সূরা আল ইমরান মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে কারিমের ৩ নম্বর সূরা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনাতে হিজরত করার প্রায় ৮ বছর পর এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়।
হজরত ঈসা (আ.) এবং তার সম্মানিত মা হজরত মরিয়ম (আ.)-এর জন্ম, শৈশব ও কর্ম সম্পর্কে বিশদ আলোচনা এ সূরায় স্থান পেয়েছে। যা যুক্তির নিরিখে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে যে, তারা দু’জন উপাস্যের অংশ নয়। আবার তারা চরিত্রহীনও নয়। বরং উভয়ে আল্লাহতায়ালার অনুগত প্রিয় বান্দা।
ইমরান মানুষের নাম। আল শব্দের অর্থ বংশধর। আল ইমরান অর্থ ইমরানের বংশধর। ইমরান নামে ঐতিহাসিক দু’টি চরিত্র পাওয়া যায়। হজরত মূসা (আ.)-এর পিতার নাম ছিল ইমরান। আবার হজরত মরিয়ম (আ.)-এর পিতার নামও ছিল ইমরান।
এ সূরার প্রধান আলোচিত ব্যক্তি হজরত মরিয়ম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ঈসা (আ.)। সূরার বেশ অংশজোড়ে এ দু’জনের আলোচনা স্থান পেয়েছে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে সূরা আল ইমরান।
বস্তুত সূরা আল ইমরানে আলাদা আলাদা কিছু ভাষণ স্থান পেয়েছে। প্রথম ভাষণটি সূরার প্রথম থেকে শুরু হয়ে ৩২নং আয়াত পর্যন্ত। এটি সম্ভবত বদর যুদ্ধের নিকটবর্তী কোনো এক সময়ে নাজিল হয়।
দ্বিতীয় ভাষণটি ৩৩ নং আয়াত থেকে শুরু হয়ে ৬৩ নং আয়াতে গিয়ে শেষ হয়েছে। ৯ম হিজরিতে নাজরানের প্রতিনিধি দলের আগমনকালে এটি নাজিল হয়।
তৃতীয় ভাষণটি সপ্তম রুকুর শুরু থেকে নিয়ে দ্বাদশ রুকুর শেষ অবদি চলেছে। প্রথম ভাষণের সঙ্গে সঙ্গেই এটি নাজিল হয়।
চতুর্থ ভাষণটি ত্রয়োদশ রুকু থেকে শুরু করে সূরার শেষ পর্যন্ত চলেছে। উহুদ যুদ্ধের পর এটি নাজিল হয়।
এ সূরায় বিশেষ করে দু’টি দলকে সম্বোধন করা হয়েছে। একটি দল হচ্ছে, আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) এবং দ্বিতীয় দলটিতে রয়েছে এমন সব লোক যারা মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছিল।
সূরা আল ইমরানের সর্বশেষ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অভ্যন্তরীণ কু-প্রবৃত্তি ও বাইরের শত্রুর মোকাবেলায় ধৈর্যধারণ কর। ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো এবং সীমান্তের শত্রুদের মোকাবেলার জন্য সব সময় প্রন্তুত থাক। আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা তোমাদের লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পার। ’
সূরা আল ইমরানের সর্বশেষ আয়াতে পরপর চারটি নির্দেশ বা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রথম তিনটি নির্দেশে ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনের ব্যাপারে আন্তরিক হতে বলা হয়েছে। মুমিনদের উদ্দেশ্যে এই আয়াত নাজিল হওয়ায় এটা স্পষ্ট যে, ঈমানের শর্ত হলো- ধৈর্য ও প্রতিরোধ। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক সংকটে ধৈর্যধারণ করা এবং মুসলমানদের ধ্বংস করতে উদ্যত বাইরের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। তবে এর চেয়েও জরুরী হলো আমাদের চিন্তা ও বিশ্বাসের সীমান্ত রক্ষা এবং ইসলামি রাষ্ট্রের আকাশ স্থল ও পানিসীমা রক্ষা করা। অবশ্য ধৈর্য এবং প্রতিরোধ তখনই কল্যাণকর যখন তা হবে খোদাভীতির আওতায়। একমাত্র তখনই ইহকাল ও পরকালে সাফল্য অর্জন সম্ভব হতে পারে। তাই এই আয়াতের চতুর্থ নির্দেশে মুমিনদেরকে খোদাভীরু হতে বলা হয়েছে।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো-
প্রথমতঃ যদি শত্রুরা মিথ্যা ও অসত্যের পথে দৃঢ় এবং ধৈর্যশীল হয়, তবে আমরা কেন ধর্ম রক্ষার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টায় পাহাড়ের মতো অটল থাকবো না?
দ্বিতীয়তঃ ধৈর্য ও প্রতিরোধ হতে হবে খোদাভীতির ছায়াতলে। তা না হলে ধৈর্য এবং প্রতিরোধ বিদ্বেষ ও অন্যায় একগুঁয়েমিতে পরিণত হবে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৫
এমএ/