একটু-আধটু পরপরই ধাক্কা দরজায়। বিরক্ত হন গৃহকত্রী।
প্রতিবেশীর সঙ্গে খিটখিটে মেজাজ তো অব্যাহত রয়েছে আগথেকেই। রাস্তাঘাটে দিব্যি অবহেলা করা হচ্ছে পথের মানুষগুলোকে। আবার দুয়ারে দুয়ারে হাজির হয় সিয়াম সাধনার এ মাসেই এতিম-মিসকিন; জাকাত-ফিতরার অর্থের আশায় তারা তুলে ধরে নিজেদের যাবতীয় সমস্যা। কিন্তু তাদের সঙ্গে ব্যবহারটা ঠিক মানুষের মতো নয়; যেনো পশুর সঙ্গে বলা হচ্ছে কথা। এসব ভাবিয়ে তোলে সমাজ-সামাজিকতাকে। অথচ সম্পর্কের এই ধারাগুলো তো কেবল একই সূতোয় গাঁথা। এ নিয়ে কোরআন ও হাদিসে রয়েছে কত কথা! সেসব ক’জনেরই বা খেয়াল করা হয়। যেমন-
মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার
‘তোমরা পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। ’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩)। আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হচ্ছে, তোমরা পিতামাতার সম্মান করো; তাদের সেবা করো; সর্বদা তাদের অনুগত থাকো। যে কাজে আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন, তা ছাড়া সব কাজে তাদের কথা মানো। পিতামাতার মাঝে মায়ের হক বড়। স্রষ্টার পর একজন সন্তানের কাছে মায়ের চেয়ে অধিক সম্মান ও সেবার যোগ্য আর কেউ নয়। একবার এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলো- ‘সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি কে?’ রাসূল (সা.) বললেন- ‘তোমার মা। ’ লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলো- ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন- ‘তোমার মা। ’ লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলো- ‘তারপর?’ তিনি বললেন- ‘তোমার মা। ’ লোকটি চতুর্থবার জিজ্ঞেস করলে রাসূল (সা.) বললেন- ‘তোমার পিতা। ’
আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘তোমরা মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। যদি তাদের একজন অথবা দু’জনই তোমার সামনে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উফ বলো না এবং ধমক দিও না। তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক নম্র কথা বলো এবং তাদের কথা মানো; আর বলো- হে আল্লাহ! তাদের প্রতি তেমন দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। ’ একবার এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলো- ‘সন্তানের ওপর পিতামাতার হক কতোটুকু?’ উত্তরে তিনি বললেন- ‘পিতামাতা হলো তোমার জান্নাত-জাহান্নামের মতো (অর্থাৎ যদি তুমি তাদের অনুগত হও, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত; আর যদি অবাধ্য হও, তাহলে জাহান্নাম)। ’ রাসূল (সা.) আরও বলেন- ‘যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে জীবিত পেলো; অথচ তাদের সেবা করে জান্নাত হাসিল করতে পারলো না, সে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকবে। ’
সন্তানের সঙ্গে আচরণ
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো। ’ -সূরা তাহরিম : ৬
সন্তানের ওপর পিতামাতার যেমন হক আছে, তেমনি পিতামাতার ওপরও সন্তানের হক রয়েছে। এ আয়াতে মানুষদের প্রতি আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও। অর্থাৎ দুনিয়াতে তাদেরকে এমন সব কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখো, যা দ্বারা তাদের দুনিয়া ও আখেরাত ধ্বংস হয়। পরিণতিতে পরকালে ভোগ করতে হয় দোজখের ভয়াবহ আগুন। এর সঙ্গে তাদেরকে সুন্দর শিক্ষা ও আদর্শে প্রতিপালিত করার প্রতিও যত্নবান হও। এটাই হলো তাদের প্রতি তোমাদের চরম ভালোবাসার আচরণ। কেননা অর্থ-সম্পদ কিংবা পার্থিব কোনো ভোগ-বিলাসসামগ্রীতে ভালোবাসা নেই; বরং পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্তুতিকে আল্লাহর শাস্তি থেকে এবং জাহান্নামের ইন্ধন হওয়া থেকে রক্ষা করার মাঝেই রয়েছে।
