ইরাকের মুসলমানরা উসমানীয় শাসনামল থেকেই রমজান মাসকে নিয়মিত উদযাপন করে আসছে। রমজানের পূর্ব থেকেই তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং রমজান মাসকে স্বাগত জানায় আপন ঐতিহ্যে।
ইরাকে রমজান মাসকে স্বাগত জানানো হয় তোপধ্বনির মাধ্যমে। এ সংস্কৃতি তারা গ্রহণ করেছে তুর্কিদের কাছ থেকে। তুর্কির উসমানীয় শাসনামলে বাগদাদবাসীকে তোপধ্বনির মাধ্যমে ইফতার ও সেহরির সময় সম্পর্কে অবগত করানো হতো। তোপধ্বনির মাধ্যমে সময় জানানোর এই পদ্ধতি ইরাকিদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এখনো তা ইরাকে টিকে আছে একটি জনপ্রিয় রমজান সংস্কৃতি হিসেবে।
ইরাকবাসী ইফতারের জন্য তোপধ্বনির অপেক্ষা করে এবং শিশুরা আকাশে আগুনের ফুলকি দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে বাড়ির ছাদে কিংবা খোলা মাঠে। তবে হ্যাঁ, এখন আর উসমানি আমলের তোপগুলো ব্যবহার করা হয় না। এখন কম্পিউটারাইজড দূর-নিয়ন্ত্রিত তোপ ব্যবহার করা হয়।
রমজানে ইরাকের আরেকটি ঐতিহ্য হলো, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া। এ সময় তারা পরস্পরকে ধর্মীয় গ্রন্থাদি উপহার দেয়। পরিবার প্রধান শিশু সদস্যদের কোরআন শরিফ উপহার দেয়। ইরাকিরা যথাসম্ভব চেষ্টা করে বিয়েগুলো রমজান মাসে সম্পন্ন করতে।
পবিত্র রমজান মাসে প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে ইফতার সামগ্রী পাঠানো ইরাকিদের আরেক ঐতিহ্য। এ প্রচলন এতো বেশি যে, এর ফলে অনেক সময় নিজেদের ঘরে তৈরি খাবারও নিজেরা খাওয়ার সুযোগ পায় না। ইরাকিরা খোলা ছাদে বা বাড়ির সামনে খোলা প্রাঙ্গণে বসে ইফতার করতে পছন্দ করে। এটা ইরাকের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি। যা অন্য কোথাও দেখা যায় না। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে খোলা ছাদে বা প্রাঙ্গণে ইফতার করা সম্ভব নয়।
রমজানে ইরাকিরা বিশেষ খাবারের আয়োজন করে থাকে যা অন্য কোনো মাসে পাওয়া যায় না। ইফতারে ইরাকিদের প্রধান পছন্দ বসরার খেজুর ও দুধ এবং বিশেষ ধরনের শরবত। যা তারা ইফতার সেহরি উভয় সময় পরিবেশন করে। তাছাড়া পারিবারিকভাবে সবাই মিলে ইফতার করতে পছন্দ করে।
বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের ন্যায় রমজানে ইরাকের মসজিদগুলোও জেগে ওঠে। মুসল্লিতে মুখর হয় তা। সব বয়সী মুসল্লিই উপস্থিত হয় মসজিদে। ইরাকের পুরুষরা মসজিদে দীর্ঘ সময় কোরআন তেলাওয়াত ও নফল ইবাদত করে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ইবাদত-বন্দেগি করতে উৎসাহিত করে। তাদেরকে সঙ্গে করে মসজিদে নিয়ে আসে। মসজিদের পরিচালকরা রমজানের পূর্ব থেকে মসজিদের সাজ-সজ্জা ও বিশেষ পরিচর্যায় মনোযোগী হয়। বিশেষত শীত ও গরমের চাহিদা অনুযায়ী এসি ও হিটারের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণভাবে প্রতিটি মসজিদেই উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন করা হয়। রমজানে সেখানে মসজিদে মসজিদে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ীদেরকে সামাজিকভাবে পুরস্কৃত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘন্টা, জুন ১৯, ২০১৫
এমএ