দুনিয়াজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায় রমজানের রোজা পালন করছেন। রোজার অপরিহার্য অনুষঙ্গ ইফতার।
ইফতারের সময় বাংলাদেশে সাধারণত ছোলা, মুড়ি, পেয়াজু, বেগুনির বেশ কদর। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মওসুমি ফল, খেজুর, শরবত তো আছেই। অনেক সময় ভারী খাবারও থাকে ইফতার আয়োজনে। থাকে খিচুঁরি-পোলাও, ভেজা চিড়া ইত্যাদি। ঢাকাবাসীর আগ্রহের ইফতার আয়োজনে পুরান ঢাকার বিশেষ কিছু খাবার জায়গা করে নিয়েছে।
সৌদিয়ান ইফতারে জমজম, কাঁচা খেজুর ও লাবাং বেশি পছন্দ করে। সেই সঙ্গে থাকে ভারী খাবার। মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই ইফতার সংস্কৃতিতে বেশ মিল দেখা যায়।
ভারতের মতো দেশে ইফতারে ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হায়দরাবাদে হালিম বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু কেরালা ও তামিলনাড়ুতে সাধারণত গোশত, সব্জি ও পরিজ দিয়ে তৈরি ‘নম্বু কাঁজি’ নামীয় এক বিশেষ খাবারের কদর বেশি।
ভারতের অনেক স্থানে পোলাও, বিরিয়ানি, মাটন কারি, ডেসার্ট ও শরবত বেশ চলে।
আফগানিস্তানের ইফতারে স্যুপ, পেয়াজে গোশত কারি, ফ্রুট সালাদ, কাবাব, পিয়াজু, বেগুনি বিখ্যাত।
পাকিস্তানে রুটি-গোশত থাকবেই। সেই সঙ্গে এক ধরনের লাচ্চি ইফতারের অপরিহার্য বিষয়।
নাইজেরিয়ানরা তাদের ইফতার আয়োজনে ‘হুম’ ও ‘কোকো’ নামীয় বিশেষ পানীয় বেশি পঝন্দ করে। এসব খাবার গম ও চিনি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া নাইজেরিয়ানদের কাছে রমজানে প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে, ‘আসিদা’, দাউয়্যাহ’, ‘উনজুঝি’ ও ‘লুবিয়া। ’ যা গম, আলু ও গোশতের সমন্বয়ে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়। তারা বিশেষ জাতের সেমাই খুব পছন্দ করে।
ব্রাজিলে ইফতারের সময় মিষ্টান্ন অনেকটা অপরিহার্য। ব্রাজিলিয়ান মুসলিমদের বড় অংশ সিরিয়া ও লেবাননের অভিবাসী হওয়ায় কৃষ্টি-কালচার ও খাবারের ক্ষেত্রে এ দুই দেশের প্রাধান্য দেখা যায়।
মিসরের ইফতার আয়োজনে থাকে- খেজুর, দুধ ও রকমারি ফল-ফলাদি। রমজানের খাদ্য তালিকায় মিসরীয়দের প্রিয় খাবার সিম। সবশ্রেণীর সবার দস্তরখানে রমজানে সিম পাওয়া যাবে। এমন কী রমজানে সিম খাওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিভিন্ন শ্লোকও শোনা যায়। তারা ইফতার শুরু করে খেজুর ও শরবত দ্বারা। এ সময় পানীয়ের তালিকায় হরেক রকম ফলের জুসও দেখা যায়। যেমন, আপেল, আম, কমলা ইত্যাদি। ইফতারের পর তারা অবশ্যই কিছু মিষ্টান্ন গ্রহণ করে। সেগুলোর মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটি হলো- ‘কানাফাহ’, ‘কাতায়েফ’ ও ‘বাকলাওয়াহ’ ইত্যাদি। সবশেষে কড়া করে চা পান করে তারা এশার নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
মালয়েশিয়ান মুসলিমরা ইফতারের সময় হলে সামান্য পানীয় দ্বারা ইফতার করে মাগরিবের জামাতে অংশ নেন। মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর মূল ইফতার গ্রহণ করে। তাদের ইফতারের আয়োজনে খেজুর, আপেল, আখরোট, গোশত, রুটিসহ আরো থাকে, ‘গুতরা মুন্ডি’ ও ‘বাদেক’ নামক বিশেষ খাবার।
আর্জেন্টিনায় ইফতার ও সেহরিতে আরব সংস্কৃতির প্রাধান্য দেখা যায়। যেমন ইফতার আয়োজনে মিষ্টান্নের প্রাধান্য, খেজুর, দুধ ও সিমের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।
তিউনিশিয়ানরা ইফতারে খেজুর, দুধ ও কিসমিস খেতে পছন্দ করে। এছাড়াও থাকে বিভিন্ন ধরনের পিঠাও। সেহরিতে থাকে গোশতের যে কোনো আয়োজন। এছাড়া তারা রমজানে ‘রাফিসা’, ‘মাদমুজা’, ‘আসিদা,’ ‘বারকুকাস’ নামক বিশেষ খাবারের আয়োজন করে।
কসোভোর মুসলিমরা ইফতারে ফলের জুস, পানীয় ও খেজুর অপরিহার্য মনে করে। সেই সঙ্গে ইফতারে কসোভোবাসীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো- ‘বুরিক’ যা গরুর গোশতের কিমা দিয়ে তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘন্টা, জুলাই ০৬, ২০১৫
এমএ