পিতামাতার প্রতি সন্তানের হকপ্রসঙ্গে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘একজন পিতা তার সন্তানকে শিষ্টাচার শিক্ষা দেবে; সন্তানের প্রতি তার এর চেয়ে বড় অনুগ্রহ অন্য কিছু হতে পারে না। ’
স্বামীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার
ইরশাদ হচ্ছে- ‘নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগত; আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তার হেফাজত করে। (সূরা নিসা : ৩৪)। পুরুষের ওপর নারীর যেমন হক আছে, তেমনি নারীর ওপরও পুরুষের হক রয়েছে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘তাকওয়ার পর সতী-সাধ্বী নারী অপেক্ষা উত্তম কোনো জিনিস নেই। স্বামী তাকে যা বলে, সে মানে। তার দিকে তাকালে স্বামীর মন ভরে যায়। স্বামী যদি তাকে শপথ দিয়ে কোনো কিছু বলে, সে তা পূর্ণ করে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে নিজের ও স্বামীর সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ করে। ’ রাসূল (সা.) আরও বলেন- ‘স্ত্রী হলো স্বামীর ঘরের তত্ত্বাবধায়ক। তাই ঘরোয়া বিষয়াদি সম্পর্কে সে জিজ্ঞাসিত হবে। ’
স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার
‘তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। ’ (সূরা নিসা : ১৯)। এ আয়াতে সদ্ব্যবহারের অর্থ হলো, তাদের প্রতি কোনো অবিচার না করা। স্ত্রী হলো স্বামীর কাছে আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। তার ধর্মীয় শিক্ষা ও যথোপযুক্ত প্রতিপালনের ব্যবস্থা করা; পাশাপাশি সে কি করে গুণবতী, আদর্শ মা ও আল্লাহর খাঁটি বান্দা হতে পারে, সে ব্যাপারে পথ নির্দেশ করা স্বামীর কর্তব্য। সর্বদা তার কল্যাণ ও উন্নতির ব্যাপারে খেয়াল রাখা। দুনিয়া ও আখেরাত ধ্বংস হয়, এমন পথে চলতে বারণ করা। বিয়ে, তালাক, সহায়-সম্পত্তি এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে যে হক আল্লাহতায়ালা তার জন্য সাব্যস্ত করেছেন, তাতে কোনো কমতি না করা। রাসূল (সা.) বলেন- ‘তোমাদের মাঝে ভালো ওই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো। ’
স্ত্রীর প্রতি যতœশীল হওয়া পুরুষের কর্তব্য। তাদের ব্যাপারে তা-ই পছন্দ করা চাই, যেমনটি গ্রহণ করা হয় নিজের জন্য। নারী সাধারণত ভীতুমনা। তাই রাসূল (সা.) সর্বদা তাদের প্রতি খেয়াল রাখতেন। রাসূল (সা.)-এর কোনো এক সফরে তার স্ত্রীরাও তার সঙ্গে ছিলেন। উট দ্রুত বেগে এগিয়ে যাচ্ছিলো। রাসূল (সা.) তার হাবশি দাস আনজাশাকে বললেন- ‘দেখো, কাঁচ (নারী) যেনো ভেঙে না যায়। ’
সাহাবায়ে কেরাম স্ত্রীদেরকে খুব ভালোবাসতেন। একবার হজরত হাসান (রা.) তার স্ত্রীকে কোনো কারণে তালাক দেন। সঙ্গে মহরও পাঠিয়ে দেন। মহর দেখে স্ত্রী কান্না করে বললেন- ‘ছুটে যাওয়া বন্ধুর বিনিময়ে এ তো অতি তুচ্ছ জিনিস। ’ হজরত হাসান (রা.) এ সংবাদ শুনে খুব কান্নাকাটি করেন।
আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার
ইরশাদ হচ্ছে- ‘আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। ’ (সূরা নিসা : ৩৬)। মানুষের ওপর যেমন পিতামাতার হক রয়েছে, তেমনি আত্মীয়-স্বজনেরও হক রয়েছে। তাই পিতামাতার পর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা উচিৎ। তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের যথোচিত সম্মান করা চাই। একবার এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে বললো- ‘আমাকে এমন কিছু বলুন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। ’ তিনি বললেন- ‘আল্লাহর ইবাদত করো। তার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। ভালোভাবে নামাজ ও জাকাত আদায় করো। ’ অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে- ‘যে নিজের উপার্জন বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু কামনা করে, তার উচিত আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। ’
