অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিম বাবা-মায়েদের কাছে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলায় তাদের সন্তানদের ইসলামিক স্কুল-কলেজগুলোতে ভর্তি করানোর প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে, গত ৫ বছরে দেশটির সাধারণ কলেজগুলোর চেয়ে ৯ গুণ বেশি হারে শিক্ষার্থী বেড়েছে অপেক্ষাকৃত কঠোর ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা কলেজগুলোতে।
দ্য অস্ট্রেলিয়ান ২৫ মে (সোমবার) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। দ্য অস্ট্রেলিয়ান’র এডুকেশন করেসপন্ডেন্ট নাতাশা বিটা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার মোট ৩৯টি ইসলামিক স্কুল এবং কলেজে গত ৫ বছরে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং তার সঙ্গে সাধারণ স্কুলগুলোতে ভর্তির তুলনামূলক নানা তথ্য দেয়া হয়েছে।
নাতাশা বিটার দেয়া এসব তথ্যে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামিক কাউন্সিল নামে রক্ষণশীল একটি সংস্থার অধীনে চলা ৬টি স্কুলে গত ৫ বছরে ছাত্রছাত্রী বৃদ্ধির হার ৫৩ শতাংশ। বর্তমানে এই ৬টি স্কুলে পড়াশোনা করছে ৫ হাজার ৪৮১ জন শিক্ষার্থী। ফেডারেল এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের পরিসংখ্যান মতে, গত শিক্ষাবর্ষে ৩৯টি ইসলামিক স্কুল এবং কলেজে মোট ২৮ হাজার ২৬৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। ২০০৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৫০৩ জন। মোট বৃদ্ধি ৮২ শতাংশ।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ স্কুল-কলেজের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা গত বছর ৩৭ লাখ প্রায়। গত ৫ বছরে এসব স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী বৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশ। তবে দ্য ইসলামিক স্কুলস অ্যাসোসিয়েশন অব অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, দেশটির মুসলমান শিক্ষার্থীদের মাত্র চার ভাগের এক ভাগ ইসলামিক স্কুলগুলোতে পড়াশোনা করে।
বিগত বছরগুলোতে এত বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী ইসলামিক স্কুল-কলেজে ভর্তির কারণ হিসেবে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল্লাহ খান বলেন, ‘মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি একটা বড় কারণ। এছাড়া তুলনামূলক ভালো পড়াশোনাও কারণ হিসেবে রয়েছে। অনেক স্কুল খুবই চমৎকার রেজাল্ট করছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে কারণে অভিভাবকরা এসব প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকছেন তা হচ্ছে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূল্যবোধের শিক্ষা দেই। ’
অস্ট্রেলিয়ার ইসলামি স্কুলগুলোর এমন চিত্র প্রসঙ্গে তাসমানিয়ান শিক্ষক এবং ইসলামি শিক্ষা নিয়ে অস্ট্রলিয়ার স্কুল-কলেজগুলোতে গবেষণারত পিটার জোনস বলেন, ‘মুসলিম বাবা-মায়েরা ধর্মীয় স্কুলগুলোকে তাদের সন্তানের জন্য বেশি নিরাপদ মনে করেন। কম্যুনিটিতে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাবের কারণে তারা ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি নিরাপদ মনে করেন। যদিও এখানকার সাধারণ স্কুলে অনেকে মুসলিম মেয়েদের হিজাব টেনে নামিয়ে ফেলা হয়, আবার কেউবা তাদের দিকে থুথু ছুড়ে দেয়। এ পরিস্থিতি থেকেও ইসলামিক স্কুলে নিরপাদ থাকা যায় বলেই এখানে শিক্ষার্থীর হার বাড়ছে। ’
ড. জোনস আরো বলেন, ‘ইসলামিক স্কুলগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষকই বিদেশি এবং তাদের অনেকে অতটা যোগ্যতাসম্পন্ন নন। তবে এসব স্কুলে পড়ার কারণে টিনএজাররা জিহাদের দিকে ঝুঁকে যাবে এমন আশংকা নেই’ বলেও মন্তব্য করেছেন এই গবেষক।
তিনি বলেন, ‘যেসব কিশোর জিহাদে ঝুঁকছে তারা মূলত কোনো না কোনো কারণে রাষ্ট্রীয় বলয় থেকে বিচ্ছিন্ন। এসব স্কুলে আত্মহত্যাকে চরম অপরাধ বলে শিক্ষা দেয়া হয়। নারী-পুরুষ-শিশুদের হত্যা, অন্য মুসলমানকে হত্যা অপরাধ-এসব শিক্ষা দেয়া হয়। এভাবে মানবিকতাকে স্পর্শ করার বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়ার ফলে অভিভাবকরা এসব স্কুলে ঝুঁকছেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘন্টা, মে ২৭, ২০১৫
এমএ/