পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে ফিলিপাইনে মুসলমানরা সংখ্যালঘু হলেও প্রচুর পরিমাণ মুসলিম সে দেশে বাস করেন। বিশেষত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় বিপুল সংখ্যক মুসলিম বসবাস করে।
ফিলিপাইনে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয়েছে আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। তাদের ইসলামি জীবনযাত্রা ও আখলাক-চরিত্র দেখে ফিলিপাইনের আধিবাসীরা ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়। এমনকি সেখানে ইসলাম এক সময় বিজয়ী ধর্মে পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে ধীরে ধীরে পশ্চিমা অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং তারা স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের নেতৃত্বে ১৫৬৮ সালে মুসলমানদের পরাজিত করে। ১৫৭১ সালে তার নেতৃত্বে ওপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা ফিলিপের নামেই ফিলিপাইনের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ক্ষমতাগ্রহণ করেই অন্যায়ভাবে মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধ্বংসে লিপ্ত হন। যেমন, রাজধানীর নাম ছিলো, ‘আমানিল্লাহ। ’ সেটা পরিবর্তন করে রাখা হলো- ম্যানিলা। অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, ধর্মীয় স্থাপনা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র তিনি ধ্বংস করে দেন। ফিলিপাইনের মুসলিম অধিবাসীরা তাদের ধর্মপালনে খুব একটা স্বাধীন নয়। ১৯৬৮ সাল থেকে মিন্দানাও দ্বীপে মোরো মুসলিমরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে। অবশ্য সরকারের সঙ্গে তাদের এখন একটি শান্তিচুক্তি চলছে।
ফিলিপাইনের মুসলিমরা নিজস্ব সংস্কৃতিতেই রমজান উদযাপন করে। রমজানকে তারা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে। রমজান তাদের মাঝে রীতিমতো উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করে। রমজানের শুরুতেই তারা মসজিদগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনে আলোকসজ্জাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। রমজানে ফিলিপাইনের মসজিদগুলো পরিণত হয় সামাজিক মিলন কেন্দ্রে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিবারের পুরুষ সদস্য এবং শিশুরা মসজিদে একত্র হয় ইবাদত-বন্দেগি ও ধর্মীয় শিক্ষার জন্য। রমজান মাসে প্রতিটি মসজিদে মাসব্যাপী ধর্মীয় পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। পুরুষরা বেশিরভাগ সময় কাটায় মসজিদে ইবাদত-বন্দেগিতে এবং শিশুরাও ব্যাপকহারে রমজানে ধর্মীয় পাঠদানে অংশগ্রহণ করে।
রমজানে ফিলিপাইনের মুসলমানরা সমাজসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করে। সমাজের অসহায় দুঃস্থ্য মানুষের কল্যাণে তারা বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যেমন সামাজিকভাবে ধনীরা দরিদ্রদের জন্য ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করে। এলাকার জাকাত ও ফেতরার টাকা সংশ্লিষ্ট মহল্লার মসজিদে জমা করা হয় এবং ইমাম সাহেবের নেতৃত্বে তা দুঃস্থ্য মানুষের মাঝে প্রয়োজন অনুসারে বিতরণ করা হয়।
রমজান মাসে তাদের খাবারেও বৈচিত্র লক্ষ্য করা হয়। ইফতারের টেবিলে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো, ‘কারি কারি’ নামক ভুনা গোশত। এছাড়াও মিষ্টান্ন, শরবত ও হরেক রকম ফলও থাকে ইফতার আয়োজনে। ইফতারের পর ফিলিপিন শিশুরা ভালো পোশাকাদি পরিধান করে রাস্তায় বের হয় এবং উৎসবে মেতে উঠে। তাদের হাতে থাকে বিভিন্ন ধরনের রঙিন লণ্ঠন। দলবেঁধে তারা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যায় এবং তারাবির নামাজ আদায় করে। সেহরির সময় একদল মানুষ সবাইকে জাগিয়ে দেয়। এভাবেই আনন্দ, উল্লাস ও ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রমজান উদযাপন করে ফিলিপাইনের মুসলিমরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘন্টা, জুন ২৩, ২০১৫
এমএ/