রাসূল (সা.) আরও বলেন- ‘আত্মীয়-স্বজন সদ্ব্যবহার করলে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, তারা সুসম্পর্ক বজায় রাখলে তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার হক আদায় করার প্রকৃত অর্থ হলো তাদের সঙ্গেও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, যারা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে। ’ এ কারণে সাহাবায়ে কেরাম আত্মীয়-স্বজনের হকের ব্যাপারে খুব খেয়াল রাখতেন। সবসময় তাদের হক আদায় করার চেষ্টা করতেন। তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতেন।
এতিমের সঙ্গে সদ্ব্যবহার
ইরশাদ হচ্ছে- ‘এতিমের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। ’ (সূরা নিসা : ৩৬)। যে শিশুর পিতা মারা যায়, তাকে এতিম বলে। আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘তোমরা এতিমের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করো না। জীবনের সার্বিক উন্নতি ব্যাহত হয়, তাদের প্রতি এমন চাপ সৃষ্টি করো না। ’ এতিমের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না। ’ যারা এতিমের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে না, তাদের ভেবে দেখা উচিত, যদি তারা তাদের ছোট ছোট সন্তানদের রেখে মারা যেতো, আর অন্যরা সে সন্তানদের সঙ্গে এমন কঠোর ব্যবহার করতো, তাহলে তাদের কেমন লাগতো! রাসূল (সা.) বলেন- ‘সর্বোত্তম ঘর সেটি, যেখানে কোনো এতিমের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা হয়। আর সর্বনিকৃষ্ট সেটি, যেখানে দুর্ব্যবহার করা হয়। ’
রাসূল (সা.) আরও বলেন- ‘যে কোনো এতিমকে প্রতিপালন করবে, জান্নাতে আমার এবং তার অবস্থান (তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দেখিয়ে) এ দু’আঙুলের মতো ব্যবধান হবে। ’
অভাবিদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার
ইরশাদ হচ্ছে- ‘অভাবিদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। ’ (সূরা নিসা : ৩৬)। অভাবি-অসহায়দের সঙ্গেও সদ্ব্যবহার করা উচিত। তাদের প্রয়োজন সমাধা করা, তাদের প্রতি সাহায্য-সহানুভূতির দৃষ্টি দেয়া মুসলমানের কর্তব্য। নিজ ধন-সম্পদের ওপর অহঙ্কার করে কোনো অভাবি ব্যক্তিকে হেয় করা, তার প্রতি ঘৃণাভরে তাকানো সমীচীন নয়। এরও বা কি নিশ্চয়তা আছে, তার কাছে ধনীর হাত পাততে হবে না! রাসূল (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলমান ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেবেন। আর যে তার ভাইয়ের মসিবত দূর করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোনো মসিবত দূর করবেন। ’
সাহাবায়ে কেরাম সবসময় অভাবি লোকদের খোঁজ করতেন। হজরত জুবায়ের (রা.) যখন ইন্তেকাল করলেন, তখন তার লক্ষাধিক টাকা ঋণ ছিলো। তার ছেলে আবদুল্লাহ তা পরিশোধের চিন্তায় ছিলেন। একবার হজরত হাকিম ইবনে হিজাম (রা.)-এর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলো। তিনি আবদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘কিভাবে এ ঋণ পরিশোধ করবে? যদি অপারগ হও, আমাকে বলবে। আমি তোমাকে সাহায্য করবো। ’
যদি কোনো অভাবি ব্যক্তি শপথ করে কোনো কিছুর সাহায্য চায় (চাই তা দৈহিক, আর্থিক কিংবা জ্ঞানগত হোক), তাহলে তার আবেদনকে কঠোর ভাষায় প্রত্যাখান না করা চাই; বরং সাধ্যমতো তার প্রয়োজন সমাধা করা কিংবা সম্ভব না হলে নম্রভাষায়- ‘না’ বলে দেয়া উচিত। কেননা আল্লাহতায়ালা তাদের প্রতি কঠোর হতে নিষেধ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের সুপারিশ করবে, সে কাজের সওয়াবের একটি অংশ পাবে। আর যে কোনো খারাপ কাজের সুপারিশ করবে, তাকেও সে কাজের গোনাহের একটি অংশ দেয়া হবে। ’ এ কারণেই রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বলতেন- ‘তোমরা আমার কাছে সুপারিশ করো, তাহলে তোমরাও সওয়াব পাবে। ’
প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার
ইরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা নিকট ও দূরপ্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। ’ (সূরা নিসা : ৩৬)। যারা একে অপরের পাশাপাশি বসবাস করে, তাদেরকে প্রতিবেশী বলে। ইসলামি শরিয়তে প্রতিবেশীরও হক রয়েছে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহর শপথ! ওই ব্যক্তি মোমিন নয়। আল্লাহর শপথ! ওই ব্যক্তি মোমিন নয়। আল্লাহর শপথ! ওই ব্যক্তি মোমিন নয়। ’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন- ‘কোন ব্যক্তি, হে আল্লাহর রাসূল?’ রাসূল (সা.) বললেন- ‘যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়। ’ রাসূল (সা.) আরও বলেন- ওই ব্যক্তি মোমিন নয়, যে নিজে খেয়ে তৃপ্ত হয়; আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। ’
আয়াতে দু’ধরনের প্রতিবেশীর কথা বলা হয়েছে। ১. নিকট-প্রতিবেশী, ২. দূর-প্রতিবেশী। কারও কারও মতে, যারা পরস্পরে পাশাপাশি বসবাস করে এবং তাদের মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে, তাদেরকে নিকট-প্রতিবেশী; আর যারা পরস্পরে পাশাপাশি বসবাস করে, তবে তাদের মাঝে কোনো আত্মীয়তার সর্ম্পক নেই, তাদেরকে দূর-প্রতিবেশী বলা হয়।
উল্লিখিত দু’প্রকার প্রতিবেশী ছাড়াও আরও একপ্রকার প্রতিবেশী আছে। সাধারণত যাকে প্রতিবেশী বলা হয় না। কিন্তু প্রতিবেশীর মতোই সে পাশে থেকে ওঠাবসা করে। যেমন সফরসঙ্গী, নিজ পেশা বা চাকরির সহকর্মী।
মেহমান ও মুসাফিরের সঙ্গে সদ্ব্যবহার
ইরশাদ হচ্ছে- ‘আর সাথী-সঙ্গী এবং মুসাফিরের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। ’ (সূরা নিসা : ৩৬)। যে নিজ স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও ধন-সম্পদ ছেড়ে সফরে বের হয়, তাকে মুসাফির বলে। কখনও এমনও হয়, মুসাফিরের কাছে পানাহারের মতো কোনো খাবার, নিদ্রাযাপনের জন্য বিছানা, গায়ে দেয়ার চাদর, এমনকি সফরে চলার মতো সামান্য পাথেয়ও থাকে না; তখন তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা ও আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করা মুসলমানের কর্তব্য।
মুসাফির মেহমান হয়ে আসুক বা না আসুক, ধনী হোক বা গরিবÑ তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা উচিত।
রাসূল (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাস রাখে, তার মেহমানের পুরস্কার সম্মানের সঙ্গে দেয়া চাই। ’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন- ‘হে আল্লাহর রাসূল, তার পুরস্কার কি?’ রাসূল (সা.) বললেন- ‘তার পুরস্কার হলো, একদিন একরাত মেহমানদারি করা। ’ তবে কোনো মেহমানকে তিনদিন পর্যন্ত মেহমানদারি করানো মেজবানের কর্তব্য। এর অতিরিক্ত মেহমানদারি করানো সদকা হবে।
সকল মুসলমানের সঙ্গে সদ্ব্যবহার
ইরশাদ হচ্ছে- ‘মোমিন পরস্পর ভাই ভাই। ’ (সূরা হুজুরাত : ১০)। প্রত্যেক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের ধর্মীয় সম্পর্ক আছে। কট্টর কাফের আর ইসলামের ঘোর শত্রুই হোক না কেনো, যখনই কেউ আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর ওপর ইমান আনে, তখন মুসলমানের ধর্মীয় ভাই হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই। ’ (সূরা তাওবা : ১১)।
রাসূল (সা.) বলেন- ‘সকল মুসলমান এক ব্যক্তির মতো। যেমন, যদি কোনো ব্যক্তির চোখে আঘাত লাগে, তাহলে গোটা দেহ আঘাতের কষ্ট অনুভব করে। যদি মাথা ব্যথা হয়, তাহলে সমস্ত শরীরে সে ব্যথা অনভূত হয়। ঠিক তেমনই অবস্থা হওয়া উচিত সকল মুসলমানের (অর্থাৎ যদি কোনো মুসলমান কখনও কোনো দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়, তাহলে সকল মুসলমান সে কষ্ট অনুভব করবে; তার দুঃখে দুঃখিত হবে)। ’
হাদিসে আছে- ‘যে ব্যক্তি শপথ করে কোনো মুসলমানের হক নষ্ট করে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন, আর জান্নাত হারাম করে দেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘন্টা, জুন ৩০, ২০১৫
এমএ/