ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

‘৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস’

পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম

মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৫
পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম

ইসলামকে বলা হয় স্বভাবগত বা প্রকৃতির ধর্ম। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ মূলত সামাজিক জীব।

মানুষকে ঘিরেই পরিবেশ-প্রকৃতি ও সমাজের সৃষ্টি। আর পরিবার, পরিবেশ ও সমাজ নিয়ে ইসলামের পরিবেশগত চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।

পরিবেশে জীবের বাসোপযোগী গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পানি ও মাটি। মূলত মাটি থেকেই অনেক কিছু উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদিত শস্য পানি দ্বারা জীবিত থাকে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপন্ন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝর্নাধারা, যাতে তারা ফল খায়। ’ -সূরা ইয়াসিন : ৩৩

পরিবেশের বাহ্যিক আরেকটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হচ্ছে আলো। কোরআনে কারিমে আলো-আঁধার, দিন-রাত সম্পর্কে অনেক আয়াত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাত সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিনকে করেছি আলোকিত। এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। ’ -সূরা নমল : ৮৬

পরিবেশ সুস্থ, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে রয়েছে ইসলামের তাকিদ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংস নিজেরা ডেকে এনো না। ’ (সূরা বাকারা : ১৯৫) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুণ সমুদ্র ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। ’ -সূরা আর রুম : ৪১

পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে হলে পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। কোরআনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা সম্পর্কে অনেকবার বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও। ' -সূরা বাকারা : ২২২

আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম বিবিধ উদ্ভিদরাজি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। ’ -সূরা কাফ : ৭-৮

সমগ্র সৃষ্টি জগতের কল্যাণের জন্য আল্লাহপাক পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন। ভূমিকম্প কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যাতে মানুষকে নিয়ে এ পৃথিবী নড়াচড়া করতে না পারে। সে জন্য আল্লাহতায়ালা পাহাড়সমূহকে পেরেকের মতো গেড়ে দিয়েছেন বলে ইরশাদ করেছেন, এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয়। -সূরা আন নাহল : ১৫

আমরা জানি, গাছ মানুষ ও পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু। সবুজ গাছপালার ওপরই নির্ভর করে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর টিকে থাকা। এই গাছ ইচ্ছে হলেই কাটা যাবে না। কারণ ‘গাছের প্রাণ আছে’- এটা হাদিসের বাণী। হাদিসে রাসূল (সা.) থেকে জানা যায়, এক লোক যখন অকারণে একটি গাছের ডাল ভাঙে তখন নবী করিম (সা.) সে লোকটির চুল মৃদুভাবে টান দিয়ে বলেন, তুমি যেমন শরীরে আঘাত পেলে ব্যথা পাও, গাছের পাতা বা ডাল ছিঁড়লে গাছও তেমন ব্যথা পায়।

পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য গাছ লাগানোর শিক্ষা আমরা মহানবী (সা.)-এর হাদিস থেকে পাই। তিনি বলেছেন, যদি তুমি মনে করো আগামীকাল কিয়ামত হবে, তবু আজ একটি গাছ লাগাও।

সুন্দর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ গঠনে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য। মানুষের প্রতি নবী বলেছেন, ঈমানের ৭৩টি শাখা, তন্মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আর সর্বনিম্নটি হলো, রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু দূরীভূত করা।

তিনি আরো বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। হজরত মোয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা লানত পাওয়ার তিনটি কাজ অর্থাৎ পানির ঘাট, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়াতলে মলত্যাগ থেকে বিরত থাক।

বায়ু দূষিত হয়ে একজনের রোগ অন্যজনের কাছে স্থানান্তর হয়। আমরা অনেক সময় হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢাকি না। এতে করে নির্গত ময়লা ও জীবাণু দ্বারা অন্যের ক্ষতি হতে পারে। হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূল (সা) যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি মুখ ঢেকে নিতেন।

অগ্নিকাণ্ডের ফলে পুড়ে যায় দালান-কোঠা, ঘরবাড়ি, দোকানপাট অনেক কিছু। সেখান থেকে নির্গত ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত করে। অগ্নিকাণ্ডে এমন সব পদার্থ পুড়ে বাতাসে মিশে যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হানিকর। ধূমপানের মাধ্যমেও বায়ু তথা পরিবেশ দূষিত হয়। পাড়া তামাকের গন্ধ পরিবেশের জন্য কতখানি ক্ষতিকর তা নিয়ে বিজ্ঞানীরাও শঙ্কিত।

বস্তুত এই পৃথিবী নামক ছোট গ্রহে জীবের বেঁচে থাকার জন্য সব উপাদান দিয়ে আল্লাহতায়ালা পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের নানাবিধ অত্যাচারে পৃথিবীর পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ফলে জীবের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ হারাচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বস্তুত প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণে সুষ্ঠু নিয়ম মেনে চলা, মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়া, বন-বনানী থেকে বৃক্ষ উজাড় না করা, গগনচুম্বী অট্টালিকা তৈরির জন্য পাহাড় না কাটা, পশু-পাখি নির্বিচারে শিকার না করা কল-কারখানার বর্জ্য নিষ্কাষণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলা, যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়ার বিরুদ্ধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জনসাধারণকে পরিবশে সম্পর্কে আরো অধিক সচেতন করে তোলা। তাহলেই কেবল সম্ভব সুন্দর পরিবেশের নিশ্চয়তা।  

আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে মানুষকে টিকে থাকতে হলে, সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশের নিশ্চয়তা নিজেদেরকেই দিতে হবে। ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলামের অনন্য নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পেয়ে একটি সুস্থ পরিবেশ বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘন্টা, জুন ০৪, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।