হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) ৮০৪ সালে ইরানের বোস্তাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। আগেকার দিনে নামের শেষে জন্মগ্রহণকারী অঞ্চলের নাম জুড়ে দেয়ার রীতি বেশ প্রচলিত ছিল।
বায়েজিদ বোস্তামীকে সুলতান-উল আরেফিন বলেও আখ্যায়িত করা হয়। ছোটবেলায় তার বেশিরভাগ সময় কাটত ঘর থেকে মসজিদ আর মসজিদ থেকে ঘরে যাওয়া-আসা করেই। বায়েজিদ বোস্তামীকে নিয়ে কবি কালিদাস রায়ের ‘মাতৃভক্তি’ কবিতাটি বেশ বিখ্যাত।
একদিন বায়েজিদ বোস্তামীর মা গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ পানি আনতে গিয়ে দেখলেন কলসিতে পানি নেই। অগত্যা তিনি রাত দুপুরে বহু দূরের ঝরনা থেকে পানি নিয়ে এসে দেখলেন মা আবারো ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু তিনি মায়ের ঘুম না ভাঙিয়ে সারারাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষায় রইলেন মায়ের ঘুম ভাঙার? এক সময় রাত কেটে সকাল হলো। মা জেগে দেখলেন বায়েজিদ তখনো দাঁড়িয়ে আছে গ্লাসে পানি নিয়ে। মায়ের প্রতি এই ভক্তি দেখে মা আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন। এ ঘটনার পর কান্নাভেজা চোখে মা সেদিন বায়েজিদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আর মায়ের দোয়ার বরকতে হজরত বায়েজিদ বড় হয়ে বিশ্ববিখ্যাত আউলিয়াদের একজন হয়ে গেলেন।
বায়েজিদ বোস্তামি কঠোর তপস্যার মাধ্যেমে আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য লাভের আশায় দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন। সুফিবাদের মতে এমন কঠোর সাধনাই পারে কোনো মানুষকে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্যলাভের কাছাকাছি পর্যায়ে নিয়ে যেতে। এভাবে অাল্লাহর কাছে আত্নবিলয় কম মানুষই করার সুযোগ পায়।
বায়েজিদ বোস্তামীর উল্লেখযোগ্য উপদেশ হলো—
১. একবার তার কাছে প্রশ্ন করা হলো, মানুষ আত্মশুদ্ধির চূড়ান্ত অবস্থায় কখন পৌঁছাতে পারে? তিনি জবাব দিলেন, যখন মানুষ সৃষ্টিজগত থেকে পৃথক হয়ে নির্জনে নিজের দোষত্রুটির কথা চিন্তা-ভাবনা করে তা থেকে নিজেকে শুধরে নেয়। তিনি আরও বলেন, এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্যও হাসিল হয়।
২. বায়েজিদ বোস্তামিকে লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হুজুর! নামাজের খাঁটি ও আসল পরিচয় কি? তিনি জাবাব দিলেন, যার দ্বারা দীদারে ইলাহী হতে পারে, সেটাই প্রকৃত নামাজ। তবে তা খুব কঠিন কাজ, কিন্তু মানুষের সাধ্যাতীত নয়।
৩. বায়েজদি বোস্তামী (রহ.) বলতেন, আমি দুনিয়া পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় বলতে লাগলাম, হে মাবুদ! তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। তবে তুমি যখন আমার আছ, আমার সব কিছুই আছে। আল্লাহতায়ালার মেহেরবানীর ফলে আমার মানসিক অবস্থা ও অনুভূতির পরিবর্তন ঘটল। অনুভব করলাম, যারা আল্লাহর আদেশ পালন করেছে, তারা পুরস্কার লাভ করেছে ও পুরস্কারের প্রতি আসক্ত হয়েছে, কিন্তু আমি প্রভু আল্লাহতায়ালা ছাড়া অন্য কিছুতেই আসক্ত হইনি।
৪. আমি ভেবে দেখলাম যে, আমার শাস্তি পাওয়ার মূল হেতু কোন বস্তু? দেখা গেল গাফলতি (আলস্য) ছাড়া আর কিছু নয়। পরে তিনি বললেন, মানুষের সামান্য গাফলতি দোজখের আগুনের কারণ হবে। অতএব সাবধান হও।
৫. বায়েজিদ বোস্তামী বেশি বেশি আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকতেন। তার পরও বলতেন, ওহে মাবুদ! সারা জীবন আমি আপনার নাম স্মরণ করেছি একান্ত উদাসীনভাবে। আমি এক চরম অকৃতজ্ঞ। জানিনা, আপনার সাথে আমি সাক্ষাতের যোগ্য বলে বিবেচিত হবো কি না। তিনি মানুষকে বেশি বেশি জিকিরের প্রতি তাগাদা দিতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘন্টা, মে ০৬, ২০১৫
এমএ/