরা, রাআস আল খাইমা, শারজা এবং আল ক্বাওয়াইন। আবু ধাবি শহর ফেডারেশনের রাজধানী এবং দুবাই দেশের বৃহত্তম শহর।
পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত কতগুলো অনুন্নত এলাকার সমষ্টি ছিল। কিন্তু খনিজ তেল শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর দ্রুত উন্নতি ও আধুনিকায়ন ঘটে। বর্তমানে তেল শিল্পের কারণে এখানকার অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং জীবনযাত্রার মান বিশ্বের সর্বোচ্চগুলোর একটি।
সেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঐহিত্যবাহী ও প্রাচীন নিদর্শনের অন্যতম একটি হচ্ছে ফুজাইরার আল বিদিয়া মাটির মসজিদ। ফুজাইরা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে আল বিদিয়া নামক স্থানে ৫৩ বর্গমিটার ( ৫৭০ বর্গ ফুট) আয়তন জুড়ে মসজিদটি অবস্থিত।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ফুজাইরা প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র দ্বারা ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে মসজিদটির নির্মাণকাল নিয়ে তদন্ত করা হয়। সে তদন্ত অনুসারে ধারণা করা হয় এটি ১৪৪৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে লোক মুখে শোনা যায়, ইসলাম প্রচারের জন্য আগত কিছু সাহাবা ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমানের সময় পাহাড় কেটে এই মসজিদটি তৈরি করেছিলেন। প্রাচীন এই মসজিদটি মাটি এবং ইটের সংমিশ্রনে নির্মিত। তবে অনেকেই এ মতে সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
কারো মতে এ মসজিদের বয়স ৬০০ বছর, কেউ বলেন ৫০০ বছর। আসলে মসজিদের বয়স যাই হোক পাহাড়ের টিলার ওপর অবস্থিত মসজিদটি দেখতে কিন্তু খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয়। এ মসজিদের পুরোটাই কাঁচামাটি ও পাথরের তৈরি। চারপাশের দেয়াল ছাড়াও একটিমাত্র মাটির পিলারের ওপর ভর করে আছে পুরোনো এই মসজিদ। কাঁচা মাটি দ্বারা প্লাস্টারের স্তর দেয়া আছে দেয়ালে। এ মসজিদে কোনো জানালা নেই। তবে বাতাস যাতায়াতের জন্য মূল ফটকের ওপর কিছুটা অংশ প্রায় সময় খোলা থাকে। আলো আসার জন্য ছোট ছোট কয়েকটা ফাঁকা জায়গা রাখা আছে। মসজিদের ছাদে ভিন্ন রকমের চারটি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের ভিতরে ছোট মেহরাব ও একটি মিম্বার রয়েছে। রয়েছে মসজিদের সামনে একটি পানির কূপ ও পিছনে দু’টি দূর্গ।
মসজিদের ভেতরের দেয়ালে কিছু কিছু অংশে অতি সাধারণ কারুকাজ রয়েছে। কোরআন শরীফ রাখার জন্য দেয়ালের চারপাশে আছে ঘনক আকৃতির বক্স। মসজিদের ভিতরে কিছু কোরআন শরীফ, চারটি বাতি, দু’টি এসি, মাইক, একটি দেয়াল ঘড়ি ও একটি বিদ্যুৎ চালিত পাখা আছে।
ঐতিহাসিক এ মসজিদে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত না হলেও প্রতিদিন এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। ফুজাইরাসহ পুরো আমিরাতের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এটি। প্রতিদিন আল বিদিয়া মসজিদ প্রাঙ্গনে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পর্যটকদের ভিড়ে থাকে মুখরিত থাকে।
তাই পুরোনো এসব নিদর্শন ছাড়াও ২০০৩ সালের মার্চে দুবাই মিউনিসিপালিটি নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পর্যটকদের সুবিধার্থে নির্মাণ করেছে মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা ওজুখানা, বিশ্রামের জন্য আলাদা কক্ষ, দূর্গে যাতায়াতের জন্য পাথরের সিঁড়ি, সীমানা প্রাচীরসহ মসজিদের পাশে তৈরি করা হয়েছে একটি বাগান।
ঐহিত্যবাহী আল বিদিয়া মসজিদের অবস্থান ফুজাইরা শহরের দিব্বা-খোরফাক্কান সড়ক হয়ে শারম থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার ও সানদী বিচ থেকে মাত্র সাত কিলোমিটারের দক্ষিণে আল বিদিয়া নামক স্থানে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এটি উন্মুক্ত থাকে।
ঐহিত্যবাহী এই মসজিদে গত ৮ বছর যাবৎ ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন হাফিজ আহমদ নামে একজন বাংলাদেশি নাগরিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘন্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
এমএ/