পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মুসলমানের বসবাস রয়েছে। আর সে কারণেই সেসব দেশে মসজিদ নির্মিত হয়েছে।
ইসলাম ধর্মমতে সপ্তম আসমানে বেহেশতে ফেরেশতাদের ইবাদতের কেবলা বাইতুল মামুরের অনুরূপ পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করা হয়। অনেক তফসিরবিদদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে আল্লাহতায়ালার হুকুমে ফেরেশতা কাবাঘর নির্মাণ করেন। এ বিষয়ে মুফাসসির মুজাহিদ বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বাইতুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ট থেকে দু’হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন।
মুসলিম শরিফের এক হাদিসে হজরত আবু যর গিফারী হতে বর্ণনা করা হয়েছে, রাসূল (সা.) তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এর পরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণের ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়। ’
এরপর সৌদি আরবের মদিনায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতিষ্ঠা করেন এই উম্মত তথা ইসলামের প্রথম মসজিদ। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনা শরিফে হিজরতের প্রথম দিন কুবায় অবস্থানকালে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। এমনকি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।
মসজিদে কুবা মদিনা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। মসজিদে নববী থেকে এর দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। ‘কুবা’ মূলত একটি কূপের নাম। পরবর্তী সময়ে কূপটিকে কেন্দ্র করে যে বসতি গড়ে উঠেছে, তাকেও কুবা বলা হয়। এই যুগসূত্রে মসজিদটির নামকরণ হয় ‘মসজিদে কুবা’।
এরপর ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কেরালায় নির্মাণ করা হয় চেরামান জামে মসজিদ (Cheraman Juma Masjid) । এটাই ভারতে নির্মিত প্রথম মসজিদ। ইয়েমেনি বণিকরা ইয়েমেনের গভর্নর বাজান বিন সাসানের নির্দেশে এটি নির্মাণ করেন। পরে একাদশ শতাব্দীতে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এ মসজিদ নির্মাণে রাজা পেরুমলের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।
৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে দামেস্ক শহরে নির্মাণ করা হয় সিরিয়ার প্রথম মসজিদ উমাইয়াদ। যদিও মসজিদটি পুনর্নির্মাণের সময় এটির নির্মাণ সাল দেয়া হয় ৭১৫।
দ্য গ্রেট মস্ক অব কুফা নির্মিত হয় ইরাকের কুফা শহরে। ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে কুফা যখন মিলিটারি শহর হিসেবে নির্ধারণ করা হয় সে বছরই এটি নির্মাণ করেন ইরাক বিজয়ী রাশিদুল।
৬৪২ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানরা যখন মিসর জয় করে তখনই সে দেশে সাহাবি আমর ইবনে আল আস কায়রো শহরে নির্মাণ করেন। তার নামেই মসজিদটির নাম দেয়া হয়।
৬৭০ খ্রিস্টাব্দে তিউনিশিয়ার প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় কায়রৌযান শহরে। এর নাম দেয়া হয় মস্ক অব আকবা।
চীনের জিয়ান শহরে ৭৪২ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয় সে দেশের প্রথম মসজিদ ‘গ্রেট মস্ক অব জিয়ান’। অষ্টাদশ শতকে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মসজিদ নির্মাণ করা হয় উনিশ শতকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মসজিদের নাম রস। নর্থ ডাকোটায় এটি নির্মিত হয় ১৯২৯ সালে। যদিও যুক্তরাজ্যের প্রথম মসজিদটি নির্মিত হয় ১৮৯১ সালে। লিভারপুল মুসলিম ইন্সটিটিউটে এটি নির্মিত হয়। তবে আরেকটি সূত্র দাবি করেছে ১৮৬০ সালে গ্লিনরনডায় নির্মাণ করা হয়েছিল যুক্তরাজ্যের প্রথম মসজিদ।
ব্রাজিলে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় সাওপাওলোতে ১৯২৯ সালে। অস্ট্রেলিয়ায় ১৮৮২ সালে ম্যারিতে, তাইওয়ানের তাইপেতে ১৯৪৭ সালে, পাপুয়া নিউগিনিতে ২০০০ সালে, চিলিতে ১৯৯৫ সালে, কানাডায় ১৯৩৮ সালে, আয়ারল্যান্ডে ১৯৭৬ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৭৯৮ সালে, পানামায় ১৯৩০ সালে, আর্জেন্টিনায় ১৯৯২ সালে, জার্মানিতে ১৯২২ সালে, নিউজিল্যান্ডে ১৯৭৯ সালে, ফিজিতে ১৯২২ সালে, ফিলিপাইনে ১৩৮০ সালে, ডেনমার্কে ১৯৬৭ সালে, সুইডেনে ২০০০ সালে, নরওয়েতে ১৯৭৪ সালে এবং সুইজারল্যান্ডে ১৯৬১ সালে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়।
৭৮৪ সালে কর্ডোভা শহরে স্পেনের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। স্পেনের প্রথম মুসলমান শাসক আবদুর রহমান এটি নির্মাণ করেন।
বাংলাদেশের প্রথম মসজিদ কোনটি- এ বিষয়ে উইকিপিডিয়া কোনো তথ্য দেয়নি। কারণ একাধিক মতপার্থক্য থাকায় তারা তালিকায় বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেননি। তবে অনেকেই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামের একটি মসজিদকে বাংলাদেশের প্রথম মসজিদ বলে মনে করছেন। কারণ এখানেই আবিষ্কৃত হয়েছে ৬৯ (৬৯২ খ্রিস্টাব্দে) হিজরিতে নির্মিত একটি মসজিদ। বিষয়টি বিস্ময় জাগানিয়া হলেও একেবারে অস্বাভাবিক নয়। শৌখিন ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিলও তেমনটাই মনে করেন।
ইসলাম ডেস্ক মেইল: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘন্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৫
এমএ