ঢাকা: পবিত্র ঈদ-উল আজহা শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর)। দেশব্যাপী ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব আমেজের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে ত্যাগ ও খুশির ঈদ।
কোরবানির ঈদ মুসলিম সমাজের ত্যাগের উৎসব। ভোগে নয়, ত্যাগেই শান্তি এমনই শিক্ষা পাওয়া যায় এই ঈদ থেকে। কোরবানি শব্দটি আরবি ‘কোরবানুন’ অথবা ‘কেরবানুন’ শব্দ থেকে আগত, যার মানে নৈকট্য বা সান্নিধ্য লাভ করা।
প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার ছেলে ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার মহিমায় ইসমাইলের (আ.) পরিবর্তে একটি ভেড়া বা দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। সেই ত্যাগের মহিমায় মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্তির আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। তবে ঈদের পরও দুইদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজ পশু কোরবানি করার ধর্মীয় বিধান রয়েছে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ইব্রাহিম (আ.) ছেলে ইসমাইলকে বললেন- প্রিয় পুত্র, স্বপ্নে দেখেছি আমি তোমাকে যেন জবেহ করছি। বলো দেখি কী করা যায়? পুত্র বললো- আব্বা, আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা দ্রুত পালন করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের কাতারে পাবেন। এরপর পিতা-পুত্র উভয়ে নিজেরদের আল্লাহর কাছে সোপর্দ করলেন এবং ইব্রাহিম পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন জবেহ করার জন্য। তখন আমরা তাকে সম্বোধন করে বললাম, ইব্রাহিম তুমি স্বপ্নকে সত্যিতে পরিণত করে দেখিয়েছো। আমরা সৎ কর্মশীলদের এরূপ প্রতিদানই দিয়ে থাকি। বস্তুত এ এক সুস্পষ্ট অগ্নিপরীক্ষা। আর অমরা বিরাট কোরবানি ফিদিয়াস্বরূপ দিয়ে পুত্র ইসমাইলকে উদ্ধার করেছি। আর আমরা ভবিষ্যতের উম্মতের মধ্যে (ইব্রাহিমের) এ সুন্নাত স্মরণীয় করে রাখলাম। শান্তি ইব্রাহিমের ওপর, এভাবে জীবন দানকারীদের আমরা এমন প্রতিদানই দিয়ে থাকি। নিশ্চিতরূপে সে আমাদের মুমিন বান্দাদের মধ্যে রয়েছে’ (সূরা আস সাফফাত: ১০২-১১১)।
অর্থাৎ স্বপ্নে দেখে বাবা ইব্রাহিম (আ.) যখন ছুরি চালাবেন, তখন তার পুত্রের পরিবর্তে আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাইয়ের জন্য দেওয়া হয় একটি জান্নাতি ভেড়া বা দুম্বা। অবশেষে আল্লাহর নির্দেশে তিনি সেটি কোরবানি করেন। ১৩ বছরের পুত্র ইসমাইল (আ.) ও তার বাবা ইব্রাহিম (আ.) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় দ্বিতীয় বৃহত্তম এ উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি এ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমান ভাই-বোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারক জানিয়েছেন।
বিশেষ আয়োজন
ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, এতিমখানা, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
এদিকে উৎসব উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং রেডিওগুলো সপ্তাহব্যাপী বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
ঈদের প্রস্তুতি
কোরবানির পশু কেনার জন্য গত কয়েকদিন ধরে গাবতলী পশুর হাটসহ রাজধানী ও আশপাশের অস্থায়ী হাটে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তিনদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানীর লাখো বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করার জন্য শহর ছেড়েছেন।
এছাড়া ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ে, বিআরটিসি, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থা, নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপনের লক্ষে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এদিকে ঈদের দিন দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টি হলেও সকালের দিকে ভারি বর্ষণের শঙ্কা তেমন একটা নেই বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
ঈদ জামাত
প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীর ঈদ-উল আজহার প্রধান জামাত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায়। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকলে সকাল সাড়ে ৮টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে প্রধান জামাত হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য (এমপি), রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ শুক্রবার সকালে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেবেন।
জাতীয় ঈদগাহে নামাজে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বায়তুল মোকাররমে এবারও পাঁচটি জামাত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। এরপর সকাল ৮টা, সকাল ৯টা, সকাল ১০টা এবং বেলা পৌনে ১১টায় হবে পরের জামাতগুলো। সকাল সাড়ে ৭টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় একটি ঈদ জামাত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল ৮টা ও সকাল ৯টায় হবে দুটি জামাত। এছাড়া সলিমুল্লাহ ও শহীদুল্লাহ হলের মাঠে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ হবে। বরাবরের মতো
এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। শোলাকিয়ায় নামাজ আদায়ের জন্য মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচল করবে। এছাড়া ফরিদপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে সকাল দশটায় ঈদের অন্যতম বড় জামাত হবে।
বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে সকাল ৮টায় হবে ঈদ-উল আজহার প্রধান জামাত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির উদ্যোগে এবার নগরীতে মোট ২৪৭টি ঈদ জামাত হবে।
রাজশাহী নগরীতে ঈদের প্রধান জামাত শাহ মখদুম (র.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায়। খুলনায় সকাল ৮টায় জেলা সার্কিট হাউজ ময়দানে ঈদের প্রধান নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। সিলেটে শাহী ঈদগাহে সকাল ৮টায়, রংপুরে সকাল সাড়ে ৮টায় কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে (বৃষ্টি হলে নামাজ হবে পাশের কোর্ট মসজিদে) এবং বরিশালে ঈদের প্রধান জামাত হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
আইএ
** ঈদের রাত ইবাদতের শ্রেষ্ঠ রাত
** ঈদুল আজহার আধ্যাত্মিক ও সামাজিক গুরুত্ব