৩ মে বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা দিবস। ১৯৯৩ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আর সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। গণমাধ্যম স্বাধীন হলে তার সুফল সবাই ভোগ করে। সে হিসেবে সাংবাদিকতা আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে। কথায় বলে, ‘যত বড় মাথা তত বড় ব্যাথা। ’ যে পেশার গুরুত্ব যত বেশি, এই প্রবাদ বাক্যের আলোকে সেই পেশার দায়বদ্ধতাও তত বেশি। বাংলাদেশের আপামর জনগণ এ দৃষ্টিকোণ থেকেই সাংবাদিকদের ভিন্ন চোখে মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে থাকে। বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির তথা বিশ্ব মানব সম্প্রদায়ের কল্যাণে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম- এ ব্যাপারে ন্যূনতম সন্দেহ-সংশয় নেই।
যেহেতু গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়, তাই গণমাধ্যমকর্মীদেরও দর্পণের মতো স্বচ্ছ হতে হয়। এটা তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং বিশেষ ভূষণও বটে। সাংবাদিকদের শুধু রাজনৈতিক সংবাদ সংগ্রহ করলে চলবে না। দেশের প্রান্তিক এলাকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ কেমন আছেন, কী করছেন- সেসব বিষয়ের সংবাদও প্রকাশ করতে হবে। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট না করা ও কারও ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করে এমন বিষয়গুলো মাথায় রেখে সংবাদ লিখতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের কবিরা গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেব না? (কথাটি রাসূল (সা.) তিনবার বলেছেন) সাহাবায়ে কেরামরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! বলুন, তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, কথাগুলো বলার সময় রাসূল (সা.) হেলান দিয়ে বসেছিলেন, অতঃপর সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। কথাগুলো বারবার বলতেছিলেন। আমরা (সাহাবারা) মনে মনে বলতেছিলাম, হায়! যদি তিনি চুপ হতেন। ’ -বুখারি ও মুসলিম
সততা একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় গুণ। অসৎ লোককে কেউ বিশ্বাস করে না। অনেক যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলেও অসততার কারণে একজন সাংবাদিকের অর্জিত সব সম্মান ধুলায় মিশে যেতে পারে। সাংবাদিকতার পথ হচ্ছে লোভ ও প্রলোভনের পিচ্ছিল পথ। সেই প্রলোভনকে জয় করতে না পারলে কোনো সাংবাদিকের পক্ষে দেশ ও সমাজের জন্য দায়িত্ব পালন অর্থহীন। সে হিসেবে বলা যায়, সাংবাদিকদের হাতে কলম আছে বলেই তারা সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলতে পারেন না। এমনটি সুস্থ সাংবাদিকতার বিপরীত কাজ। এটা অন্যায়ও বটে। ক্ষেত্রবিশেষ দেখা যায়, অনেক সাংবাদিক মিথ্যা ও বানোয়াট খবর প্রচার করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। লোভের বশবর্তী হয়ে অন্যায়কে সমর্থন করছে। ইসলামী শরিয়ত এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশ প্রদান করেছে। নিষেধ করা হয়েছে কুপ্রবৃত্তির অনুসারী হওয়ার। ইসলাম বলেছে মানবকল্যাণের জন্য সত্য সংবাদ পৌঁছে দিতে। তাই সংবাদ সংগ্রহের সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। যেনতেন লোক থেকে সংবাদ গ্রহণ করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে সূরা হুজরাতের ৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে লিপ্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। ’ হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট, যা শুনবে তা যাচাই ছাড়া বর্ণনা করা। ’ -আবু দাউদ
সাংবাদিক হলেই যা ইচ্ছা তা লেখা যাবে না। এমন কিছু প্রচার করা যাবে না, যাতে মন্দ ছাড়া ভালো কিছু নেই। এ ছাড়া সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করে সংবাদ পরিবেশনসহ অন্যের ক্রীড়নক হয়ে বা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সংবাদ পরিবশেন চলবে না। এমন কাজ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। ’ -সূরা বনি ইসরাঈল : ৩৬
একজন সাংবাদিককে সংবাদ লিখতে হবে শতভাগ সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে। কেননা সাংবাদিক কারও পক্ষের নন। তিনি ন্যায়-ইনসাফ ও সত্যের পক্ষপাতী। সাংবাদিক বন্দী তার বিবেকের কাছে। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ইনসাফ কর। ’ -সূরা আনআম : ১৫২
সাংবাদিক সর্বদা সত্য ও সততার প্রতি একনিষ্ঠ থাকবেন, তিনি সব ধরনের নেতিবাচকতা এড়িয়ে ইতিবাচকতাকে অগ্রাধিকার দিবেন। খারাপ শব্দ ও খারাপ দৃশ্য এড়িয়ে মার্জিত শব্দ ও নির্দোষ চিত্র তুলে ধরতে সচেষ্ট থাকবেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন এমন কথা বলে, যা অতি সুন্দর। ’ -সূরা বনি ইসরাঈল : ৫৩
যেহেতু আল্লাহতায়ালা সাংবাদিকদের মেধা দিয়েছেন, যোগ্যতা দিয়েছেন; তারা লিখতে পারেন, নতুন নতুন অনবদ্য রচনা ও গঠনমূলক লেখা সৃষ্টি করতে পারেন; তাই তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তাদেরকে প্রদান করা এই যোগ্যতা মহান আল্লাহর এক অসীম নিয়ামত, একটি আমানত। এই আমানতকে কোনোভাবেই বিনষ্ট করা যাবে না, হেলায়-ফেলায় খোয়ানো যাবে না। মানুষের কাছে নিজেকে অসৎ, অবিশ্বাসী ও অনাস্থাযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘন্টা, মে ০২, ২০১৫
এমএ